খালেদার ঐক্যের আহ্বান প্রত্যাখ্যান আওয়ামী লীগের
রাজধানীর গুলশানের হলি আর্টিসান রেস্টুরেন্টে জঙ্গি হামলার ঘটনায় দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাসবিরোধী ঐক্য গড়ে তুলতে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জাতীয় ঐক্যের আহ্বান প্রত্যাখ্যান করেছে আওয়ামী লীগ।
রোববার বিকেলে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে বিএনপি নেত্রীর বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
তিনি বলেন, অবশ্যই জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে। এটা আমরাও মনে করি। কিন্তু জাতীয় ঐক্য হবে কার সঙ্গে? যিনি (খালেদা) জঙ্গি লালন করছেন, পৃষ্ঠপোষকতা করছেন, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করছেন তার সঙ্গে? তার সঙ্গে কীভাবে জাতীয় ঐক্য সম্ভব?
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, উনি আগে যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ করুক। অতীত ভুলের জন্য অনুশোচনার বহিঃপ্রকাশ করুক। তাহলে ওনার সঙ্গে জনগণের ঐক্য হতে পারে। আমাদেরও ঐক্য হতে পারে। কারণ জাতীয় ঐক্য আমরাও চাই।
হানিফ বলেন, আজকে খালেদা জিয়া বেশ কিছু ভাল কথা বলেছেন। কিন্তু ওই বক্তব্য শুনে দেশবাসীর সঙ্গে আমরাও অবাক হয়েছি। কারণ তিনি বলেছেন কোনো বিবেকবান মানুষ এ সকল হত্যাকাণ্ড ঘটাতে পারে না। তার এই কথাগুলো সুন্দর ও মূল্যবান। কিন্তু এসব কথা বলছেনটা কে? যিনি এক বছর আগেও সরকারবিরোধী হরতাল ধর্মঘটের ডাক দিয়ে পেট্রলবোমা ও আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে ২২১ জন মানুষকে হত্যা করেছেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ সেগুলো ভুলে যায়নি। আর এখন উনি এসব বলছেন কিসের আশায়? উনি এখন মনে করেন, মানুষ হত্যা কোনো বিবেকমান মানুষের কর্মকাণ্ড নয়। তাহলে তখন উনি মানুষ হত্যা করেছিলেন কিসের উপর ভিত্তি করে? যেটা জাতির কাছে এখনো প্রশ্ন থেকে গেছে?
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে হানিফ বলেন, বাংলাদেশে সকল সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের উৎস হচ্ছে বেগম জিয়া। আমরা তার সময়ে বাংলা ভাইয়ের উত্থান দেখেছি। একই দিনে একই সঙ্গে ৬৩ জেলায় ৫০০ বোমা হামলার ঘটনার মধ্য দিয়ে দেশে জঙ্গি সন্ত্রাসীর উত্থান দেখেছি। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা দেখেছি। সাবেক অর্থমন্ত্রী এএমএস কিবরিয়াসহ আহসানউল্লাহ মাস্টারকেও হত্যা করা হয়েছিল তারই সময়ে।
এই সবগুলো ঘটনাই হয়েছিল খালেদা জিয়ার সময়ে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, এ ঘটনাগুলোর ব্যাপারে খালেদা জিয়া এখন পর্যন্ত অনুতপ্ত বা অনুশোচনা প্রকাশ করেননি।
এমনকি মাদারীপুরে স্কুলশিক্ষক হত্যাকাণ্ড চেষ্টায় জড়িত সন্ত্রাসী ফাহিমের পক্ষ নিয়ে আরেকবার প্রমাণ করেছেন তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের পক্ষে।
‘কে ক্ষমতায় থাকবে, কে ক্ষমতায় যাবে, সেটা আজ বড় কথা নয়। কোনো অর্জনই টিকবে না যদি আমরা সন্ত্রাস দমন করতে না পারি। এই আতঙ্ক, এই হত্যালীলা থামাতে হবে’ বিএনপি নেত্রীর এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেন হানিফ।
তিনি বলেন, সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিগত সময়ের দুর্নীতিগ্রস্ত ও অকার্যকর বাংলাদেশের তকমা থেকে বাংলাদেশকে বের করে এনে গত সাত বছরে দেশকে ‘আশার আলোর’ দেশে নিয়ে গেছেন। বাংলাদেশের যে উন্নয়ন হচ্ছে, এটা উজ্জ্বল ভবিষ্যতের আশা দেখাচ্ছে।
কিন্তু সেই প্রচেষ্টাকে বাধাগ্রস্ত করছে কে? খালেদা জিয়া নিজেই। তিনি ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জনগণকে বিপর্যস্ত করতে একের পর এক ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।
খালেদা জিয়ার বক্তব্যের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, খালেদা জিয়ার এই আহ্বান সকলের কাছেই অবাক করার বিষয় হয়েছে। হ্যাঁ, যদি এই কথাগুলো খালেদা জিয়ার অন্তরের কথা হয়, তাহলে তিনি অতীত উপলব্ধি নিয়ে আগামীর পথচলা শুরু করবেন।
হানিফ বলেন, খালেদা জিয়া যদি অতীত কর্মকাণ্ডের উপর অনুতপ্ত হয়ে এই কথাগুলো বলে থাকেন, তাহলে জাতি আশাবাদী হবে। আর যদি যুদ্ধাপরাধী জঙ্গি ও সন্ত্রাসীদের সঙ্গ ত্যাগ না করে এমন সুন্দর সুন্দর কথারমালা দিয়ে তিনি পুনরায় জাতির সঙ্গে প্রতারণা করছেন।
এক প্রশ্নের জবাবে হানিফ আরও বলেন, উনার কথার মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি আছে। উনি কখন কি বলেন ঠিক নেই। উনার কথা পরস্পরবিরোধী।
আরেক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, বাংলাদেশে আইএস ও আল কায়েদা বলে কিছু নেই। এদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী আইএস বা আল কায়েদার সম্পর্কও নাই। এরা সকলে জামায়াতের বিভিন্ন সংগঠনের নামে সরকারকে বিব্রত করা এবং বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানোর ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের আহমদ হোসেন খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ফরিদুরনাহার লাইলী, আবদুস সোবহান গোলাপ, বদিউজ্জামান ভুঁইয়া ডাবলু, আবদুস সাত্তার, এস এম কামাল প্রমুখ।
এইউএ/একে/এমএস