আ.লীগ কেন্দ্রীয় কার্যালয়: কেউ সিদ্ধান্তহীনতায়, কেউ পায়নি কার্যালয়


প্রকাশিত: ০৫:২৩ পিএম, ১৪ জুলাই ২০১৬

শুক্রবার (১৫ জুলাই) বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে থাকা অফিস ছেড়ে দিতে হচ্ছে সবাইকে। কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এই ভবনটিতে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, কৃষক লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ, তাঁতী লীগ, ছাত্রলীগ অফিস রয়েছে। নির্দিষ্ট কোনো কক্ষ না থাকায় সপ্তাহে একদিন এখানে অফিস করেন মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ।

কেন্দ্রীয় কার্যালয় ছেড়ে দিলেও এখন সিদ্ধান্তহীনতায় ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারা। ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বেশ কিছু সংগঠন অস্থায়ীভাবে অফিস কার্যক্রম পরিচালনার সিদ্ধান্ত নিলেও এখনো অফিস পায়নি ছাত্রলীগ।

আওয়ামী লীগের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের আশেপাশেই নতুন অফিস খোঁজা হচ্ছে। নেতারা চাচ্ছেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর-দক্ষিণসহ অঙ্গ, সহযোগী ও ভাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলো মিলে একইস্থানে অফিস নিতে। আর অফিস পাওয়ার আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমণ্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অস্থায়ীভাবে অফিস কার্যক্রম পরিচালনার কথাও ভাবছেন তারা।

জানা গেছে, বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মঙ্গোলিয়া সফরের আগে তার সরকারি বাসভবন গণভবনে যান আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক, ত্রাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, কার্যনির্বাহী সদস্য মির্জা আজম, এস এম কামাল হোসেন, যুবলীগ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুন অর রশীদ, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি আলহাজ্ব মোল্লা আবু কাওসার, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ, যুব মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমা আক্তার, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপিকা অপু উকিল, ছাত্রলীগ সভাপতি সাইফুর রহমান সোহাগ, সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন প্রমুখ।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চান নগর আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য সংগঠনগুলো একইস্থানে অফিস ভাড়া নিয়ে থাকুক। তিনি ইতিমধ্যে সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতাদের এ বিষয়ে অবহিত করছেন। গতকাল প্রধানমন্ত্রীকে গণভবনে বিদায় জানাতে যাওয়া সহযোগী সংগঠনের নেতারা সেখানে নতুন অফিস নিয়ে আলোচনা করেছেন বলেও সূত্রে জানা গেছে। সেখানে উপস্থিত দুই নেতা জানান, প্রধানমন্ত্রী চান আমরা সকলে একই অফিসে থাকি। সে বিষয়টি মাথায় রেখেই নতুন অফিসে খোঁজা হচ্ছে।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ জাগো নিউজকে বলেন, আমরা অফিস দেখছি। এখন পর্যন্ত কোথায় স্থানান্তর করবো বলতে পারছি না। অফিস থেকে মালামাল নামিয়ে রাখছি এখন। তবে সূত্রে জানা গেছে, তারা ধানমণ্ডির-৩ অফিসে আপাতত অস্থায়ী অফিস করতে পারেন।

স্বেচ্চাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ দেবনাথ বলেন, নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমাদেরকে বলেছেন- ধানমণ্ডি কার্যালয়ে আমাদের অফিস করতে। এখন থেকে আমাদের অফিসের কার্যক্রম সেখান থেকে পরিচালনা হবে। তবে পরে কোথাও ভালো অফিস পেলে সেখানে চলে যাবে সংগঠনের অফিস।

যুবলীগের কেন্দ্রীয় গ্রন্থণা ও প্রকাশনা-বিষয়ক সম্পাদক ইকবাল মাহমুদ বাবলু জাগো নিউজকে বলেন, ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশে আমরা নতুন একটা অফিস নিয়েছি। এখন থেকে সেখানেই আমাদের অফিসিয়াল কার্যক্রম চলবে।

যুব মহিলা লীগ ধানমণ্ডি-৩ এ আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ের তিন তলায় একটি কক্ষে সাময়িকভাবে সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করবে বলে জানান সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অপু উকিল।

ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসাইন বলেন, এখন পর্যন্ত অফিস পাইনি। তবে গুলিস্তানের আশেপাশে কোথাও অফিস নেয়ার চিন্তা-ভাবনা করছি।

গত ২৬ এপ্রিল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলটির এক যৌথসভায় বলেন, আগামী ৩০ মে তারিখের মধ্যে ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের ভবনটি খালি করা হবে। আগামী জুন মাসে পুরাতন ভবনটি ভেঙে নতুন ভবনের নির্মাণ কাজ শুরু হবে। দুই বছরের মধ্যে নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে তারা আশা করছেন।

এরপর গত ১০ জুলাই দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আগামী ১৫ জুলাইয়ের মধ্যে খালি করার নির্দেশ দিয়েছেন। এরপর থেকে সব সংগঠনের মালামাল নামাতে শুরু করেন।

২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে অবস্থিত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয় ভেঙে সেখানে গড়ে তোলা হবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন বহুতল ভবন। ১০তলা এ ভবনে থাকবে ৬-৭তলা পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের কার্যালয়। থাকবে কনফারেন্স হল, সেমিনার রুম, ডিজিটাল লাইব্রেরি, ভিআইপি লাউঞ্জ, ক্যান্টিন ও সাংবাদিক লাউঞ্জ।

দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৬ এপ্রিল নতুন কার্যালয়ের নতুন ভবনের নকশা অনুমোদন দিয়েছেন। ভবনটির নির্মাণের মূল দায়িত্ব দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেনকে।

জানা গেছে, কোনো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ না দিয়ে নিজস্ব তত্ত্বাবধানে ভবনটি নির্মাণ করা হবে। কোনো ধরনের অনুদান না নিয়ে সম্পূর্ণ দলের ফান্ডে ভবন নির্মাণ করা হবে।

আওয়ামী লীগের পুরনো অফিস ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের চারতলা ভবনটি গত ১৯৯৬-২০০১ মেয়াদে লিজ নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হলেও সেটা সেই সময় শেষ করা যায়নি। পরে বর্তমান সরকারের আগের মেয়াদে ওই লিজ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আওয়ামী লীগ। পাশে আরো কিছু জায়গাও দলীয় ফান্ড থেকে ক্রয় করা হয়েছে।

লিজ ও জমি ক্রয় প্রক্রিয়া শেষ হলে ২০১১ সালের জানুয়ারিতে নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় সরকারি দল। পরে নকশা প্রস্তুত ও সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতরের অনুমোদনের পর এখন বাস্তবায়নের দিকে যাচ্ছেন তারা।

১৯৪৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে আওয়ামী লীগের অফিস স্থানান্তরের ঘটনা ঘটেছে বেশ কয়েকবার। পুরান ঢাকার কে এম দাশ লেনের রোজ গার্ডেনে ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন আত্মপ্রকাশ করে আওয়ামী লীগ। ১৯৫৩ সাল থেকে ৯ কানকুন বাড়ি লেনে অস্থায়ী একটি অফিস ব্যবহার করা হতো।

১৯৫৬ সালে পুরান ঢাকার ৫৬ সিমসন রোডে দলের অফিস স্থাপন করা হয়। ১৯৬৪ সালের ২৫ জানুয়ারি আওয়ামী লীগকে পুনরুজ্জীবিত করার পর এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৯১, নবাবপুর রোডে দলের অফিস নেন।

এর কিছুদিন পর অস্থায়ীভাবে সদরঘাটের রূপমহল সিনেমা হলের গলিতে কিছুদিন বসেন নেতারা। পরে পুরানা পল্টনে দু’টি স্থানে দীর্ঘদিন দলের অফিস ছিল। স্বাধীনতা-উত্তর ১২২, সার্কিট হাউস রোডে কিছুদিনের জন্য আওয়ামী লীগের অফিস ছিল। পর আবারো পুরান ঢাকার নবাবপুরে অফিস স্থানান্তরিত হয়। শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের সভাপতি হওয়ার পর ২৩ বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ের বর্তমান অফিসটি ভাড়া নেয়া হয়।

এইউএ/বিএ

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।