আইনজীবীদের দিয়ে আন্দোলন শুরু করতে চায় বিএনপি
নতুন করে আন্দোলনের কর্মসূচি চূড়ান্ত করা না হলেও বিএনপি এ ক্ষেত্রে কিছু কৌশল নিয়ে এগোনোর চিন্তা করছে। নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার পদ্ধতি পুনর্বহালের লক্ষ্যে সরকারকে সংলাপে বসানোর জন্য কিভাবে চাপ সৃষ্টি করা যায় তা নিয়ে দল ও জোটের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা চলছে। এ লক্ষ্যে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের প্রথমে মাঠে নামানো হতে পারে বলে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সরকারবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত বছরের মতো এবারও ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ বা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ ধরনের কর্মসূচি দেওয়া হতে পারে।
বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক নেতা বলেন, ঈদের আমেজ এখনো কাটেনি। এ ছাড়া দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য সিঙ্গাপুর গেছেন। তিনি দেশে ফেরার পর আগামী সপ্তাহে সম্ভবত খালেদা জিয়ার সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হবে। বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক দলের নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক হবে। ওই সব বৈঠকে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করবেন নেতারা। তবে প্রথম দিকে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগের কথা ভাবছে বিএনপি। এসব কর্মসূচিতে সরকার বাধা দিলে তাৎক্ষণিক কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, সরকারবিরোধী জোরালো আন্দোলন শুরু করতে বিএনপির সিনিয়র নেতারা অনানুষ্ঠানিকভাবে কথা বলছেন দলের সমর্থক বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে। এ ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতাদের। কারণ বিএনপি প্রথম ধাপে ঢাকাসহ সারা দেশে আইনজীবী সমিতির নেতাদের আন্দোলনে নামাতে চায়।
বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, রাজধানীসহ সারা দেশে বেশির ভাগ আইনজীবী সমিতির নেতৃত্বে রয়েছে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ও ঢাকা আইনজীবী সমিতির বেশির ভাগ পদে রয়েছেন বিএনপির আইনজীবী নেতারা। এমনকি আইনজীবীদের সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ বার কাউন্সিলেরও ১৪টি পদের মধ্যে ১১টিতেই রয়েছেন জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা। এ অবস্থায় এ ফোরামের মাধ্যমে সরকারবিরোধী আন্দোলন শুরু করার লক্ষ্যে আইনজীবীদের সংগঠিত করার চেষ্টা চলছে।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির নীতিনির্ধারক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, এবারের আন্দোলন বিভিন্ন কৌশলে হবে। এ কৌশল আগেভাগেই জানানো ঠিক হবে না। দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক ও জোটের বৈঠকে আলোচনার পর সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হবে। আইনজীবীদের আন্দোলনের কাজে লাগানো হবে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, আইনজীবীদের বিভিন্ন সংগঠন রয়েছে। বেশির ভাগ সংগঠনের নির্বাচিত নেতা বিএনপির আইনজীবী। ওই আইনজীবীদের সঙ্গেও আলোচনা হচ্ছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতারা চান প্রথমে আইনজীবীদের আন্দোলনে নামাতে।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেন, যেকোনো আন্দোলন শুরু হলে প্রথমে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হয় না। পর্যায়ক্রমে আন্দোলনের কর্মসূচি দেওয়া হয়ে থাকে। তিনি বলেন, ‘আমাদের স্থায়ী কমিটি আছে, জোটের শরিক দল আছে, বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠন রয়েছে। সব সংগঠনের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষেই কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’ কী ধরনের কর্মসূচি আসতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘প্রথমে সভা-সমাবেশ ও গণসংযোগ দেওয়া হবে। আন্দোলনকে ধাপে ধাপে এগিয়ে নেওয়া হবে। এই আন্দোলনের সঙ্গে পেশাজীবীরা থাকবেন। আইনজীবী সংগঠনের নেতাদের সঙ্গেও কথাবার্তা চলছে। বৈঠকের পর চূড়ান্ত কর্মসূচি দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আইনজীবীরা সব সময় গণতন্ত্র্রের আন্দোলন করে আসছেন। ভবিষ্যতে যদি গণতন্ত্রের জন্য গণ-আন্দোলন শুরু হয় সেখানেও আইনজীবীদের বলিষ্ঠ ভূমিকা থাকবে। কর্মসূচি কবে শুরু হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের আইনজীবী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে মাঝেমধ্যেই আলোচনা হচ্ছে। আরো বৈঠক হবে। তবে সব কিছু নির্ভর করছে কেন্দ্রীয় বিএনপি কী সিদ্ধান্ত নেয়, এর ওপর।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহ বলেন, বর্তমানে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব দেশের বাইরে আছেন। তিনি ফিরে আসার পর দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক হতে পারে। বৈঠকে সরকারবিরোধী আন্দোলনের পর্যায়ক্রমিক কর্মসূচি নেওয়া হবে। তিনি বলেন, ‘শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিতে চাই। সরকার বাধা দিলে কঠোর আন্দোলন হবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর কমিটির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক আব্দুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘আনুষ্ঠানিক বৈঠক না হলেও আমরা যে আলাপ-আলোচনা করছি না, তা কিন্তু নয়। আলোচনা নিয়মিতই হচ্ছে। ঈদের আমেজ এখনো কাটেনি। আরো কিছুদিন যাক, আমাদের বৈঠক হবে। বৈঠকে ঢাকা মহানগর কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ছাড়াও আন্দোলনের বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে।’ কী ধরনের আন্দোলন হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এবার বিভিন্ন কৌশলে আন্দোলন হবে।
গত বছর ২৯ ডিসেম্বর ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ অর্থাৎ ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’ নামে কর্মসূচি দিয়েছিল বিএনপি। পরে নির্বাচন প্রতিহত করারও ডাক দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই কর্মসূচি ও আহ্বান সফল করতে পারেনি বিএনপি। তখন বলা হয়েছিল, ঢাকা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির ব্যর্থতার কারণে বিএনপির আন্দোলন সফল হয়নি। এবার আন্দোলন শুরু করার আগেই ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। সূত্র: কালের কন্ঠ