ব্যক্তি অপরাধের দায় নেবে না আওয়ামী লীগ


প্রকাশিত: ০২:৩৭ এএম, ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭

দলীয় নেতাকর্মীর ব্যক্তিগত স্বার্থকে কেন্দ্র করে সংঘঠিত অপরাধের দায় নেবে না আওয়ামী লীগ। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের বিষয়ে কড়া অবস্থানে ক্ষমতাসীনরা। নেতাদের এমন নেতিবাচক কর্মকাণ্ডে সাধারণ মানুষ যাতে দলের ওপর কোনো প্রকার বিরূপ মনোভাব পোষণ করতে না পারে সেজন্য দোষীদের কড়াভাবে শাসানো হচ্ছে। জড়িতদের বিরুদ্ধে নেয়া হচ্ছে কঠোর ব্যবস্থাও।

ক্ষমতাসীন দলটির নেতাদের মতে, দেশের বিভিন্ন স্থানে দলীয় নেতাকর্মীদের বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সরকারের অর্জনগুলোকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। একইসঙ্গে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ করছে। তাই ব্যক্তি স্বার্থে যার দায় সরকারের বা দলের বহন করা উচিত নয়। সেক্ষেত্রে সাম্প্রতিক সময়ে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গ, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে হীনকাজে জড়িয়ে পড়াদের বিরুদ্ধে কঠোর হওয়ার নীতি অবলম্বন করা হচ্ছে।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে বিতর্কে জড়িয়ে পড়া নেতাদের প্রথমে সাময়িক বহিষ্কার ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির বৈঠকে চূড়ান্ত বহিষ্কারের সিদ্ধান্তের মাধ্যমে এসব কর্মকাণ্ডের দায় এড়াতে চায় আওয়ামী লীগ।

গত ২ ফেব্রুয়ারি সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি বিজয় মাহমুদকে মারধর করার পর দুইপক্ষের সংঘর্ষের মধ্যে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান দৈনিক সমকালের শাহজাদপুর উপজেলা প্রতিনিধি আব্দুল হাকিম শিমুল। এই ঘটনায় পৌর মেয়র হালিমুল হক মীরু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য কে এম নাসির উদ্দিনকে আওয়ামী লীগ থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। ৫ ফেব্রুয়ারি রাতে মেয়র মীরুকে ঢাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ।

৩ ফেব্রুয়ারি চাদঁপুরের হাইমচরে শিক্ষার্থীদের মানবসেতুর ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান নূর হোসেন পাটওয়ারীকে দল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করার ঘোষণা দেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।

এর আগে ১৬ জানুয়ারি টাঙ্গাইলে চাঞ্চল্যকর মুক্তিযোদ্ধা ও আওয়ামী লীগ নেতা ফারুক আহম্মেদ হত্যা মামলার প্রধান আসামি দলীয় সংসদ সদস্য আমানুর রহমান খান রানা ও তার তিন ভাই জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র শহিদুর রহমান খান মুক্তি, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি সানিয়াত খান বাপ্পা এবং টাঙ্গাইল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রেসিডেন্ট ও আওয়ামী লীগের সদস্য জাহিদুর রহমান খান কাকনকে বহিষ্কার করা হয়।
 
গত বছরের নভেম্বরের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের বাড়িঘর ও উপাসনালয় দুই দফা হামলার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে স্থানীয় আওয়ামী লীগের তিন নেতাকে বহিষ্কার করা হয়। এরা হলেন নাসিরনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সম্পাদক আবুল হাসেম, হরিপুর ইউনিয়ন সভাপতি ফারুক মিয়া ও চাপরতলা ইউনিয়ন সভাপতি সুরুজ আলী।

গত বছরের ১০ নভেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে হকার উচ্ছেদের সময় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাব্বির হোসেনের অস্ত্রবাজির ছবি পত্রিকায় প্রকাশের পর তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করে ছাত্রলীগ।

বর্তমান সরকারের সময় ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়ার অভিযোগে আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে মন্ত্রিপরিষদ ও দলের সভাপতিমণ্ডলী থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় এবং দলের প্রাথমিক সদস্য পদ থেকেও বহিষ্কার করা হয়েছিল।

সম্প্রতি দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বেশ কয়েকজন সংসদ সদস্যকে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ডেকে সংশোধন হয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। সংশোধন না হলে আগামী নির্বাচনে তাদের মনোনয়ন দেয়া হবে না বলেও সর্তক করেছেন।

নড়াইল-১ আসনের সংসদ সদস্য কবিরুল হক মুক্তি, চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের এমপি আব্দুল ওদুদসহ আরও বেশ কয়েকজনকে সতর্ক করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এক সদস্য বলেন, আগামী নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ পাওয়া মাত্র যাচাই-বাচাই করে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। অপরাধে যুক্ত নেতা-কর্মীর দায়ভার দল নেবে না। এ ধারা নির্বাচন পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।

দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুর রহমান বলেন, ব্যক্তিগত পর্যায়ের হিসেব-নিকেশের গোলমাল-গোলযোগের দায়ভার দল কোনো অবস্থাতে নেবে না। এই ধরনের কোনো কর্মকাণ্ডে দল ক্ষতিগ্রস্ত হলে তাদের বিষয়ে সাংগঠনিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এইউএ/জেডএ/পিআর

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।