‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগে’ সায় নেই নেতাদের

সালাহ উদ্দিন জসিম
সালাহ উদ্দিন জসিম সালাহ উদ্দিন জসিম , জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: ০৭:০২ পিএম, ২৬ মার্চ ২০২৫
দলের নেতারা রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ নামে মাঠে থাকতে চায় না

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ রাজনীতির মাঠে থাকবে কি না কিংবা আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না- সেটি এখন অন্যতম চর্চিত বিষয়। এ নিয়ে আছে নানা মহলের নানাবিধ চেষ্টা-প্রচেষ্টা, বিতর্ক-সমালোচনা। আওয়ামী লীগ নিজেরাই এখন ছন্নছাড়া অবস্থায়। এরই মধ্যে আলোচনায় এসেছে ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ বা পরিশুদ্ধ আওয়ামী লীগ নামে দলটির পুনর্বাসন।

কিন্তু আওয়ামী লীগ কি এভাবে মাঠে থাকতে চায়? জবাবে দলটির নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগকে রিফাইনের দায়িত্ব যারা নিয়েছেন, তারা কি আওয়ামী লীগ করেন? না করলে তারা কীভাবে আওয়ামী লীগকে রিফাইন করবেন? অতীতে এমন উদ্যোগ অনেকে নিয়েছে, সফল হয়নি। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই ঐক্যবদ্ধ। অন্য কারও নেতৃত্ব মানবে না।

বিজ্ঞাপন

বিষয়টি নিয়ে গত কয়েক দিন জলঘোলা কম হয়নি। সেনাপ্রধানের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতাদের আলোচনা ছিল ‘টপ অব দ্য কান্ট্রি’। গত ২১ মার্চ ‘১১ই মার্চ, সময় দুপুর ২:৩০’ ক্যান্টনমেন্টের এক বৈঠকের উদ্ধৃতি দিয়ে এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ ফেসবুকে লেখেন, ‘কিছুদিন আগে আমি আপনাদের বলেছিলাম যে, ‘রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ’ নামে নতুন একটি ষড়যন্ত্র নিয়ে আসার পরিকল্পনা চলছে। এই পরিকল্পনা পুরোপুরি ভারতের। সাবের হোসেন চৌধুরী, শিরীন শারমিন চৌধুরী, তাপসকে সামনে রেখে এই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। আমিসহ আরও দুজনের কাছে ক্যান্টনমেন্ট থেকে এই পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয় ১১ মার্চ দুপুর ২:৩০ এ। আমাদের প্রস্তাব দেওয়া হয়, আসন সমঝোতার বিনিময়ে আমরা যেন এই প্রস্তাব মেনে নিই। আমাদের বলা হয়- ইতোমধ্যে একাধিক রাজনৈতিক দলকেও এ প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে- তারা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগ পুনর্বাসনে রাজি হয়েছে। একটি বিরোধীদল থাকার চেয়ে একটি দুর্বল আওয়ামী লীগসহ একাধিক বিরোধীদল থাকা নাকি ভালো। ফলশ্রুতিতে আপনি দেখবেন গত দুদিন মিডিয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষে একাধিক রাজনীতিবিদ বয়ান দেওয়া শুরু করেছে।’

তিনি লেখেন, ‘আমাদের আরও বলা হয়- রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ যাদের দিয়ে করা হবে, তারা এপ্রিল-মে থেকে শেখ পরিবারের অপরাধ স্বীকার করবে, হাসিনাকে অস্বীকার করবে এবং তারা বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগ করবে এমন প্রতিশ্রুতি নিয়ে জনগণের সামনে হাজির হবে। আমাদের এ প্রস্তাব দেওয়া হলে আমরা তৎক্ষণাৎ এর বিরোধিতা করি এবং জানাই যে, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়ে কাজ করুন। এর উত্তরে আমাদের বলা হয়, আওয়ামী লীগকে ফিরতে কোনো ধরনের বাধা দিলে দেশে যে সংকট সৃষ্টি হবে, তার দায়ভার আমাদের নিতে হবে এবং ‘আওয়ামী লীগ মাস্ট কাম ব্যাক’।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

এরকমভাবে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ করতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং জিয়াউর রহমানও চেষ্টা করেছেন। আসলে যেটা থাকার সেটাই থেকে গেছে। আওয়ামী লীগকে কেউ রিফাইন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ রিফাইন্ড করতে হলে আওয়ামী লীগই করবে, কাউন্সিলের মাধ্যমে।- আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী

এ স্ট্যাটাসের পর উত্তপ্ত হয়ে ওঠে রাজনৈতিক অঙ্গন। পরে এ বিষয়ে সুইডেনভিত্তিক নেত্র নিউজকে প্রতিক্রিয়া জানায় সেনাবাহিনী সদরদপ্তর। সেনাসদর নিশ্চিত করে, সেনাপ্রধানের সঙ্গেই ওই বৈঠকটি হয়েছিল। তবে ওই বৈঠক ছাত্রনেতাদের আগ্রহেই হয়।

সেনাসদপ্তর জানায়, ‘হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং সারজিস আলম দীর্ঘদিন যাবৎ সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের জন্য ইচ্ছা পোষণ করছিলেন। পরবর্তীসময়ে সারজিস আলম ১১ মার্চ ২০২৫ তারিখে সেনাপ্রধানের মিলিটারি অ্যাডভাইজরকে ফোন দিয়ে সেনাপ্রধানের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য সময় চান। এর পরিপ্রেক্ষিতে মিলিটারি অ্যাডভাইজার তাদের সেনাসদরে আসার জন্য বলেন।’

‘অতঃপর ১১ মার্চ দুপুরে সারজিস আলম এবং হাসনাত আব্দুল্লাহ সেনাসদরে না এসে সরাসরি সেনাভবনে সেনাবাহিনী প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য অপেক্ষা করেন। পরবর্তীসময়ে সেনাপ্রধান অফিস কার্যক্রম শেষ করে সেনা ভবনে এসে তাদের সঙ্গে দেখা করেন।’

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞাপন

আরও জানানো হয়, ‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মতো প্রতিষ্ঠিত সুশৃঙ্খল বাহিনীর প্রধান সদ্য প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের যুগ্ম সংগঠকদের ডেকে নিয়ে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের বিষয়ে নির্দেশনা দিচ্ছে বা চাপ প্রয়োগ করছে, যা অত্যন্ত হাস্যকর ও অপরিপক্ব গল্পের সম্ভার বলে প্রতীয়মান হয়।’

আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আগামী সরকারবিরোধী আন্দোলন, নির্বাচন সবকিছু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করবে আওয়ামী লীগ। কোনো ধরনের রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো টার্মে আওয়ামী লীগকে খণ্ডিত করার সব ষড়যন্ত্র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মোকাবিলা করবে।- আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া

সেনাসদরের বক্তব্যে বলা হয়, এই দুই ছাত্র সমন্বয়ককে সেনাবাহিনী প্রধান ‘অত্যন্ত স্নেহের দৃষ্টিতে ছেলের মতো’ দেখতেন। তিনি স্নেহবৎসল পরিবেশে তাদের সঙ্গে নানা আলাপচারিতা করেন। প্রাসঙ্গিকভাবে তাদের নতুন দল গঠনের শুভকামনা ও পরবর্তী রাজনৈতিক পথচলার বিষয়ে নানা প্রসঙ্গে আলাপ করেন।’

এ নিয়ে এনসিপি নেতা সার্জিস আলমও স্ট্যাটাস দেন তার ফেসবুক পেজে। তিনি আলোচনার বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আনার জন্য হাসনাতের সঙ্গে কিছু দ্বিমত পোষণ করেন।

বিজ্ঞাপন

‘সায়’ নেই আওয়ামী লীগের

রিফাইন্ড প্রক্রিয়ায় সায় নেই খোদ আওয়ামী লীগ নেতাদের। তারা বলছেন, আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। সামনে আন্দোলন ও নির্বাচন যাই হবে, সবই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করবে আওয়ামী লীগ।

আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এরকমভাবে রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ করতে হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এবং জিয়াউর রহমানও চেষ্টা করেছেন। আসলে যেটা থাকার সেটাই থেকে গেছে। আওয়ামী লীগকে কেউ রিফাইন করতে পারবে না। আওয়ামী লীগ রিফাইন্ড করতে হলে আওয়ামী লীগই করবে, কাউন্সিলের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগকে কেউ ঠেকাতেও পারবে না। এখন হয়তো তাদের হাতে শক্তি আছে, চাইলে যা কিছু করে দেওয়া যাবে, কিন্তু বাস্তবে তো কেউ মানবে না। এগোতেও পারবে না। আওয়ামী লীগের কেউ গ্রহণ করেবে না।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের আদর্শ, নীতি ও লক্ষ্য আছে। আওয়ামী লীগের আদর্শিক নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আওয়ামী লীগ তো কচু পাতার পানি না, বাতাস দিলেই তো টলে পড়বে না। আওয়ামী লীগের শেকড় অনেক গভীরে। আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের রাজনীতি হয়? এখনো তো প্রতিদিনই তারা আওয়ামী লীগের কথা বলে। আওয়ামী লীগ এখনো বাংলাদেশের রাজনীতির শীর্ষবিন্দুতে আছে। আওয়ামী লীগকে মুছে ফেলতে পারবে না। বরং, ওরাই মুছে যাবে। দেশের মানুষ দেখবে কার সময় ভালো ছিলাম, শান্তিতে ছিলাম!’

বিজ্ঞাপন

দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক সুজিত রায় নন্দী জাগো নিউজকে বলেন, ‘এগুলো ভুয়া খবর। ওয়েট অ্যান্ড সি।’

আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া জাগো নিউজকে বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের রাজনীতির মূলধারা। এ দল বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন করেছে। রিফাইন্ড আওয়ামী লীগের কথা যারা বলছে, আমি মনে করি তারা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগকে ভাঙার ষড়যন্ত্র করছে।’

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু কন্যার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ। আগামী সরকারবিরোধী আন্দোলন, নির্বাচন সবকিছু শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করবে আওয়ামী লীগ। কোনো ধরনের রিফাইন্ড আওয়ামী লীগ বা অন্য কোনো টার্মে আওয়ামী লীগকে খণ্ডিত করার সব ষড়যন্ত্র তৃণমূলের নেতাকর্মীরা মোকাবিলা করবে।’

বিজ্ঞাপন

আওয়ামী লীগের নেতারা আশা করেন, শিগগির ভালো কিছু হবে। এ অবস্থা দীর্ঘস্থায়ী হবে না। পরিবর্তন হবে, হতেই হবে।

এসইউজে/এএসএ/জেআইএম

পাঠকপ্রিয় অনলাইন নিউজ পোর্টাল জাগোনিউজ২৪.কমে লিখতে পারেন আপনিও। লেখার বিষয় ফিচার, ভ্রমণ, লাইফস্টাইল, ক্যারিয়ার, তথ্যপ্রযুক্তি, কৃষি ও প্রকৃতি। আজই আপনার লেখাটি পাঠিয়ে দিন jagofeature@gmail.com ঠিকানায়।