পরিস্থিতি উত্তরণে সরকারের ইচ্ছা নিয়ে জনমনে বড় প্রশ্ন


প্রকাশিত: ১২:২৯ পিএম, ০৭ জুন ২০১৬
ফাইল ছবি

দেশব্যাপী রক্তক্ষরণের বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের আদৌ কোনো ইচ্ছা সরকারের আছে কী না তা নিয়ে জনমনে এক বড় ধরণের প্রশ্ন দেখা দিয়েছে বলে মনে করছে বিএনপি। দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক বিবৃতিতে এ দাবি করেছেন।

মঙ্গলবার ভোরে ঝিনাইদহের করাতিপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বী পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে গলাকেটে হত্যার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ এবং শোক প্রকাশ করে গণমাধ্যমে এ বিবৃতি দেন তিনি।

দলের সহ-দফতর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীনের সই করা বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘ভোটারবিহীন সরকারের নিস্ক্রিয়তায় জঙ্গিবাদী উগ্রপন্থীরা মনে হয় দেশের কর্তৃত্ব গ্রহণ করেছে। দেশব্যাপী চলছে বেছে বেছে হত্যাকাণ্ড। আর এই হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছেন ভিন্ন মতাবলম্বী ব্লগার, ধর্মগুরু, পুরোহিত, যাযক, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান সম্প্রদায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, বিদেশি নাগরিক, মসজিদের ঈমাম-মোয়াজ্জিন, পীর ও পীরের শিষ্য, প্রকাশক, পুলিশ সদস্য ও পুলিশ সদস্যের পরিবার।

গত রোববার চট্টগ্রামে পুলিশ সুপারের স্ত্রী মাহমুদা খানমকে হত্যা ঘৃন্য ও কাপুরোষোচিত অমানবিক কাজ। নাটোরের খ্রিষ্টান মুদী দোকানি দানিয়েল গোমেজকে হত্যা নজিরবিহীন এক নৃশংসতা। এরই ধারাবাহিকতায় ঝিনাইদহের করাতিপাড়ায় সনাতন ধর্মাবলম্বী পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে গলাকেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা।’

তিনি বলেন, ‘জঙ্গিবাদের মরণঘাতি আঘাতের পৌণঃপুনিকতা এখন অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেছে। এই হত্যাকাণ্ডগুলোর এখন কোনো বিরতি নেই। প্রায় প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো জনপদে দানবীয় আক্রমণের শিকার হচ্ছেন কেউ না কেউ।

দুর্বৃত্তদের কর্তৃক দেশে একের পর এক ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন ধর্মসম্প্রদায়ের মানুষকে হত্যার ঘটনায় দেশবাসী আজ হাড়হিম করা আতঙ্কের মধ্যে দিনাতিপাত করছে। বাড়ির বাইরে বেরুতেই গা ছমছম করে। ভীত সন্ত্রস্ত মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

দেশের মানুষের নিরাপত্তাহীনতায় ভ্রুক্ষেপ না করে সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা তোতা পাখির মতো বুলি আওড়িয়ে যাচ্ছেন যে, দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি খুবই আশাব্যঞ্জক, দেশে কোন জঙ্গিবাদ নেই।

কোনো কোনো মন্ত্রী-নেতারা বলেন, দেশে জঙ্গি নেই, এই শব্দটি নাকি বায়বীয়। সংঘটিত হত্যাকাণ্ডগুলোর পর সরকারদলীয় নেতা, মন্ত্রী ও এমপিদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য-বিবৃতি এবং বিরোধী দলের ওপর দায় চাপানোতে জঙ্গিরা আরো বেশি উৎসাহিত হচ্ছে। সুতরাং সংগঠিত জঙ্গিরা দেশের মধ্যেই একের পর এক অভয়ারণ্য তৈরি করে যাচ্ছে এবং তাদের অস্তিত্ব ধ্বংস হওয়ার চেয়ে আরো বেশি পুষ্টিলাভ করছে।’
 
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার বিবৃতিতে বলেন, ‘গত কয়েক বছরে চিন্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে অগ্রাহ্য, মানুষের ভোটাধিকার হরণ এবং বিরোধী দলকে পর্যদুস্ত করার লক্ষ্যে গণতন্ত্রকে রক্তাক্ত করতে গিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে সরকার নিজের ইচ্ছা পূরণে এতো বেশি ব্যবহার করেছে যে, এই সকল বাহিনী গণতন্ত্র, মানবতা, সভ্যতার শত্রু দানবীয় জঙ্গিগোষ্ঠীকে মোকাবেলা করার মতো সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে। যার কারণে বেশ কয়েক মাস ধরে জঙ্গিদের নারকীয় কর্মকাণ্ডের কোনোই সুরাহা করতে পারেনি আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গিবাদ নির্মূলে প্রকট দুর্বলতার জন্যই এখন আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যদের দিকেও ধেয়ে এসেছে সংগঠিত জঙ্গিচক্র। যার হৃদয়বিদারক ও মর্মান্তিক পরিণতি দেশবাসীকে দেখতে হলো গত পরশু দিন চট্টগ্রামে।

জঙ্গিবাদ দমনে সরকার এখন পর্যন্ত কোনো বিশ্বাসযোগ্য অগ্রগতি সাধন করতে পারেনি। এদের নিয়ন্ত্রণে সরকারের চরম ব্যর্থতার কারণেই সকলের মধ্যেই আতঙ্ক ও ভীতির সীমানা ক্রমাগতভাবে বিস্তার লাভ করছে। উগ্রপন্থীদের হামলা রোধে দলমত নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান ফখরুল।

সনাতন ধর্মাবলম্বী পুরোহিত আনন্দ গোপাল গাঙ্গুলীকে হত্যাকারী দুর্বৃত্তদের অবিলম্বে গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানিয়ে নিহতের আত্মার শান্তি কামনা এবং শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

এমএম/একে/এমএস

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন [email protected] ঠিকানায়।