আওয়ামী লীগের তৃণমূল নেতাদের অভিযোগের অন্ত নেই


প্রকাশিত: ০১:৪২ পিএম, ২০ মে ২০১৭

গণভবনে আজ শনিবার অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাদের অভিযোগের অন্ত নেই। দলের মন্ত্রী-এমপিদের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে কোনো কার্পণ্য করেননি তৃণমূলের নেতারা। জামায়াত নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশ, তৃণমূল নেতাদের মতামতের তোয়াক্কা না করে চাপিয়ে দেয়া কমিটি, সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ, মন্ত্রী-এমপিরা স্থানীয় নেতাদের কোণঠাসা করে রাখাসহ অসংখ্য অভিযোগ করেন তৃণমূল নেতারা।

২০তম জাতীয় সম্মেলনের ছয় মাস পর শনিবার অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় জেলার নেতারা স্থানীয় সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর কার্যক্রম নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্ন তোলেন।

তৃণমূল নেতাদের কথা শোনার পর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে বলেন। পেশীশক্তি বাড়াতে জামায়াতের কাউকে দলে ঢোকানোর বিষয়েও হুঁশিয়ার দেন তিনি।

রংপুরের তৃণমূল নেতা রেজাউল করিম রাজু বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব যে বক্তব্য দেন, তাতে ভয় পাওয়ার কারণ আছে। রংপুর জেলার অন্তর্গত বিভিন্ন কমিটি কীভাবে করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আমরা কিছু জানি না। কমিটির ব্যাপারে তৃণমূল নেতাদের মতামতের কোনো গুরুত্ব থাকে না। তৃণমূলের বিভিন্ন কমিটিতে জামায়াত-শিবিরের নেতারা অন্তর্ভুক্ত হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন তিনি। মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করে তিনি বলেন, এমপি-মন্ত্রীদের ঘিরে একটি বলয়ের সৃষ্টি হয়। ওই বলয়ের বাইরে তারা আসতে পারেন না।

রাজশাহী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী বলেন, বিভিন্ন কমিটি নিয়ে স্থানীয় নেতাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব লেগেই আছে। এসব বিষয়ে দলীয় প্রধানের হস্তক্ষেপ করা উচিত। মনে রাখতে হবে উনি (শেখ হাসিনা) প্রধানমন্ত্রী থাকলে আমরা ১৬ কোটি লোক থাকব।

খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনর রশীদ বিদ্রোহী প্রার্থীদের সংগঠন থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে বলেন, এ বিষয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের আরও কঠোর হতে হবে। আমিও যদি শৃঙ্খলার বাইরে যাই, তাহলে আমাকেও চিরতরে বহিষ্কার করে দেন।

দলের ময়মনসিংহ জেলা সভাপতি জহিরুল হক খোকা বলেন, আওয়ামী লীগের রন্ধ্রে রন্ধ্রে খন্দকার মোশতাক ঢুকে গেছে। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার তাগিদ দিয়ে তিনি শেখ হাসিনাকে ইঙ্গিত করে বলেন, অপরাধ করলে বা দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে আপনি যদি মাফ করে দেন তাহলে সে আবার একই অপরাধ করবে। এদের আর মাফ করবেন না। উপজেলা এবং ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে দলীয় সদস্যদের মধ্যে ‘অশুভ প্রতিযোগিতার’ কথা উল্লেখ করে তার অবসান ঘটাতে বলেন তিনি।

সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ময়মনসিংহের এই নেতা বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশের উন্নয়ন করছেন। এমপিরা কী করছেন; তাও দেখতে হবে।

সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বদরউদ্দীন আহমদ কামরান স্থানীয় সংসদ সদস্যদের সমালোচনা করে বলেন, সিলেটে ১৯টি সংসদীয় আসনে এমপিরা বিজয়ী হওয়ার পর নেতাকর্মীদের সঙ্গে বিশাল পার্থক্যের সৃষ্টি হয়। তারা জনগণের কোনো খোঁজখবর নেন না। জনগণ এবং সাধারণ নেতাকর্মীরা এমপিদের কাছে যেতে পারেন না।

চট্টগ্রাম (দক্ষিণ) জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দিন তার এলাকার সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে বলেন, এমপি সাহেব থানা আইন-শৃঙ্খলা কমিটিতে আওয়ামী লীগের সভাপতিকে রাখতে চান না। কেন্দ্রীয় নেতাদের সমালোচনা করে মোসলেম বলেন, অনেক সংগঠনকে দোকান বলা হয়। কেন্দ্রীয় নেতারাই তাদের ১৫/২০ জনকে নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যান।

সবার কথা শোনার পর শেখ হাসিনা সমাপনী বক্তব্যে সব জেলা, উপজেলা ও ইউনিয়নে দলের নিজস্ব কার্যালয় স্থাপনের তাগিদ দিয়ে বলেন, নিজস্ব অফিস থাকা চাই। আপনারা উদ্যোগ নেন, আমরা সহযোগিতা করব। এরপর দলের প্রতিটি সাংগঠনিক জেলার জন্য প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের দেয়া ল্যাপটপ হস্তান্তর করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, দলীয় কার্যালয়গুলো সচল রেখে সরকারের উন্নয়নের প্রচার চালাতে তৃণমূল নেতাদের কাজ করতে হবে। সংসদ সদস্যদের জেলা নেতাদের সঙ্গে মিলে-মিশে কাজ করতে বলেন শেখ হাসিনা।

সদস্য সংগ্রহ অভিযান পরিকল্পিতভাবে করার পরামর্শ দিয়ে দলীয় সভানেত্রী বলেন, এজন্য জেলা কমিটিকে প্রতিটি উপজেলায় একটি করে সাব-কমিটি করে দিতে হবে। মুড়ি বই ফেরত দিতে হবে। আমি এবার হিসাব নেব।

জামায়াত-শিবিরের অনুপ্রবেশ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, পেশীশক্তি বৃদ্ধিতে অনেকেই জামায়াত-শিবির ও বিএনপির নেতাকর্মী এবং সন্ত্রাসীদের দলে টেনেছেন। এরা এসে দলের ক্ষতি করে, খুন করে। দয়া করে দল ভারী করার জন্য এদের টানবেন না। এদের দায় কেউ নেবে না।

মামলা থেকে বাঁচতে এবং উন্নয়ন প্রকল্পের ভাগিদার হতে এরা আওয়ামী লীগে যোগ দিচ্ছে বলে মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দলে যোগদান করে তারা এতটাই শক্তিশালী হয়ে যায় যে, তাদের কনুইয়ের গুতায় আমার নেতাকর্মীরা টিকতে পারে না।

এফএইচএস/জেএইচ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।