মন্ত্রী-এমপিদের স্রোত এখন গ্রামমুখী


প্রকাশিত: ০৪:০৮ পিএম, ১৫ জুন ২০১৭

চলছে পবিত্র রমজান মাস। মন্ত্রী-এমপিদের স্রোত এখন গ্রামমুখী। দলের নেতাকর্মী ছাড়াও অন্যান্যদের দাওয়াত করা বা তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়ের মুখ্য সময় এটি।

পাড়ায়-মহল্লায় এখন চলছে ইফতার মাহফিল, আলোচনা সভা, কর্মীসভা ও শুভেচ্ছা বিনিময়। মন্ত্রী-এমপিদের উপস্থিতিতে এলাকায় এলাকায় চলছে গণসংযোগ। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে নতুন করে সম্পর্ক ঝাঁলিয়েও নেয়া হচ্ছে।

এসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে তারা জানান দিচ্ছেন, সামনে নির্বাচন। এবার তৈরি হতে হবে। নির্বাচনে আবারও নৌকা প্রতীকের পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে।

সংশ্লিষ্ট সূ্ত্রে জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনার পর নড়েচড়ে বসেছেন ক্ষসতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপিরা। জনগণ ও তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়েছেন তারা। সংসদের বাজেট অধিবেশনের বিরতির মধ্যেও এলাকায় গিয়ে ঘাম ঝরাচ্ছেন অনেকে। আবার জাতীয় সংসদের নিজ কার্যালয়ে এলাকার মানুষকে অনেকে নিয়মিত সময় দিচ্ছেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয় ছিনিয়ে আনতে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ ও সুশৃঙ্খল দল। এ লক্ষ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছুটে বেড়াচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরের নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় নেতারা। পাশাপাশি সামাজিক বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ নিচ্ছেন তারা।

দলীয় প্রধান শেখ হাসিনা দলের নেতাকর্মীদের প্রতি আগেই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, এলাকায় জনপ্রিয়তা না থাকলে বা হারালে তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না। এ ঘোষণার পর অনেকে নড়েচড়ে বসেছেন। সবাই এখন ঘন ঘন গ্রামে যাচ্ছেন, নেতাকর্মীদের খোঁজ নিচ্ছেন।

বিভিন্ন সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, দীর্ঘদিন জনবিচ্ছিন্ন থাকায় স্থানীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগের অনেক মন্ত্রী-এমপি জনপ্রিয়তা হারিয়েছেন। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে। মন্ত্রী-এমপিদের পাশে থাকা সুবিধাভোগীদের অরাজনৈতিক আচরণে ওয়ার্ড, থানা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে অনেক নেতাকর্মী রাজনীতিবিমুখ হয়েছেন। অনেকে অভিমান করে নিজেকে রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সংশ্লিষ্ট এলাকায় দলের মন্ত্রী-এমপিরা সেসব নেতাকর্মীদের কাছে ডাকছেন। মাথায় হাত বুলিয়ে তাদের মান ভাঙাচ্ছেন। অতীতের ভুল আর পুনরাবৃত্তি হবে না- এমন আশ্বাস দিয়ে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে ফের ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করছেন।

জাতীয় সংসদ সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ছিল বেসরকারি দিবস। অধিকাংশ মন্ত্রী-এমপি বৈঠক শেষ করে রওনা হন গ্রামের পথে। ঈদ সামনে রেখে ঈদকেন্দ্রীক রাজনীতি শুরু হয়ে গেছে গ্রামগঞ্জে। তাই মন্ত্রী-এমপিদের আর ঢাকায় বসে থাকার সুযোগ নেই।

এসব বিষয়ে কথা হয় আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদের সঙ্গে। জাগো নিউজকে তিনি বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম- ৭ রাঙ্গুনিয়া। সেখানে আমার গ্রামের বাড়ি। চট্টগ্রাম শহরেও আমাদের বাড়ি আছে। গ্রামেই আমার জন্ম, বেড়ে ওঠা।

তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে অংশগ্রহণের পর থেকে আজ পর্যন্ত প্রায় ১৭ বছর ধরে পরিবার ও দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে গ্রামের বাড়িতে ঈদ পালন করি। সেখানে সবার সঙ্গে মতবিনিময় হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি সারা বছরই নেতাকর্মীদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখি এবং তাদের সুখে-দুঃখে পাশে থাকি। ফলে আসন্ন নির্বাচন নিয়ে নতুন করে প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন নেই আমার।

মাদারীপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম জাগো নিউজকে বলেন, রমজান শুরুর পর কালকিনি ও মাদারীপুর এলাকার ২০টি ইউনিয়ন এবং একটি পৌরসভায় ইফতার মাহফিলসহ নানা কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, ইফতারের কর্মসূচিতে শুধু দলীয় লোকজন নয়, বাইরের লোকজনকেও এখানে দাওয়াত দেয়ার সুযোগ থাকে। তাদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সুযোগ হয়। আশা করছি ঈদ পর্যন্ত নিজ এলাকায় থাকব।

আওয়ামী লীগের অপর সাংগঠনিক সম্পদক ও জয়পুরহাট- ২ আসন থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, কোনো নির্দেশের অপেক্ষায় বসে থাকার সুযোগ নেই। এলাকার জনগণের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ ছিল এবং বর্তমানেও তা বজায় আছে।

তিনি বলেন, প্রতি সপ্তাহে একবার করে এলাকায় যাই। বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করি, জনগণের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করি। ঈদ সামনে রেখে নেতাকর্মীদের সঙ্গে দফায় দফায় আলোচনা হবে, তাদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় হবে বলেও জানান তিনি।

এফএইচএস/এমএআর/বিএ  

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।