ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনায় এক সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ ও বিশ্বব্যাংক


প্রকাশিত: ০২:০১ পিএম, ১৬ জুন ২০১৫

এশিয়ার বৃহত্তম ও পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল বাংলাদেশ ডেল্টা বা ব-দ্বীপের শক্তিশালী ব্যবস্থাপনার জন্য এক সঙ্গে কাজ করবে বাংলাদেশ সরকার, নেদারল্যান্ডস ও বিশ্বব্যাংক। মঙ্গলবার বাংলাদেশ সরকার, নেদারল্যান্ডস, বিশ্বব্যাংক ও এর অঙ্গসংস্থা আই এফ সি ও ২০৩০ ওয়াটার রিসোর্সেস গ্রুপের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। এই অংশীদারিত্ব বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ প্রনয়ণ ও বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখবে যা ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে সহায়তা করবে। বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০, একটি সামগ্রিক ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা যা ব-দ্বীপের অন্যন্য জীব বৈচিত্র্য ও ভৌত গুণাবলি অক্ষুণ্ন রেখে সার্বিক দৃষ্টিতে তৈরি।

বাংলাদেশে নিযুক্ত বিশ্ব ব্যাংকের কান্ট্রি ডিরেক্টর জোহানেস জাট বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থান, দারিদ্র্যের হার এবং জনসংখ্যার ঘনত্বের কারণে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন এবং এর সাথে সংশ্লিষ্ট অর্থনৈতিক ক্ষতির ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান ২১০০, ব-দ্বীপের টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এই চ্যালেঞ্জের মোকাবেলা করবে ও এর মাধ্যমে জীবন-জীবিকার জন্য এই অনন্য পরিবেশের ওপর নির্ভরশীল লাখ লাখ মানুষ উপকৃত হবে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম সুরক্ষা পাবে।’

বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ গঙ্গা-ব্রহ্মপুত্র-মেঘনার ব-দ্বীপে অবস্থিত। সে জন্যই টেকসই ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনার প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেয়া জরুরি। ব-দ্বীপের জন্য যথাযথ পরিকল্পা ও ব্যবস্থাপনা আগামী দশকগুলোতে নিরাপদ পানি, খাদ্য নিরাপত্তা এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন নিশ্চিত করবে।

বাংলাদেশ ডেল্টা পরিকল্পনার লক্ষ্য হল- ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনায় একটি দীর্ঘমেয়াদী রূপকল্প তৈরি, ভিন্ন ভিন্ন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ ও সাড়া দেয়া, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে চিহ্নিত করে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সংগঠিত করা এবং বেসরকারি খাত ও উন্নয়ন সহযোগীদের সম্পৃক্ত করে একটি দীর্ঘ মেয়াদী বিনিয়োগ কর্মসূচি সৃষ্টি।

বিশ্ব ব্যাংকের প্রোগ্রাম লিড লিয়া সাইগার্ট বলেন, ‘অ্যাডাপ্টিভ ব-দ্বীপ ব্যবস্থাপনা সমৃদ্ধিশীল বাংলাদেশের জন্য ভিত্তি হিসাবে কাজ করবে।’

বাংলাদেশ সরকার, নেদারল্যান্ডস এবং বিশ্বব্যাংক গ্রুপের এই অংশীদারিত্বের মাধ্যমে তথ্য ও অভিজ্ঞতার বিনিময়, যৌথ কর্মকাণ্ড চিহ্নিত ও বাস্তবায়ন এবং অভিজ্ঞতা ও সক্ষমতার সমন্বয় করবে। ২০১২ সালে বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডসের মধ্যে স্বাক্ষরিত অন্য একটি চুক্তির ওপর ভিত্তি করে এই চুক্তি করা হয়েছে।

নেদারল্যান্ডসের অবকাঠামো এবং পরিবেশ বিষয়ক মন্ত্রী মেলানি সুলৎজ ভ্যান হেইগেন বলেন, ‘সব ব-দ্বীপ আকৃতির দেশগুলোর মতো বাংলাদেশ ও নেদারল্যান্ডসের এই জটিল পরিবেশ ব্যবস্থাপনার বিষয়টি একই সূত্রে গাঁথা। অভিজ্ঞতা এবং বাস্তব জ্ঞানের আদান-প্রদানে বাংলাদেশ এবং নেদারল্যান্ডস তাই স্বভাবতই অংশীদার।’ তিনি দুর্যোগের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থার ওপর জোর দেন।

গত দশকগুলোতে বাংলাদেশ সরকার প্রাকৃতিক দুর্যোগে ঝুঁকি কমিয়ে আনতে দশ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বেশি বিনিয়োগ করেছে। নির্মিত হয়েছে নদীর তীর রক্ষা বাঁধ, ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র, গড়ে উঠেছে আন্তর্জাতিক মানের কমিউনিটিভিত্তিক আগাম সতর্কতা ব্যবস্থা, যা চরম প্রতিকূল আবহাওয়ায় মানুষের জীবন, জীবিকা এবং সম্পদের ক্ষতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে এনেছে।

২০৩০ ওয়াটার রিসোর্সেস গ্রুপের নির্বাহী পরিচালক অ্যান্ডারস বার্নটেল বলেন, ‘এই অংশীদারিত্ব ও পরিকল্পনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ পানি সম্পদের বৃহৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিভিনড়ব পক্ষ থেকে সম্পদ এবং অঙ্গীকার প্রয়োজন। এই পরিকল্পনার আওতায় সরকার, আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি সংস্থা এবং বাংলাদেশের বেসরকারি খাত একত্রিত হবে।’ অ্যান্ডারস বার্নটেল আইএফসি/ডাব্লিউআরজি’র পক্ষে সমঝোতা স্মারকে (এমওইউ) স্বাক্ষর করেন।

অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে সমঝোতা স্মারকে বাংলাদেশ সরকার, নেদারল্যান্ডস সরকার, বিশ্ব ব্যাংক এবং আইএফসি/ ডাব্লিউআরজি পক্ষে যথাক্রমে স্বাক্ষর করেন আবুল মাল আবদুল মুহিত, লিলিয়েন প্লুমেন, লিয়া সাইগার্ট এবং অ্যান্ডারস বার্নটেল।

এসএ/আরআই

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।