সিটি নির্বাচনে সমান সুযোগ পাচ্ছেন না প্রার্থীরা
সিটি নির্বাচনে প্রার্থীরা অভিযোগ করছেন লেভেল প্লেয়িং হচ্ছে না। সব প্রার্থী সমান সুযোগ পাচ্ছেন না। সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা নির্বাচনী আইন লঙ্ঘন করছেন। তারা যেকোনো মূল্যে তাদের সমর্থিত প্রার্থীকে জেতাতে চান। এমন অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব না।
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইনাম আহমেদ চৌধুরী বিবিসি বাংলাদেশ সংলাপের ১১৩তম পর্বের প্যানেল আলোচক হিসেবে এক প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন।
রোববার রাজধানীর টিসিবি অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত বিবিসি সংলাপে প্যানেল আলোচক হিসেবে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী, বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও বাংলাদেশ ফর উইমেন লিডারশিপ-এর নির্বাহী পরিচালক নাসিম ফেরদৌস।
ঢাকা ও চট্টগ্রামে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কি সবার জন্য সমান সুবিধা নিশ্চিত করতে পারছে? ফাতেমা ছিদ্দীকা নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এরশাদের মতো লোক যিনি মন্ত্রী অবস্থায় প্রচারে অংশ নিচ্ছেন। তার বিরুদ্ধে নির্বাচনী আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠছে। নির্বাচন কমিশন এক্ষেত্রে অভিযোগ পেয়েও নিরব রয়েছে। কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না। বলা হচ্ছে সুযোগ দেয়া হচ্ছে। আবার আওয়ামী সমর্থিত প্রার্থীদের বাইরে যারা রয়েছেন আইন অনুযায়ী তারা যে ধরনের নির্বাচনী সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা তা পাচ্ছেন না। অনেককে হুমকিও দেয়া হচ্ছে। একারণে অনেক প্রার্থীর মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্কও কাজ করছে।
প্রার্থীদের ভয়-ভীতির ঊর্ধ্বে রাখার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন. এ নির্বাচনকে বিশ্বাসযোগ্য করা সরকার ও নির্বাচন কমিশনের জন্য চ্যালেঞ্জ। এমন একটি অনুকূল অবস্থার সৃষ্টি করুন যাতে সবাই নির্ভয়ে নির্বাচনী প্রচারণা চালিয়ে যেতে পারে এবং নির্বাচনী আইন যাতে লঙ্ঘিত না হয় সে দিকে খেয়াল রাখা।
বাংলাদেশ ফর উইমেন লিডারশিপ-এর নির্বাহী পরিচালক নাসিম ফেরদৌস বলেন, নির্বাচন কমিশনের আইন রয়েছে। যা বলার তা নির্বাচন কমিশনকেই বলতে হবে। মিডিয়ায় বলে লাভ নেই। মন্ত্রিত্বের বাইরে কেউ যদি নির্বাচনী প্রচারে অংশ নেন তবে দোষের কিছু দেখি না।
এবার কোনো প্রার্থীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হলে নির্বাচন কমিশন কি কোনো পদক্ষেপ নেবে জানতে চাইলে এটা বলা মুশকিল। কারণ অনেক দিন এ ধরনের নির্বাচন হয় না। তবে এবার মনে হচ্ছে একটা নির্বাচন হচ্ছে। জনগণও অনেকটা আগ্রহ দেখাচ্ছে।
এক দর্শক বলেন, সমান সুযোগ পাচ্ছেন না। কারো মামলা তুলে নেয়া হচ্ছে আবার কারো মামলায় জামিনও মিলছে না। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ পরিবেশবাদী আইনজীবী সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে বুঝতে পারছি জনগণের মধ্যে সিটি নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ রয়েছে। তবে নির্বাচন কেন্দ্রীক অনেক অভিযোগ করছে বিরোধী দল।
তিনি বলেন, কে বলছে নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হচ্ছে না। কমিশনে অভিযোগের স্তূপ পড়ে আছে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সে সব অভিযোগে নিষ্পত্তি করছেন না। লিখিত অভিযোগের স্তূপও আছে।
প্রার্থীদের মামলার জামিনের বিষয়ে তিনি বলেন, আইনি প্রক্রিয়ার কথা বলে আমাদের মধ্যে দায়িত্ব এড়ানো এক স্বভাব রয়েছে। আমার কাছে মনে হয় সবাই সমান সুযোগ পাচ্ছে। একজন মেয়র পদপ্রার্থীর দুটি মামলায় জামিন পেলেন না। যে দুটি মামলা খুবই সিলি (সামান্য/ছোট)। মামলা হয়েছে। মামলার প্রক্রিয়াও আপন গতিতে চলবে। তবে সুযোগে মামলা আচমকা সচল হলে সন্দেহ তো থেকেই যায়।
আর বিরোধী দল যেসব অভিযোগ করছে তা কী কারণে বা কেন আমলে নেয়া হচ্ছে না তা যদি নির্বাচন কমিশন ব্যাখ্যা করতে তাহলে বোঝা যেতো কমিশন কাজ করছে। কিন্তু তা তো হচ্ছে না বরং নির্বাচন কমিশনের অনেক কাজের ব্যাখ্যা আমরা বিভিন্ন মন্ত্রী এমপির কাছ থেকে পাচ্ছি। কার প্রার্থীতা থাকবে কি থাকবে না তা মন্ত্রীদের বলার বিষয় নয়, নির্বাচন কমিশনের বলার বিষয়।
এক দর্শক বলেন, প্রার্থীরা জিতলে বলেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে না জিতলে বলেন সুষ্ঠু হয়নি। অজুহাত তুলে কিছু প্রার্থী আরও সমস্যা তৈরি করেন।
নির্বাচনে ১০ শতাংশ না ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে তা বলার জন্য যে নির্বাচন কমিশন ২৪ ঘণ্টা সময় নেয় সেই নির্বাচন কমিশনের অধীনে আমরা কীভাবে নির্ভরশীল হয়ে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বিশ্বাস করবো। নির্বাচনে সব প্রার্থী সমান সুযোগ পাচ্ছেন না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের জন্য রাস্তা পরিষ্কার করা হয়েছে। আড়াইশো অভিযোগ গেছে শুধু সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বিরুদ্ধে। এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রীর আর্ন্তজাতিকবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেন, নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে আলাদা করে চিন্তা করতে হবে। কারণ সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশন আলাদা ও স্বাধীন। এরপরও যদি কমিশন পাওয়ার প্রাকটিস না করে তবে এর দায় সরকারের না।
তিনি বলেন, কয়েকটি দল গত সিটি নির্বাচন ও ইউপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ভোট নিয়ে প্রশ্ন তোলেনি তারাই আবার গত জাতীয় নির্বাচনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না অভিযোগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছিল। নির্বাচনে না গেলে এটা বোঝা মুশকিল।
অভিযোগ তো অভিযোগই। তা সত্য-মিথ্যা দুটোই হতে পারে। নির্বাচন আস্তে আস্তে করে শক্তিশালী অবস্থানে যাচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
জেইউ/বিএ/আরআইপি