সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য কিছুই করেনি : খালেদা

মানিক মোহাম্মদ
মানিক মোহাম্মদ মানিক মোহাম্মদ , নিজস্ব প্রতিবেদক উখিয়া থেকে
প্রকাশিত: ১০:২৬ এএম, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

কক্সবাজারের উখিয়াতে গিয়ে তিনটি রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ ও একটি মেডিকেল ক্যাম্পের উদ্বোধন করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সোমবার দুপুরে ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে ত্রাণ বিতরণর করে বক্তব্যও দিয়েছেন তিনি।

কক্সবাজার সার্কিট হাউস থেকে প্রথমেই উখিয়ার ময়নারঘোনা ক্যাম্পে (শফিউল্লাহ কাটা) গিয়ে ত্রাণ বিতরণ করেন খালেদা জিয়া। এরপর হাকিম পাড়া, বালুখালিতে ত্রাণ বিতরণ শেষে বালুখালি পান বাজারে অবস্থিত ড্যাবের একটি মেডিক্যাল ক্যাম্প উদ্বোধন করেন তিনি।

ময়নারঘোনা ক্যাম্পে ত্রাণ বিতরণ শেষে তিনি বলেন, আমরা আজকে রোহিঙ্গাদের দেখতে এসেছি। যারা ঘরবাড়ি, আত্মীয় স্বজন সম্পদ হারিয়ে এদেশে এসেছে। এ ব্যাপারে বিশ্ববাসীকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছি।

তিনি বলেন, যেভাবে রোহিঙ্গাদের পাশে এ সরকারের দাঁড়ানো উচিত ছিল সেভাবে তারা কিছুই করতে পারেনি। এবং যারা কাজ করতে চায় তাদের বাধা সৃষ্টি করছে। তাদের ধন্যবাদ জানাবো যারা ইতিমধ্যে সাহায্য করেছে এবং করবে।

বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে আমি বলবো, অবিলম্বে মানবতার খাতিরে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে যাওয়ার জন্য যেমন কূটনৈতিক তৎপরতা এবং বাংলাদেশ সরকারকে তারা বলবে আন্তর্জাতিক সংস্থাকে দায়িত্ব নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের যারা বাংলাদেশে এসেছে তাদের বেশিদিন আশ্রয় দেয়া সম্ভব না।

খালেদা জিয়া বলেন, শুরুতেই আমি বিবৃতি দেই যাতে এখানে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়া হয়। একইসাথে আমি দাবি জানাই, রোহিঙ্গাদেরকে মর্যাদার সাথে নিরাপদে মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। সেই লক্ষ্যে সরকারকে জোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জানানোর আহ্বান জানাই। হত্যা নির্যাতনের স্বীকার রোহিঙ্গাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আমি বিশ্ববাসীকেও আহবান জানিয়েছি। এরপরই বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গাদের এখানে আশ্রয় দেয়। এরপর বিশ্বের কয়েকটি দেশ এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। তাদের উপর হত্যা নির্যাতন বন্ধ করতে নির্দেশ দেয়।

তারপরও হত্যা নির্যাতনে বাধ্য হয়ে রোহিঙ্গারা পরিবার পরিজন নিয়ে এদেশে আশ্রয় নিচ্ছে। এদের অনেকেই তাদের স্বামী সংসার ঘরবাড়ি হারিয়েছে। এরা বাংলাদেশে আসার পর থেকে টেকনাফ উখিয়ায় আমাদের দলের নেতাকর্মীদের নির্দেশ দেই যাতে তারা তাদের পাশে দাঁড়ায়। এরপর রোহিঙ্গারা দেশে আসার পর নেতাকর্মীরা নানাভাবে সহযোগিতা করে যাচ্ছে।

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বিএনপি যেভাবে ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছি সরকারের এমন ত্রাণ তৎপরতা লক্ষ্য করছি না। আমি মনে করি আন্তর্জাতিক সংস্থা যারা আছে তাদের আরো বেশি করে এগিয়ে আসা উচিত এবং সমস্যা নিরসনে সহযোগিতার হাত বাড়ানো দরকার।

‘আপনারা জানেন বাংলাদেশ একটি গরিব আয়ের ঘনবসতিপূর্ণ দেশ। এখানে রোহিঙ্গাদের স্থায়ীভাবে আশ্রয় দেয়া সম্ভব না। আন্তর্জাতিক সংস্থা বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন জাতিসংঘ এবং ওআইসিসহ সারা বিশ্বে বড় বড় রাষ্ট্রগুলোর কাছে আহ্বান করব তারা যেন জোর প্রচেষ্টা চালিয়ে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করে। যাতে তারা নির্ভয়ে নির্ধিধায় নিজ দেশে পরিবার পরিজন নিয়ে বসবাস করতে পারে ব্যবসা করতে পারে।

আমি বলতে চাই- এই রোহিঙ্গারা শরণার্থী, তারা এসেছে কিন্তু তাদের আশ্রয় দেয়া হতো না। সেজন্যই আমরা দাবি করেছিলাম তাদের সমস্যা সমাধানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা দরকার। এবং আমাদের দাবি মোতাবেক এখানে সেনাবাহিনী মোতায়েন করেছে বিধায় শৃঙ্খলা ফিরে এসেছিল। সেনাবাহিনীকে এখানে থাকতে হবে।

তিনি বলেন, এর আগেও আমরা রোহিঙ্গাদেরকে অনেক সাহায্য সহযোগিতা করেছি। আমরা আমাদের সাহায্য চালিয়ে যাচ্ছি। সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানাব এ জন্য যে তারা সুন্দরভাবে রিলিফ কার্যক্রম পরিচালনা করছে এবং রোহিঙ্গাদের দেখাশোনা করছে। বিএনপির নেতাকর্মীদেরকেও ধন্যবাদ জানাই যারা ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। মিডিয়াকেও ধন্যবাদ জানাবো।

আমি আরো বলতে চাই- আমরা মানবিক কারণে তাদেরকে ভাতা শিশু খাদ্য ও প্রসূতিদের প্রয়োজনীয় উপকরণ দিয়েছি। মসজিদের ব্যবস্থাও করছি। শুধু তাদেরকে এসব দিলেই হবে না তাদের স্বাস্থ্যেরও প্রয়োজন আছে যেহেতু তারা নানাভাবে নির্যাতিত হয়ে এসেছে। সে জন্য প্রথম থেকেই আমাদের চিকিৎসা সেবায় ক্যাম্প তৈরি করে আমার নির্দেশে ড্যাব কাজ করছে। যার ফলে মেডিকেল কার্যক্রম সুন্দর ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হচ্ছে। নারী এবং শিশুদের সুচিকিৎসার ব্যবস্থা করেছে। আমাদের পক্ষে রিলিফ কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব না বিধায় ১১০টন চাল সেনাবাহিনীর কাছে দিয়েছি। যাতে তারা সেটা রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করতে পারে।

আমরা পাঁচ হাজার শিশু ও প্রসূতিদের জন্য রিলিফ আমাদের মেডিকেল ক্যাম্প দেব। তারা সেখান থেকে এসব গ্রহণ করবে।

তিনি আরো বলেন, নানা কারণে অতীতেও যারা এসেছিল ১৯৭৮ সালে তাদেরকে আমরা ফেরত পাঠিয়েছি। আমার সরকারের আমলে যখন রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে এসেছে মিয়ানমার সরকারের সাথে আলোচনা করে ফেরত পাঠিয়েছি। এবং এই সরকার এখন পর্যন্ত কোনো উদোগ নেয়নি। এই সরকারকে অবিলম্বে উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ রোহিঙ্গা আসায় পরিবেশ এবং ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে।

মিয়ানমার সরকারকে আহ্বান করব, আপনারা মানবতার স্বার্থে রোহিঙ্গাদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে যান। এবং সেই দেশে নিরাপত্তাসহ সকল সহযোগিতার উদ্যোগ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের দৃশ্য বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যমে আমরা দেখেছি। শুধু নিন্দা করলেই হবে না আমরা চাই রোহিঙ্গারা যাতে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারে এবং শিশুরা নিরাপদে থাকতে পারে সে ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা গরিব মারা গেছেন তাদের জন্য দুই লাখ টাকা দান করেছি যাতে তারা তাদের দাফন কাফন সম্পন্ন করতে পারে।

খালেদা জিয়া বলেন, কাজেই আমাদের কাজ আমরা যতদিন চালিয়ে যেতে পারি, কিন্তু আমি মনে করি রিলিফ দিয়ে সবকিছুর সমস্যার সমাধান নয়। সমস্যার সমাধান হলো আলাপ আলোচনা করতে হবে এবং কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে সেই দেশের নাগরিকদেরকে সে দেশে ফিরিয়ে নিতে হবে।
আমি আবারো আন্তর্জাতিক মহলের প্রতি দাবি জানাচ্ছি এটা শুধু কথার কথা বললে হবে না উদ্যোগ নিতে হবে এবং বাংলাদেশের প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। বাংলাদেশ ধনী দেশ নয় তবে তাদের মন আছে, গরিব হলেও নিজের পকেট থেকে যে যা পারছে সাহায্য সহযোগিতা করছে যা দীর্ঘকাল বহন করা সম্ভব নয়।

এমএম/একে/আইআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।