অরাজকতা শক্ত হাতে দমন হয়েছে বলেই গৃহযুদ্ধ বাধেনি : সুরঞ্জিত


প্রকাশিত: ০৩:০৮ পিএম, ২৫ মে ২০১৫

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। উপদেষ্টা, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী। চলমান বিষয় নিয়ে সম্প্রতি কথা হয় জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক সায়েম সাবু

জাগো নিউজ : সাগরে মানুষ ভাসছে। তাতে বাংলাদেশিরাও রয়েছে। থাইল্যান্ড-মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশিদের গণকবরের খোঁজ মিলছে। একে মানবিক বিপর্যয় বলবেন কি-না?

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : মানবিক বিপর্যয়ই বটে। তবে একদিনে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি। মানুষের জীবন নিয়ে এই পাষণ্ডতা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে।

জাগো নিউজ : এখন তো চূড়ান্ত মাত্রার প্রকাশ…

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : গণমাধ্যমে যেভাবে প্রকাশ পাচ্ছে, তাকে চূড়ান্ত মাত্রাই বলতে হয়। কঙ্কালসার দেহ নিয়ে শত শত মানুষ দিনের পর দিন সাগরের লোনা পানিতে ভাসছে। তীরে ভিড়তে চাইলে রাষ্ট্র তাড়া করছে। খাবার নেই, পানি নেই। কতো মানুষ মারা গেছে তারও হিসাব নেই। এমন বিপর্যয় সভ্য সমাজে মেনে নেয়া যায় না।
 
জাগো নিউজ : সমাজে নারীর প্রতি সহিংসতাও বাড়ছে। মিছিলে নারীর ওপর পুলিশ হামলা করছে। এ নিয়েও তো জনমনে উদ্বেগ...

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : সত্যিই অবাক করার মতো ঘটনা। একজন নারীর সম্ভ্রমহানির ঘটনায় আরেকজন মেয়ে প্রতিবাদী মিছিলে অংশ নেয়। পুলিশ সেই মেয়েটির ওপর হামলা করে কঠোর অন্যায় করেছে বলে মনে করি। মেয়েটি গাছের আড়ালে গিয়েও পুলিশের হাত থেকে রেহাই পায়নি। এর বিচারে একজন বা দুইজন পুলিশকে দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দিলেই শেষ হয়ে যায় না। গভীর তদন্ত করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া সময়ের দাবি বলে মনে করি।
 
জাগো নিউজ : ব্লগারদের হত্যার ঘটনাতেও পুলিশ কোনো রহস্য উদঘাটন করতে পারছে না। এ ব্যাপারে কী বলবেন?
 
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : এ ব্যাপারে পুলিশ নিষ্ক্রিয় কেন তার জবাব পুলিশ বা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ই ভালো দিতে পারবে। আমি শুধু বলবো এমন পরিস্থিতি কারোরই কাম্য নয়। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার ওপর মানুষ আস্থা হারালে সমাজে অবক্ষয় বাড়বে।    

জাগো নিউজ : রাজনীতির নানা রং দেখার সুযোগ হলো খুব কাছে থেকে। একে রাজনৈতিক সংকট বলা যায় কি-না?
 
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : সংকট ছিল, এখন নেই। দুঃখজনক হলেও সত্য, দেশের অন্যতম বৃহৎ একটি গণতান্ত্রিক দল মূলধারার রাজনীতি থেকে ছিটকে পড়ে হিংসা, সন্ত্রাস, সহিংসতার ওপর ভর করে অরাজকতা সৃষ্টি করার অপচেষ্টা চালায়। তারা জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে। এরপর স্থানীয় নির্বাচনে অংশ নেয়। এরপর গত তিন মাসে যে তাণ্ডব চালিয়েছে, তাতে দেশ ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। বিরোধীজোটের অরাজকতা শক্ত হাতে দমন হয়েছে বলেই গৃহযুদ্ধ বাধেনি। বিলম্বে হলেও বিএনপির বোধোদয় হয়েছে। আর এটিই হচ্ছে আমাদের সামাজিক শক্তি। এ শক্তির ওপর ভর করেই বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার জন্য বিরোধী দল দায়ী বলে মনে করি। বিরোধীজোটের অরাজকতা দূর করতে পুলিশকে অধিক পরিশ্রম করতে হয়েছে। একই কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে পুলিশের নজরদারি কমতেও পারে।

জাগো নিউজ : ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বিএনপি আন্দোলন করেনি বলে আপনারা বলেছিলেন, তারা শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। ফের আন্দোলন হলো। তার মানে সামাজিক শক্তিও মাঝে মাঝে দুর্বল হয়ে পড়ে?

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : আমি মনে করি, সামাজিক শক্তি দুর্বল হয় না। বিএনপিকে গণতান্ত্রিক যাত্রা থেকে হঠাৎ করেই সন্ত্রাস, জঙ্গি নির্ভর দলে পরিণত হতে দেখলাম। একটি দল যখন তার মৌলিক অবস্থান থেকে সরে আসে, সমাজে তখন অস্থিরতা বাড়বেই।

জাগো নিউজ : আওয়ামী লীগ কি স্বীকার করে বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক দল?

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : বিএনপি অনিয়মতান্ত্রিকভাবে ক্ষমতায় এলেও পরবর্তীতে তারা নিয়মতান্ত্রিক দর্শন মেনেই রাজনীতি করেছে। এই প্রথম তারা ককটেল, পেট্রলবোমার রাজনীতি করে জাতির বিরুদ্ধে, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, শিক্ষার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। বিএনপি যে আদর্শে বিশ্বাস করে, তার সঙ্গে এ নাশকতার রাজনীতি যায় না। যদিও তারা অবশেষে সহিংসতার পথ ছেড়ে নির্বাচনের রাজনীতিতে ফিরে এসেছে।

জাগো নিউজ : বিএনপি নিয়মতান্ত্রিক দর্শনে বিশ্বাস করে রাজনীতি করে আসছিল বলছিলেন। তাহলে বিএনপিকে এ পথে যেতে হলো কেন?  

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : আদর্শভিত্তিক দল নয়। দল বাংলাদেশে একটাই। তা হচ্ছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আর আরেকটি দল আওয়ামী লীগবিরোধী। আওয়ামী লীগবিরোধী মানেই ১৯৭৫ সালের পর সন্ত্রাসের মাধ্যমে রাজনীতিতে উত্থান। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা তেল পানিতে মেলানোর চেষ্টা করে। মুক্তিযুদ্ধ এবং রাজাকারকে একই ফ্রেমে দেখানোর চেষ্টা করে। মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দেয়ার চেষ্টা করে। এটাই বিএনপির দর্শন। বিএনপি আমাদের সংবিধানকে তছনছ করে দিয়েছে। সংবিধানের চার স্তম্ভকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধের মতো মৌলিক বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছে।  

জাগো নিউজ : মৌলিক বিষয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ আওয়ামী লীগ করে দিল কি-না?

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : জাতির জনককে হত্যার পর বিএনপি যেভাবে ক্ষমতায় আসে এবং মৌলিক প্রশ্নে যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, তাতে করে বিএনপির কাছে সুস্থ ধারার রাজনীতি প্রত্যাশা করা ঠিক হবে না। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরেই স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি মৌলিক প্রশ্নে সংকট সৃষ্টি করেছে।

জাগো নিউজ : মহাত্মা গান্ধীও হত্যার শিকার হয়েছেন। ভারতকে এমন সংকটে পড়তে হয়নি।
 
সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : ঠিক বলেছেন। মহাত্মা গান্ধীর হত্যার পর ভারতে এমন সংকট সৃষ্টি হয়নি। এর কারণ হচ্ছে, সে দেশে তার অবদান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তোলেনি। ভারতের সংবিধান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়নি। আর বাংলাদেশে সংবিধানের ওপর ছুরি চালিয়েছে বিএনপি। শাহ আজিজুর রহমান বাংলাদেশকে কখনো স্বীকার করেননি। তিনি জাতিসংঘে বাংলাদশের বিরোধিতা করেছেন। জিয়াউর রহমান তাকে প্রধানমন্ত্রী বানিয়েছেন। রাজাকার আলিমকে মন্ত্রী বানালেন। ৭ মার্চের বক্তব্য ২১ বছর বন্ধ ছিল। ‘জয় বাংলা’ বলা নিষেধ ছিল। আপনি এ ঘটনাগুলো বাদ দিয়ে বিএনপিকে মূল্যায়ন করতে পারবেন না। বিএনপির সংকট এখানেই।

জাগো নিউজ : বিএনপির সংকটে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কেন? আর কতোইবা ভুগতে হবে?

সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত : আর কতো ভুগতে হবে তার কোনো গাণিতিক ব্যাখ্যা দেয়া যায় না। বাঙালির কারো কারো মধ্যে এখনো পাকিস্তানি ভূত চেপে আছে। এ ভূত না নামলে জাতিসত্ত্বার প্রশ্নে বারবার ঠেকতে হবে। তাদের বুঝতে হবে পাকিস্তান একটি ব্যর্থ রাষ্ট্র এবং আমরা সর্বক্ষেত্রে পাকিস্তান থেকে এগিয়ে আছি। এমন কোনো দিন নেই যে পাকিস্তানে মসজিদে বোমা হামলা হয় না। শিশুদের স্কুলও পাকিস্তানি জঙ্গিদের হাত থেকে নিরাপদ নয়। সুতরাং যত দ্রুত তারা (বিএনপি) বাংলাদেশের বাস্তবতা বুঝতে পারবে দেশ, জাতির ততোই মঙ্গল হবে। বঙ্গবন্ধুর অবদানকে অস্বীকার করে আপনি বাংলাদেশে রাজনীতি করতে পারেন না। নরেন্দ্র মোদি কংগ্রেসের বিরোধিতা করে ক্ষমতায় এসেছেন। সম্প্রতি বারাক ওবামা ভারত সফরে এসেছিলেন। নরেন্দ্র মোদি বারাক ওবামাকে নিয়ে প্রথমেই মহাত্মা গান্ধীর সমাধিস্থলে গেলেন। এটিই হচ্ছে সম্প্রীতির রাজনীতি। বঙ্গবন্ধুর নাম নিলে বিএনপি নিঃশেষ হয়ে যাবে না। বরং জনমনে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।

এএসএস/বিএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।