ইসি গঠনে তরিকত ফেডারেশনের ১৯ প্রস্তাব


প্রকাশিত: ০২:৪৬ পিএম, ০৩ জানুয়ারি ২০১৭

নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও জনসম্পৃক্ত নির্বাচন সম্পন্ন করতে প্রাণবন্ত, স্বাধীন, সাহসী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশন গঠনে তিন ক্যাটাগরিতে মোট ১৯টি প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন।

মঙ্গলবার বিকেলে বঙ্গভবনে নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের কাছে এসব প্রস্তাব তুলে ধরেছে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের এ শরিক দল।

দলের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর নেতৃত্বে ১০ সদস্যের প্রতিনিধি দল রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সংলাপে অংশ নেয়। আধা ঘণ্টার আলোচনায় দলের মহাসচিব এমএ আউয়াল সার্চ কমিটি ও ইসি গঠন নিয়ে ১৯ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সার্চ কমিটি
১. মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অবসরপ্রাপ্ত একজন প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, যিনি বা যারা অবসরগ্রহণের পর লাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠানে যোগ দেননি।

২. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অবসরপ্রাপ্ত সাবেক সচিব, ইতোমধ্যে যার নিরপেক্ষতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন ওঠেনি এবং যিনি অবসরগ্রহণের পর লাভজনক কোনো প্রতিষ্ঠানে কাজ করেননি।

৩. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বা বিভাগীয় প্রধান বা সর্বজন শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক। যিনি একাধারে শিক্ষিত, পণ্ডিত এবং সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত নন।

৪. মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পেশাগত জীবনে দল নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং প্রকাশ্য রাজনীতিতে কখনও সম্পৃক্ত ছিলেন না এমন পঞ্চাশোর্ধ্ব সাংবাদিক, যিনি বর্তমানেও পেশা জীবনে ক্রিয়াশীল। এছাড়া সরাসরি কোনো রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত নন।

৫. মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী অবসরপ্রাপ্ত নারী অধ্যাপক শিক্ষক, যিনি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বা কলেজে পড়িয়েছেন বা অবসরপ্রাপ্ত (যুগ্ম সচিব পদমর্যাদাসম্পন্ন) নারী কর্মকর্তা বা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী দল নিরপেক্ষ একজন কবি।

এই সার্চ কমিটি বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই সম্ভাব্য কমিশনারদের নাম প্রস্তাব করবে। লিখিত এ প্রস্তাবে কেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের যুক্তিযুক্ত মনে করা হবে, এর ব্যাখ্যা থাকা বাঞ্ছনীয়। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন মনে করে, নির্বাচন কমিশনে যারা নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন তারা রাষ্ট্রের শান্তি, শৃঙ্খলা, ভবিষ্যৎ, অর্থনীতি ও সর্বোপরি মানুষের ওপর ভরসা রেখে কাজ করবেন।

নির্বাচন কমিশনারদের ক্ষেত্রে দলটির প্রস্তাব
১. সার্চ কমিটি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক করে কমিশনের পাঁচজনের বিপরীতে দুজন করে নাম সংগ্রহ করবেন।

২. রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অভিন্ন নামগুলো বিবরণসহ রাষ্ট্রপতিকে সুপারিশ করবেন। এক্ষেত্রে সুপারিশের পর রাষ্ট্রপতি ১১৮ এর ১ অনুচ্ছেদের ক্ষমতাবলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।

৩. প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের ক্ষেত্রে সর্বজন শ্রদ্ধেয়, সৎ, মেধাবী, দক্ষ, সাহসী, প্রাজ্ঞ এবং নৈতিকতা, ব্যক্তিত্ব ও কর্মঅভিজ্ঞতা সম্পন্ন, সকল বিচারে দল-নিরপেক্ষ এবং অবিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের একজন ব্যক্তি প্রধান নির্বাচন কমিশনার হবেন। সাবেক অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি, বিচারপতি বা বাংলাদেশ সরকারের একজন সচিব যিনি অবসর গ্রহণের পর সরকারের কোন লাভজনক পদে নিয়োজিত নেই বা ছিলেন না, অথবা একজন বিশিষ্ট নাগরিক-প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত হতে পারবেন। এক্ষেত্রে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস ও অবস্থান পরিষ্কার থাকতে হবে।

৪. ন্যূনতম ব্রিগেডিয়ার জেনারেল পদমর্যাদা সম্পন্ন অবসরপ্রাপ্ত সামরিক কর্মকর্তা, ন্যূনতম যুগ্ম-সচিব পদমর্যাদার অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী, প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন শিক্ষাবিদ এবং সর্বজন শ্রদ্ধেয় বিশিষ্ট নাগরিক ও দল নিরপেক্ষ-সৎ কর্মজীবী সাংবাদিকদের মধ্য হতে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। এ ক্ষেত্রে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি বিশ্বাস ও অবস্থান পরিষ্কার থাকতে হবে।

৫. মুক্তিযোদ্ধা বা মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের রাজনৈতিক দলে সম্পৃক্ত নন অবসরপ্রাপ্ত সরকারি নারী কর্মকর্তা, যিনি যুগ্ম সচিব পদমর্যাদায় নিযুক্ত ছিলেন।

৬. নির্বাচন কমিশন একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমের উপর দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসনের ভিত্তি অনেকটাই নির্ভর করে। সেক্ষেত্রে প্রথমেই নির্বাচন কমিশনের পৃথক ও স্বাধীন সচিবালয় করতে হবে। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানের ৭৯ অনুচ্ছেদে জাতীয় সংসদের নিজস্ব সচিবালয় থাকবে বলা আছে, পাশাপাশি বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের জন্যও নিজস্ব সচিবালয় গঠন করতে হবে।

৭. আর্থিক স্বাধীনতা সুনিশ্চিত করতে হবে।

৮. নতুনভাবে গঠিত নির্বাচন কমিশনকে এর নিজস্ব সচিবালয় ও মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের এবং সকল পর্যায়ের নির্বাচনী কর্মকর্তা অর্থাৎ রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, আপিল কর্তৃপক্ষ, প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্মকর্তা, রেজিস্ট্রেশন অফিসার, সহকারী রেজিস্ট্রেশন অফিসার, নির্বাচন কার্যে নিয়োজিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে।

৯. ভোটার তালিকা হালনাগাদ করতে হবে। বিভিন্ন সময়ে বাদপড়া ভোটারদের কেবলমাত্র জন্মনিবন্ধন দিয়েই ভোটার করার সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।

১০. ভোটার আইডি কার্ড হারিয়ে গেলে বিনিময় মূল্যের মাধ্যমে মাত্র একদিনের মধ্যে নতুন কার্ড সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে।
 
১১. প্রবাসীদের ভোটার হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।

১২. নির্বাচন কমিশন গঠনে সংবিধানে আইন করার কথা থাকলেও এ বিষয়টি দ্রুত নিষ্পত্তি করা। সেক্ষেত্রে পরবর্তী নির্বাচনের পূর্বেই আইন পাস করার উদ্যোগ গ্রহণ করা।
 
১৩. নির্বাচন কমিশনে জরুরি ভিত্তিতে মিডিয়া সেল গঠন করতে হবে। এই মিডিয়া সেলে ন্যূনতম ৩ জন নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন। এর মধ্যে দু`জন প্রফেশনাল সাংবাদিক অন্তত ৫ বছরের চুক্তিতে এবং একজন নির্বাচন কমিশনের নিজস্ব নিয়মে সাচিবিক দায়িত্ব পালন করবেন।

১৪. নির্বাচনকালীন সময়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন নিজস্ব কর্মকর্তাদের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২ (জচঙ) এর ৮৯(এ) অনুচ্ছেদের বিধান অনুসারে বিশেষ আদেশের মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেয়াল ক্ষমতা প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

এইউএ/আরএস/এএইচ/আরআইপি

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।