সিলেটে সম্মেলন ও কমিটি নিয়ে ছাত্রলীগে বিদ্রোহ
সিলেটে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ওয়ার্ড ও ইউনিটের কমিটি গঠন নিয়ে তৃণমূলে বিদ্রোহ দেখা দিয়েছে। গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে ত্যাগী ও পরীক্ষিতদের উপেক্ষা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। সুবিধাবাদীদের দিয়ে মহানগরের সম্মেলনকে সামনে রেখে নিজেদের পছন্দের নেতাকর্মীদের দিয়ে তড়িঘড়ি করে ছাত্রলীগের বিভিন্ন ইউনিটের কমিটি ঘোষণার অভিযোগ উঠেছে। ছাত্রলীগে এখন চলছে পাল্টাপাল্টি কমিটি ঘোষণা।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। সিলেট ল`কলেজে বিবাহিতদের কমিটি দেওয়ায় প্রতিবাদ করায় সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাশেদ ইসলামকে ফেসবুকে রাবিশ বলেন মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি রাহাত তরফদার। এ নিয়ে সিলেটের সর্বত্র তোলপাড় হচ্ছে।
আগামী ৪ জুলাই সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সম্মেলনকে সামনে রেখে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ওয়ার্ড ও কলেজ মিলিয়ে ২০টি ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়। গত শুক্রবারও নতুন ৩টি ইউনিটের কমিটি ঘোষণা করা হয়।
এ উপলক্ষে গত শনিবার নগরের দরগা গেইটস্থ সুলেমান হলে ছাত্রলীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। বর্ধিত সভায় নগর ছাত্রলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশি ৫৯ জন নেতা তাদের জীবন বৃত্তান্ত জমা করেছেন বলে জানিয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেকেই জানিয়েছেন, ইতোমধ্যে কমিটিতে কারা আসছেন তা নির্ধারণ করা হয়ে গেছে। সিলেট আওয়ামী লীগের ৪ নেতা কমিটির ভাগবাটোয়ারা হিসেব শেষ করেছেন। তাই ওই ৪ নেতার বলয়ের ছাত্রলীগ নেতারাই স্থান পাবেন নতুন কমিটিতে। সেক্ষেত্রে যোগ্যতা, ক্লিন ইমেজ আর বিবাহিত-অবিবাহিতের বিষয়টি কতটুকু গুরুত্ব পাবে তা ৪ জুন পরেই পরিষ্কার হওয়া যাবে।
সম্মেলনে নিজেদের পক্ষে ভোট বাড়াতে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার ও সাধারণ সম্পাদক এমরুল হাসান তড়িঘড়ি করে নতুন কমিটি ঘোষণা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। ঘোষিত সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনেকেই অছাত্র ও বিবাহিত বলেও দাবি নেতাকর্মীদের।
সিলেট ল`কলেজ ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটি অবৈধ দাবি করে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান বলেন, ল`কলেজে যাকে সভাপতি করা হয়েছে তিনি বিবাহিত ও অছাত্র। এ কমিটি ছাত্রলীগের সংবিধান অনুযায়ী অবৈধ।
মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি রাহাত তরফদার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে এতোদিন ইউনিটগুলোর কমিটি ঘোষণা করা সম্ভব হয়নি। তাই একসঙ্গে ১৮টি ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। আগামীতে তিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে থাকছেন না। তাই সম্মেলনে ভোট বাড়ানোর চিন্তা তার করার কথা নয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে, সিলেট ল`কলেজের নব গঠিত কমিটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে পক্ষে বিপক্ষে সমালোচনার ঝড় বইছে। শনিবার বিকেল ৫টায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাস রাহাত তরফদার এবং ছাত্রলীগের বেশ কয়েকজন নেতাকে ট্যাগ করে দেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাশেদুল ইসলাম রাশেদ।
মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতির সিলেট ল`কলেজে বিবাহিতদের কমিটি দেওয়ায় প্রতিবাদ জানালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রাশেদ ইসলামকে রাবিশ বলেন মহানগর ছাত্রলীগ সভাপতি রাহাত তরফদার। তার এমন উক্তি যেন অনেকেই মেনে নিতে পারছেন না। পাল্টা প্রতিক্রিয়াও পাওয়া যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে।
সিলেট মহানগর ছাত্রলীগের সাভাপতি রাহাত তরফদার জাগো নিউজকে জানান, মহানগর ছাত্রলীগের ইতিহাসে আমার নেতৃত্বে ২৭টি কমিটি গঠন হয়েছে। আমার ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করতে এমনটি চলছে। তাছাড়া আমার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার আর ওর ক্যারিয়ার সমান নয়। একটা উদ্ভট বিষয় সাজিয়েছে রাশেদ। সে আলোচনায় আসতে চায়। আলোচনায় আসতে হলে কাজের মাধ্যমে আসতে হয়। রাহাত বলেন, রাশেদ এ বিষয়ে অনুতপ্ত।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ও সিলেট ল`কলেজের সদ্য সাবেক যুগ্ম সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম রাশেদ জাগো নিউজকে বলেন, গত ২৬ জুন রাহাত তরফদার তার ফেইসবুক টাইমলাইনে একটি স্ট্যাটাস দেন `গরম ভাতে বিলাই বেজার` সেই স্ট্যাটাসে আমি মন্তব্য করেছিলাম, একজন দক্ষ ছাত্রনেতা হয়ে কিভাবে ল`কলেজের এই ফাউল কমিটি দিলেন?
তিনি আরো বলেন, আমরা সিলেট ল` কলেজের দেওয়া কমিটিকে প্রত্যাখান করেছি। এই কমিটি আমরা মানি না।
ছামির মাহমুদ/এমজেড/আরআইপি