আদমজী জুট মিল বন্ধের ১৩ বছর আজ
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী অাদমজী জুট মিল বন্ধের ১৩ বছর আজ। এর আগে ২০০২ সালের ৩০ জুন বিএনপি সরকার ১২শ’ কোটি টাকা লোকসানের অজুহাতে আদমজী জুট মিলটি চিরতরে বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা বেকার হয়ে পড়ে।
এদিকে ২০০৬ সালে মিলটির জায়গায় তৈরি করা হয়েছে আদমজী ইপিজেড। বর্তমানে সেখানে ৪১ হাজার শ্রমিক কর্মচারী ও কর্মকর্তা কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এ ইপিজেডে এ পর্যন্ত ৩১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে এবং ইপিজেড থেকে এ পর্যন্ত ১৬৪১.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে।
জানা গেছে, ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে ১৫ কিলোমিটার এবং ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ৪০ কিলোমিটার ও চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ২৫৫ কিলোমিটার দূরে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগরে গড়ে তোলা হয়েছে আদমজী ইপিজেড। আদমজী ইপিজেডটি ২০০৬ সালের ৬ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয়।
আদমজী ইপিজেড সূত্রে জানা গেছে, ২৪৫.১২ একর জমির ওপর আদমজী ইপিজেড (এইপিজেড) স্থাপিত হয়েছে। এ ইপিজেডের মোট প্লটের সংখ্যা ২২৯টি। ৬০টি দেশি-বিদেশি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে এ ইপিজেডে। এর মধ্যে দেশি মালিকাধীন ১৮টি, বিদেশি মালিকাধীন ২৬টি এবং যৌথ মালিকাধীন ১৬টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। ১০টি প্রতিষ্ঠান নির্মাণাধীন রয়েছে। বর্তমানে সেখানে ৪৫টি কারখানা চালু রয়েছে। প্রতিটি প্লটের আয়তন ২ হাজার বর্গমিটার।
কোন কোন শিল্প প্রতিষ্ঠান ১০ এর অধিকও প্লট বরাদ্দ নিয়েছেন। এসব কারখানায় গার্মেন্টস, জিপার, কার্টন, হ্যাঙ্গার, লেভেল, ট্যাগ, জুতা, সোয়েটার, টেক্সটাইল, মোজা, জুয়েলারি, পলি ও ডায়িংসহ ইত্যাদি পণ্য উৎপাদন হচ্ছে যা ১০০ ভাগ রপ্তানিযোগ্য পণ্য। শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে বর্তমানে ৪১ হাজার জন শ্রমিক-কর্মকর্তা-কর্মচারী কাজ করছে। এর মধ্যে ২৩১ জন বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীও রয়েছেন।
২০১৪-২০১৫ (মে-১৫ পর্যন্ত) অর্থবছরে ৪৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে। এ পর্যন্ত বিনিয়োগ করা হয়েছে ৩১২ মিলিয়ন মার্কিন ডালার। আদমজী ইপিজেড থেকে ২০১৪-২০১৫ (মে-১৫) ৪২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়েছে। এ পর্যন্ত সর্বমোট ১৬৪১.২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করা হয়। হংকং, কানাডা, জাপান, রোমানিয়া, সিঙ্গাপুর, জার্মানি, ইউইএ, আমেরিকা, থ্যাইল্যান্ড, ভারত, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান, ইউক্রেন, দক্ষিণ কোরিয়া, কুয়েত, পুর্তগাল, চীন ও মরিশাসসহ বেশ কয়েকটি উন্নত দেশ এই পিজেডে বিনিয়োগ করেছে।
এদিকে, ২০০২ সালের ৩০ জুন বিএনপি সরকার ১২শ’ কোটি টাকা লোকসানের অজুহাতে আদমজী জুট মিলটি চিরতরে বন্ধ করে দেয়। ফলে প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তা বেকার হয়ে পড়ে।
আদমজীর ভেতরে ৭টি ইউনিট ছিল। এগুলো হলো- ১নং, ২নং, ৩নং ৪নং, ৫নং, ৬নং ও ৭নং ইউনিট। মিলের মধ্যে ১, ২ ও ৩ নং ইউনিটে উৎপাদন হত হেসিয়ান ও সেকিং। ৪নং (ব্রডলুম) ইউটিটে উৎপাদন হতো শুধু হেসিয়ান। এগুলো থেকে তৈরি চটের ব্যাগ ও বস্তার একটি অংশ অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রফতানি করা হতো।
৫নং (এবিসি) ইউনিটে জিও জুট নামে এক ধরনের জালের মতো পাটজাত পণ্য তৈরি করা হতো যা পুরোটাই বিদেশে রফতানি করা হতো। ৬ নং ইউনিটে তৈরি হতো লেমিনেটেড পলিব্যাগ। এছাড়াও ৭নং ইউনিটে ছিল সেন্ট্রাল ওয়ার্কশপ। আদমজীর মেশিনের কিছু যন্ত্রাংশ ওয়ার্কশপেই তৈরি করা হতো। এখনও ২নং ইউনিটের অবকাঠানো একই অবস্থায় রয়েছে। অবশিষ্ট সকল ইউনিট ভেঙে শিল্প প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে।
হোসেন চিশতী সিপলু/এসএস/পিআর