ইসিতে যুক্তিসংগত প্রস্তাব তুলে ধরবে বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:৩৮ পিএম, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সংলাপে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে সংসদ বিলুপ্তিসহ ‘যুক্তিসংগত’ সকল প্রস্তাব তুলে ধরবে বিএনপি। শুক্রবার দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য অসুস্থ তরিকুল ইসলামকে দেখতে গিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমরা বড় টিম নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সংলাপে যাব এবং সেখানে গিয়ে আমরা লিখিতভাবে আমাদের সমস্ত প্রস্তাব তাদের সামনে তুলব। ইট উইল বি এ ভেরি কমপ্রিহেনসিভ। আমি মনে করি যে, এই প্রস্তাবনা একটা মাইলফলক হয়ে থাকবে।’


ফখরুল বলেন, ‘আমরা সংসদ বিলুপ্তির কথা সুস্পষ্টভাবে বলব, সেনাবাহিনী নিয়োগের কথা আমরা সুস্পষ্টভাবে বলব, নির্বাচনকালীন যখন তফসিল ঘোষণা হবে তখন প্রশাসনকে যে ব্যবস্থাগুলো নিতে হবে সে বিষয়েও বলব। আরপিও’র কোথায় সমস্যা আছে সেটা বলব। ভোট প্রদানের ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম চালু করা উচিত, অবজারভারদের (পর্যবেক্ষক) ক্ষেত্রে কী কী নিয়ম থাকা উচিত- ডিটেলস আমাদের প্রস্তাবনায় থাকবে।’

অসুস্থ তরিকুল ইসলাম রাজধানীর শান্তিনগরের বাসায় রয়েছেন। সেখানে তার স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেন বিএনপি মহাসচিব। এ সময় তরিকুল ইসলামের স্ত্রী অধ্যাপিকা নার্গিস বেগম, ছেলে অনিন্দ্র ইসলাম অমিত উপস্থিত ছিলেন। তরিকুল ইসলামের সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিতব্য সংলাপের বিষয়বস্তু নিয়েও কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।

অসুস্থ তরিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের মানুষ একটা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেখতে চায়। এখন আমরাসহ সমস্ত রাজনৈতিক দলই এটা দেখতে চাই। এমনকি গতকাল (বৃহস্পতিবার) সিপিবি বলেছে, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে, একই কথা অন্যান্য দলও বলছে। এখন বিষয়টা নির্ভর করছে সরকার এটা কীভাবে নেবে তার ওপর।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা চাই দেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক। সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।’


নির্বাচন কমিশনের সংলাপ চলাকালে বিরোধী দল বিশেষ করে বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারেরও সমালোচনা করেন তিনি। তরিকুল ইসলামের সঙ্গে বৈঠকের আগে নির্বাচন কমিশনের সংলাপ নিয়ে সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন বিএনপি মহাসচিব।


তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও বিশ্বাস করি যে, নিরপেক্ষ ও স্বাধীনভাবে নির্বাচন কমিশন যদি তাদের দায়িত্ব পালন করে তাহলে কিছুটা হলেও সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। আমাদের যে পারসেপশনটা তৈরি হয়েছে এই যে নির্বাচন কমিশনারের কথায় বা এর গঠন প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যে, এই কমিশন কতটুকু সেটা পারবে বা তাদের যোগ্যতা আছে – সে ব্যাপারে আমাদের প্রশ্ন আছে, আমরা সেই প্রশ্ন রেখেছি।’


ফখরুল বলেন, ‘আমরা বলেছি যে, এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে, তাহলে এই নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশেষ করে সরকার প্রধানের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের কথা বলেছি। তারা যে সংবিধানের সংশোধনগুলো করেছে তাতে নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।’


নির্বাচনকালীন সরকার যদি বর্তমান ক্ষমতাসীন দলই থাকে তাহলে নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু নির্বাচন করতে পারবে কি না প্রশ্ন করা হলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘আমরা বরাবরই বলেছি যে, এই সরকার যদি ক্ষমতায় থাকে তাদের অধীনে যদি নির্বাচন হয় তাহলে সেই নির্বাচন কখনই সুষ্ঠু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বিশেষ করে সরকার প্রধানের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের কথা বলেছি যে, এটা এমন একটা অবস্থা তৈরি হয়েছে যে, এখানে একটা পরিবর্তন আসা দরকার।’

তিনি আরও বলেন, ‘তারা (ক্ষমতাসীন দল) সংবিধানে যেসব সংশোধনী করেছে, সেই সংশোধনীর মধ্য দিয়ে এই নির্বাচন কতটুকু সুষ্ঠু হবে সে প্রশ্নও রয়েছে। যেমন, পার্লামেন্ট ডিজোলবড (বিলুপ্ত) হবে না। পার্লামেন্ট ডিজোলবড না করলে কীভাবে নির্বাচনটা সুষ্ঠু হবে? আমাদের এখানে একটা ট্র্যাডিশন হয়ে আসছে, মানুষের মধ্যে একটা সাইকি তৈরি হয়েছে যে, সেনাবাহিনী নিয়োগ না করলে নির্বাচনে সুষ্ঠু অবস্থা আশা করা যায় না। এই বিষয়গুলো আমরা বলেই আসছি, সংলাপেও বলব।’


সংলাপের বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘আমরা আগে থেকে নেতিবাচক কথা বলতে চাই না। কিন্তু পুরো রাজনৈতিক যে অবস্থা তৈরি হয়েছে, সরকার যে ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করছে, সরকার যে নির্বাচনমূলক আইনগুলো করছে, সরকার যে প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। এমন কী শেষ আশা-ভরসার স্থল বিচার বিভাগের স্বাধীনতা তারা সম্পূর্ণ হরণ করেছে। এই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আমি বলতে করতে পারি কখনই সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। আমাকে তো আশাবাদী হতে হবে, আমাকে তো পথ বের করতে হবে। পথ বের করার জন্যে আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করছি, শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে যাব। যেন আমরা নির্বাচনে অংশ নিতে পারি, যেন সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন হয়।’


সহায়ক সরকারের রূপরেখার প্রস্তাবনা নির্বাচন কমিশন দেবেন কি না জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাছে আমরা সহায়ক সরকারের রূপরেখা দেব না। আমরা তাদেরকে ধারণা দেব। দ্য পারসেপশন উইল বি গিবেন এবং আমরা এটা বলব যে, এটা ছাড়া সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। রূপরেখাটা আমরা পরে দেব।’


খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে পরোয়ানা জারির বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা থেকে সরকারের যে উদ্দেশ্য, তাদের যে হীন উদ্দেশ্য তা একেবারে প্রকাশ্য। তারা (সরকার) বিরোধী দলকে নির্বাচনে আসতে দিতে চায় না। এটা তারা করছে। জনগণের কাছে এটা পরিষ্কার।’


সাংবাদিকদের সাথে কথা বলার সময় দলের যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন নবী খান সোহেল ও চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, একদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে পরামর্শ পেতে গত ৩১ জুলাই সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করে নির্বাচন কমিশন। এরপর ১৬ ও ১৭ আগস্ট গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ের পর ২৪ আগস্ট থেকে শুরু হয় নিবন্ধিত ৪০টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ।

এমএম/আরএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।