জামায়াতের যোগদানে বিব্রত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ


প্রকাশিত: ১২:২১ পিএম, ০৬ জুলাই ২০১৫

জামায়াতে ইসলামী ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীদের দলে যোগদানের ঘটনায় বিব্রত কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে শরিক দলগুলোরও তোপের মুখে পড়েছে মহাজোটের নেতৃত্বে থাকা দলটি।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পদক ড. হাছান মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, ‘জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের যোগদানের বিষয়টি আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলছে।’ নাম প্রকাশ না করে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এক সসদ্য বলেন, জামায়াত-শিবিরের যোগদান আওয়ামী লীগের দৈন্যতাই প্রমাণ করে। তিনি বলেন, স্বাধীনতাবিরোধী সংগঠন জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করে আসলেও তাদের দলে ভেড়ানোর নীতি দলের জন্য বিষফোড়া হতে পারে।

মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারী ধর্মভিত্তিক দলটি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই নানা কৌশলের আশ্রয় নিয়ে রাজনীতি করে আসছে। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি রাজশাহী, জয়পুরহাটসহ জামায়াত অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগে যোগদান করছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ পাচ্ছে।

২০০৮ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরপরই কঠিন চাপের কবলে পড়ে জামায়াত-শিবির। জামায়াত-শিবিরের কেন্দ্রীয় নেতাদের অনেকেই দীর্ঘদিন ধরে জেলে আটক রয়েছেন। যুদ্ধাপরাধের দায়ে আটককৃত জামায়াত নেতাদের বেশির ভাগেরই সাজা হয়েছে। ইতিমধ্যে সাজা কার্যকরও হয়েছে জামায়াতের চার নেতার।

দলটি প্রকাশ্যে কোনো কর্মসূচিও পালন করতে পারছে না। শত শত মামলায় হাজার হাজার আসামি থাকায় মাঠের নেতাদের অধিকাংশই আত্মগোপনে। সরকার এবং আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর অবস্থানের কারণে দলটি ক্রমশই কোণঠাসা হয়ে পড়েছে।

ধারণা করা হচ্ছে অস্তিত্ব রক্ষা এবং মামলা থেকে রেহাই পেতেই কৌশল হিসেবে সরকার দলীয় সংগঠন আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা। বিশেষ করে জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে প্রতিনিয়ত যোগদানের ঘটনা ঘটছে।  

তবে এই যোগদানের ঘটনায় আওয়ামী লীগের নিজ দলের মধ্যেই মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। দলের কেউ কেউ মনে করছেন, যে সব এলাকায় আওয়ামী লীগের সাংসদ বা নেতারা নেতিবাচক কর্মকাণ্ড করে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে সেখানেই জামায়াত বিশেষ সুবিধা নিয়ে আওয়ামী লীগে ভিড়ছে।

জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা বিশেষ চাপেও রয়েছে বলে তারা মনে করছেন। আবার কেউ কেউ মনে করছেন, জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীরা তাদের আদর্শ পরিবর্তন করে যদি দেশ, স্বাধীনতার প্রশ্নে আওয়ামী লীগের সঙ্গে পথ চলতে চায়, তাতে দোষের কিছু নেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, জামায়াত কোনোদিন আদর্শ পরিবর্তন করতে পারেনা। আওয়ামী লীগের যে সব নেতা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তারাই জামায়াত-শিবিরকে কাছে নিয়ে শক্তি দেখাতে চাচ্ছে। এতে দলের সর্বনাশ ঢেকে আনবে। জামায়াত-শিবির স্বার্থ হাসিল করেই সময় মত কেটে পড়বে।

আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা বিষয়ক সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেন,‘ বিষয়টি নিয়ে আমরা ভাবছি। তাদের যোগদানের বিষয়টি আমাদের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত নয়। এই সময়ে জামায়াত-শিবিরের নেতাকর্মীদের যোগদানের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। কারণ বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ বরাবরই জামায়াত-শিবিরের যোগদানের বিষয়ে নিরুৎসাহিত করে আসছে।

তবে বিষয়টি এখনো উদ্বেগের নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, যারা যোগদান করছে বলে জানতে পারছি, তাদের কেউই জামায়াতের সিনিয়র নেতা নন। স্থানীয় পর্যায়ে রাজনীতির নানা সমীকরণ কাজ করতেই পারে।

এএসএস/এসএইচএস/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।