সদর হাসপাতাল থেকে কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না রোগীরা
তিতাসপাড়ের জনপদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় প্রায় ৩০ লাখ মানুষের বসবাস। বিশাল এই জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সেবার একমাত্র মাধ্যম হলো ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতাল। আধুনিক এ হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসা সরঞ্জাম থাকলেও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ রোগীরা।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরের কুমারশীল মোড় এলাকায় ১৯৯২ সালে এক একর ৭০ শতাংশ জমির উপর প্রতিষ্ঠিত হয় জেলা সদর হাসপাতাল। পরবর্তীতে ১৯৯৫ সালে হাসপাতালটি ১শ’ শয্যায় উন্নীত করা হয়। এরপর ২০১০ সালের ১২ মে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করে আধুনিক এ হাসপাতালটির উদ্ধোধন করেন তৎকালীন এবং বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বর্তমানে হাসপাতালটিতে জরুরি বিভাগ ছাড়াও অর্থোপেটিকস্ ওয়ার্ড, গাইনি ও প্রসূতি ওয়ার্ড, শিশু ওয়ার্ড, মেডিসিন ওয়ার্ড, সার্জারী ওয়ার্ড, ডাইরিয়া ওয়ার্ড, পেয়িং ওয়ার্ড, কার্ডিওলজি ওয়ার্ড, চক্ষু ওয়ার্ড, রেডিওলজি বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ, সার্জিকেল ওটি (অপারেশন থিয়েটার) সহ সব ধরনের ওটি চালু রয়েছে। তবে এতো কিছু থাকার পরও কাঙ্খিত সেবা পাচ্ছেন না সাধারণ রোগীরা।
শুধু নামে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট আধুনিক সদর হাসপাতাল হলেও শয্যার (বিছানা) অভাবে জেলার দূর-দূরান্ত থেকে আসা অনেক রোগীকেই হাসপাতালের মেঝেতে চাটাই পেতে ময়লা-আবর্জনার পাশে শুয়ে থাকতে দেখা গেছে। এর ফলে স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা এসব রোগীদের অসুস্থ্ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের বেশ কয়েকটি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র (এসি) ও টিউবওয়েল অকেজো হয়ে পড়ে আছে। এগুলো মেরামতের ব্যাপারেও কতৃপক্ষ উদাসীন।
অন্যদিকে সদর হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্যে প্রতিনিয়ত ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন সাধারণ রোগীরা। হাসপাতালের কিছু চিহ্নিত দালাল গ্রামের সাধারণ রোগীদের এই হাসপাতালে (সদর হাসপাতাল) ভালো চিকিৎসা হয় না বলে বেসরকারি ক্লিনিকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেন। আর গ্রামের সাধারণ রোগীরা দালালদের পাতা সেই ফাঁদে পা দিয়ে বেসরকারি প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সদর হাসপাতালের দালালরা কয়েকটি ভাগে বিভক্ত হয়ে হাসপাতালে কাজ করেন। আর গ্রামের সাধারণ কোন রোগী দেখলেই সামনে এসে হাজির হন তারা (দালাল)। বিনিময়ে তারা বেসরকারি ক্লিনিকগুলো থেকে নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন। এসব দালালদের তালিকায় সদর হাসপাতালের কয়েকজন অসাধু কর্মচারী, কতিপয় কিছু গ্রাম্য চিকিৎসক ও রিক্শা চালক রয়েছেন।
অভিযোগ রয়েছে, সদর হাসপাতালের বেশিরভাগ চিকিৎসকই যথাসময়ে হাসপাতালে না এসে বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে নিজেদের চেম্বারে বসে রোগী দেখেন। হাসপাতালে এক্স-রে মেশিনসহ অন্যান্য রোগ নির্ণয়ের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও রোগীদেরকে এক্স-রেসহ অন্যান্য পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। এর ফলে বাধ্য হয়েই বেসরকারি ক্লিনিকগুলোতে গিয়ে সর্বস্ব হারাচ্ছেন সাধারণ রোগীরা।
কয়েকজন রোগীর সাথে কথা বললে তারা জাগো নিউজকে জানান, হাসপাতাল থেকে তাদেরকে সব ধরনের ওষুধ সরবরাহ করার কথা থাকলেও তারা ঠিকমত ওষুধ পাচ্ছেন না। এছাড়া হাসপাতালের মেঝেতে সব সময় ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে এবং বাথরুমগুলো নিয়মিত পরিস্কার করা হয় না বলে দুর্গন্ধ ছড়ায়। আবার অনেক সময় হাসপাতালের ভেতর দিয়ে কুকুর-বিড়ালও আসা যাওয়া করে বলে অভিযোগ করেন রোগীরা।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সদর হাসাপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আকবর হোসেন চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, রোগীদের সব অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা সবসময় রোগীদেরকে উন্নত সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। হাসপাতালে সব ধরনের রোগের ওষুধ না থাকায় রোগীদের সব ওষুধ সরবহরাহ করা সম্ভব হয় না। তাছাড়া হাসপাতালে ২৫০ শয্যার বিপরীতে অতিরিক্ত রোগী থাকায় শয্যার অভাবে তাদেরকে মেঝেতে শুয়ে থাকতে হয়। তবে এসব সমস্যা নিরসনের কাজ চলছে।
হাসপাতালে দালালদের দৌরাত্ম্য নিয়ে তিনি বলেন, দালালদের উৎপাত বন্ধে হাসপাতালে নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালতের দালালবিরোধী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে।
এসএস/এমএস