পচা চাল আমদানি করছে সরকার : বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:১২ এএম, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

পচা গমের পর সরকার এবার পচা চাল আমদানি করেছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাড. রুহুল কবির রিজভী

তিনি বলেন,থাইল্যান্ড থেকে দরপত্রের মাধ্যমে আমদানি করা প্রায় ৩২ হাজার ১৪০ টন চাল নিয়ে দু’টি জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরে এসেছে। এর মধ্যে এমভি থাই বিন বে নামের একটি জাহাজ ১২ হাজার ২৯০ টন চাল নিয়ে ৩১ আগস্ট এবং এমভি ডায়মন্ড-এ নামের অপর চালবাহী জাহাজ আসে চলতি মাসের এক তারিখে। এতে ১৯ হাজার ৮৫০ টন চাল রয়েছে। পচা চাল নিয়ে দেন-দরবার করতে গিয়ে গত দু’দিন আগে ফাঁস হয়ে যায় পচা চালের গোমর। চালগুলো একবারেই খাওয়ার অনুপযোগী এবং অত্যান্ত নিম্নমানের।
শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যলয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।

রিজভী বলেন, 'যেহেটু পচা ঘটনা ফাঁস হয়ে গেছে তাই এখন সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে এগুলো খালাস করা যাবে না। তাই খাদ্য বিভাগ চালগুলো ফিরিয়ে নিতেও বলেছে থাইল্যান্ডের এ জাহাজ দুটিকে। কিন্তু জাহাজের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা চাল ফেরত না নিয়ে চালগুলো বেসরকারিভাবে হলেও বিক্রি করে যাবেন। তাই গত মঙ্গলবার থেকে তারা যোগাযোগ করেন চট্টগ্রামসহ দেশের বেশ কয়েকটি চাল ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে। এরপর থেকে পচা চাল নিয়ে তোলপাড় শুরু হয় চট্টগ্রামজুড়ে। প্রায় এক মাস আগে থাইল্যান্ড থেকে পচা গমের চালান আসার পরও এখনও জাহাজ দুটি চট্টগ্রাম বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় থাকায় একটি জিনিস পরিষ্কার যে, এর পেছনে সরকারের রাঘব-বোয়ালরা জড়িত।

বিএনপির এই নেতা বলেন, ইতোপূর্বে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের গম কেলেঙ্কারির কথা নিশ্চয়ই দেশবাসী ভুলে যাননি। খাদ্য অধিদফতর ও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটদের মাধ্যমে সে সময় ব্রাজিল থেকে ৪০০ কোটি টাকায় ২ লাখ ৫ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন পচা গম আমদানি করা হয়েছিল। সে সময় পচা গম কেলেঙ্কারির ঘটনা দেশজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল। বিষয়টি তখন উচ্চ আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। উচ্চ আদালত পচা গম কেলেঙ্কারি তদন্তের জন্য দুদককে নির্দেশনা দিলেও আজও সে তদন্ত আলোর মুখ দেখেনি। খাবারের অনুপযোগী চাল বা গম সরবরাহ করা সংবিধান পরিপন্থী। এটির মাধ্যমে সরকার শুধু সংবিধান বিরোধী কাজই করেনি, মানবতাবিরোধী কাজ করছে, জনগণের ক্ষুধাকে নিয়ে তামাশা করছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি বলেন, আইনমন্ত্রীর বক্তব্য হাস্যকর ও নির্লজ্জ মিথ্যাচার। সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার পর প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে মন্ত্রী, এমপি ও আওয়ামী লীগের নেতারা কিভাবে প্রধান বিচারপতির বিরুদ্ধে আক্রমণাত্মক বক্তব্য দিয়ে যাচ্ছেন তা মানুষ ভুলে যায়নি। আদালত কর্তৃক সময় বেধে দেয়ার পরও কিভাবে আপনারা মাসের পর মাস সেটিকে আটকিয়ে রাখছেন সেটাও দেশবাসী প্রত্যক্ষ করছে। সর্বোচ্চ আদালত কর্তৃক বারবার তাগিদ দেয়া সত্ত্বেও আইনমন্ত্রী কেন সেটিকে বারবার এড়িয়ে যাচ্ছেন, সেটিও দেশবাসীর কাছে বোধগম্য। অর্থাৎ একদলীয় শাসনের যে বিষবৃক্ষ রোপণ করা হয়েছে সেটির গোড়ায় পানি ঢেলে তরতাজা করার জন্য বিচার বিভাগের স্বাধীনতার ওপর সরকার হামলা চালাচ্ছে। আইনমন্ত্রীর বক্তব্য ধোকাবাবি ও ধাপ্পাবাজী ছাড়া আর কিছুই নয়।

গতকাল এক অনুষ্ঠানে আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘বিচার বিভাগের ক্ষমতা ক্ষুণ্ন করার চিন্তা সরকারের নেই। বরং ক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে সরকার দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ আইনের শাসনে বিশ্বাসী,আমরা আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল।”

তিনি বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসন ও লুটেরা নীতির কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এখন শূন্যের কোঠায়। বিনিয়োগ না হওয়ায় এবং উৎপাদন দিন দিন কমতে থাকায় আমদানির ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে দেশ। ফলে আমদানি খাতে ব্যয় বাড়তে থাকায় বাইরের সঙ্গে বাংলাদেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েই চলেছে।

দেশ মহাবিপর্যয়ের মধ্যে থাকলেও সরকারের বিরোধী দল দমনের কোন কমতি নেই- এমন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, সীমাহীন ক্ষোভ ও প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে রোহিঙ্গা ইস্যু ও চাল সংকটের মধ্যেও দেশব্যাপী গ্রেফতার, হামলা-মামলা, বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের বাড়িঘরে আক্রমণ অব্যাহত রয়েছে।

সংবাদ সম্মলনে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, হাবিবউন নবী খান সোহেল, অ্যাড.মাসুদ আহমেদ তালুকদার,সানাউল্লাহ মিয়া, কাজী আবুল বাশার প্রমুখ।

এমএম/এনএফ/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।