ডিজিটাল প্রচারণায় চট্টগ্রামের দুই মেয়র প্রার্থী
দিনরাত প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন বড় দুই দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থীরা। বসে নেই দলীয় নেতা কর্মী থেকে শুরু করে শুভাকাঙ্খিরা। বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে প্রচারণার বড় হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন চট্টগ্রামের হেভিওয়েট দুই মেয়র প্রার্থী।
তাদের লক্ষ্য তরুণ ভোটার। আওয়ামী লীগ সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছিরের রয়েছে প্রায় আটটি ফেইসবুক পেইজ এবং কয়েকটি ইভেন্ট। আর বিএনপি সমর্থিত মেয়র প্রার্থী মনজুর আলমের নামে রয়েছে দুইটি ফেইসবুক পেইজ, টুইটার অ্যাকাউন্ট ও কয়েকটি ইভেন্ট ও গ্রুপ।
বাংলাদেশে সামাজিক যোগাযোগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ মাধ্যম এখন ফেসবুক। তাই বড় দুই দলের হেভিওয়েট নেতারা মাঠের প্রচারণার পাশাপাশি বেছে নিয়েছেন ফেসবুককে। একইভাবে দু`দলের ছাত্র ও যুব নেতারাও খুব জোরালোভাবে বিচরণ করছেন ফেসবুকে। তাদের সবার একটাই টার্গেট তরুণ প্রজন্মের ভোট।
মনজুরের পক্ষে ফেসবুকে প্রচারণা চালাচ্ছেন বিএনপি কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক সাবেক হুইপ সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম। তিনি গত বৃহস্পতিবার ফেইসবুকে লিখেছেন, ‘চসিক নির্বাচনে উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলম দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মনোনীত প্রার্থী। এ প্রার্থীকে বিজয়ী করা এখন আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হয়ে পড়েছে। দেশের সাধারণ মানুষ স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে মত জানানোর জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি শেখ হাসিনা সরকার ভোট ডাকাতি করে অবৈধভাবে ক্ষমতায় বসে আছেন। যা গণতন্ত্র বিরোধী।’
ওয়াহিদুল আলম আরো লিখেন, ‘স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে অবস্থান গ্রহণের এটাই সুযোগ। নির্বাচনও আন্দোলনের একটি অংশ। তাই এখন কোন গ্রুপিং কিংবা অন্তকোন্দল করার সময় নয়। সকল নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করে বিএনপির বিজয় ছিনিয়ে আনতে হবে। এছাড়া বিকল্প কিছু চিন্তা করার সময় নেই।’
২৪ মার্চ থেকে নিজের ফেইসবুক পেইজে প্রতিদিনই নির্বাচন কেন্দ্রিক বক্তব্য পোস্ট করছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য আমিনুল ইসলাম। তিনি আ জ ম নাছিরের পক্ষে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বুধবার রাতে তিনি তার ফেসবুক ওয়ালে লিখেছেন, ‘নির্বাচিত হবার পর থেকে ড্রেনেজ, আবর্জনা ব্যবস্থাপনাসহ নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করার প্রতিটি ক্ষেত্রে মেয়র হিসেবে মনজুর সাহেব পাহাড়সম ব্যর্থ হয়েছেন। মনজুর সাহেবের ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে রেবিয়ে আসতে সৎ, সদালাপি, সৃজনশীল নেতৃত্বের অধিকারী আ জ ম নাছিরের বিকল্প নেই। তাই ২৮ এপ্রিল চট্টগ্রামবাসীকে হাতি প্রতীকে ভোট দেয়ার জন্য আহ্বান জানাচ্ছি।
নির্বাচন ঘিরে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরাও অনলাইনে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। মহানগর ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক এইচ এম রাশেদ খান মঙ্গলবার রাতে তার ফেইসবুকে একটি পোস্টারের মাধ্যমে লিখেছেন, ‘আগামী ২৮ এপ্রিল অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে ব্যালট বিপ্লব ঘটবে। ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন গ্রহসনের নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার আমাদের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তাই ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থীকে কমলা লেবুতে ভোট দিয়ে এ সরকারের প্রতি অনাস্থা জানাতে হবে।’
মহানগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নুরুল আজিম রনি লিখেছেন, ‘বীর মহিউদ্দীন তুলেছে পাল, নাছির উদ্দিন ধরবে হাল। পরিবর্তনের গণকণ্ঠে সুর মিলিয়ে আজ বলতে পারি, হারিয়ে যাওয়া রূপে, লাবণ্যে অনন্যা চাঁটগা নগরীকে আর কোনভাবেই অযোগ্য, বাকশক্তিহীন নেতৃত্বের হাতে তুলে দেয়া যায় না। আগামী ২৮ এপ্রিল চসিক নির্বাচনে আ জ ম নাছির উদ্দীনকে হাতি মার্কায় ভোট দিয়ে উন্নয়নের অভিযাত্রাকে স্বাগত জানাই।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক অর্থ সম্পাদক আবু কায়সার রনি তার স্ট্যাটাসে লিখেছেন, ‘জননেত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে আ জ ম নাছির উদ্দীন ভাইকে হাতি মার্কায় ভোট দিন।’
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন সালাম মিঠু লিখেছেন, ‘গত পাঁচ বছরে মনজুর আলম চট্টগ্রামের যে উন্নয়ন করেছেন, তা দুই দশকেও হয়নি। নগর ভবনকে দুর্নীতির আখড়া না করে তিনি সেটিকে স্বচ্ছ ও সবার নাগালে এনেছেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়া মনজুর আলমকে সমর্থন দিয়েছেন। মনজুরের জয় মানে বেগম জিয়ারই জয়।’
পেইজ প্যানেল এডিটর উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলমের ছেলে সরোয়ার আলম বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তির যুগে এই সুবিধা থেকে আমরাতো আর দূরে থাকতে পারি না। এটি যেহেতু সামাজিক যোগাযোগের একটি মাধ্যম, তাই ফেইসবুকে প্রচারণার মাধ্যমে আমরা জনগণের আরো কাছাকাছি যেতে চাই। বর্তমানে ফেইসবুকে তরুণরাই বেশি থাকছেন। ফলে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে আমরা আমাদের বার্তা তাদের কাছেও পৌঁছে দিতে সক্ষম হচ্ছি।’
তিনি আরো বলেন, আমরা উন্নয়ন আন্দোলনের ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ভোটারদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয়ার পাশাপাশি ভোটারদের মতামত গ্রহণ করছি। ভোটারদের ভয়েস এসএমএস, মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা ও টুইটারে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছি। ইনশাল্লাহ্ এটি তরুণ প্রজম্মের মধ্যে পরিবর্তন আনবে।’ ভোটারদের সরাসরি টেলিফোন করারও পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।
মিডিয়া সেলের সদস্য ও নাগরিক কমিটি মনোনীত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের একান্ত সহকারি মিজানুল ইসলাম বলেন, ‘ফেইসবুকে প্রচারণা মূলত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। ফেইসবুকে দেশে-বিদেশে নাছির ভাইয়ের অসংখ্য ভক্ত রয়েছেন। তারা ফেইসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। নাছির ভাই যুব ও ছাত্র সমাজের নয়নের মণি হিসেবে পরিচিত।’ এছাড়া ভয়েস এসএমএস, ক্ষুদে বার্তাসহ নানাভাবে সরাসরি ভোটারের কাছে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে বলে তিনি জানান।
মিজান আরো বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচারণার পাশাপাশি আমাদের লক্ষ্য অধিকার বঞ্চিত জনগণের পাশে দাঁড়ানো। তাদের সুখ-দুঃখের কথা জানা। তাই নাছির ভাই নগরীর প্রতিটি ভোটারের কাছে যেতে দিন-রাত মানুষের দুয়ারে দুয়ারে যাচ্ছেন।’
এমজেড/পিআর