রাশিয়া বিশ্বকাপ মিস করবে যাদের
বিশ্বকাপ চলে এসেছে একেবারে দরজার সামনে। দুই মাসও বাকি নেই আর। ইতিমধ্যেই বিশ্বকাপ উত্তেজনায় কাঁপতে শুরু করেছে পুরো বিশ্ব। তারকা ফুটবলারদের পায়ের কারুকাজ আর দুর্দান্ত ড্রিবলিংয়ে মাত হয়ে থাকবে ফুটবল বিশ্বের মানুষ। মেসি, নেইমার কিংবা রোনালদোরা যখন মাঠে অসাধারণ ফুটবলের জাদু দেখাতে শুরু করবেন, তখন কেউ কেউ নস্টালজিয়ায়ও ভুগতে পারেন। কারণ, এবার বিশ্বকাপে দেখা মিলবে না অনেক বড় বড় তারকার। যারা ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন কিংবা যাদের দেশ বিশ্বকাপেই নাম লেখাতে পারেনি। তেমনই কয়েকজন তারকাকে তুলে ধরা হলো এখানে...
-
জাভি হার্নান্দেজ : ২০১০ বিশ্বকাপ বিজয়ী স্পেনের অন্যতম সেনানি। স্পেনের সোনালি প্রজন্মের অন্যতম সেরা প্রতিনিধি। ২০০৮ ইউরো থেকে শুরু করে ২০১২ ইউরো। মাঝে একটি বিশ্বকাপ জয়ে স্পেনকে উপহার দিয়েছেন একটি বিশ্বকাপ। জাভিকে শুধু স্পেনেরই নয়, সময়ে বিশ্বসেরা মিডফিল্ডারই ভাবা হতো। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর অবসরে চলে গিয়েছেন বিশ্বজয়ী এই ফুটবলার। এবার নিশ্চয়ই স্পেন সমর্থকরা মিস করবেন তাকে।
-
ইকার ক্যাসিয়াস : সর্বকালের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক ভাবা হয় ইকার ক্যাসিয়াসকে। স্পেনের সোনালি প্রজন্মের আরেক প্রতিনিধি। ইউরো এবং বিশ্বকাপ জয়ে স্পেন দলকে দিয়েছেন নেতৃত্ব। তার হাতেই উঠেছে ২০০৮ ও ২০১২ ইউরো এবং ২০১০ বিশ্বকাপ শিরোপা। রিয়াল মাদ্রিদে খেলা এই গোলরক্ষকের হাতে এমন কোনো ট্রফি নেই যে যা ওঠেনি। ২০০০ সাল থেকে স্পেন জাতীয় দলের হয়ে খেললেও এবারের বিশ্বকাপে ক্যাসিয়াসকে দেখা না যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। যদিও তিনি অবসরের ঘোষণা দেননি এখনও
-
ফিলিপ লাম : আরেক বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। জার্মানিকে ২০১৪ বিশ্বকাপ জয়ে দিয়েছেন নেতৃত্ব। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে ছিলেন জার্মান কোচ জোয়াকিম লোর অন্যতম ভরসা। তবে ২০১৪ বিশ্বকাপে দায়িত্ব পালন করেছেন সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে। মাঝ মাঠ থেকে বল সার্কুলেশন খেলার নিয়ন্ত্রণটা পুরোপুরি করতেন তিনি। যে কারণে, ২০১৪ রিও ডি জেনিরোর মারাকান থেকে বিশ্বকাপ ট্রফিটা জিতে দেশে ফিরতে পেরেছেন তিনি। বিশ্বকাপের পরই অবশ্য অবসরের ঘোষণা দেন তিনি।
-
বাস্তিয়ান শোয়েনস্টাইগার : বিশ্বের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার ছিলেন। জার্মানিকে চতুর্থ বিশ্বকাপ শিরোপা এনে দেয়ার অন্যতম নায়কও ছিলেন তিনি। মাঠে তার উপস্থিতি ছিল সব সময়ই চোখে পড়ার মতো। একদিকে আক্রমণ তৈরি করা, অন্যদিকে আক্রমণ ঠেকানো- দুটি দায়িত্বই বেশ সুন্দর করে পালন করতেন তিনি। জার্মানির হয়ে ২০০৪ সালে অভিষেক। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর হয়েছিলেন জার্মানির অধিনায়ক। তবে ২০১৬ ইউরোর পর অবসরের ঘোষণা দেন তিনি।
-
মিরোস্লাভ ক্লোসা : জার্মানির বিশ্বকাপ বিজয়ী আরেক দিকপাল। বিশ্বকাপে এখনও পর্যন্ত যে রেকর্ড তিনি গড়েছেন, তার ধারে কাছে কেউ নেই। ২০১৪ বিশ্বকাপে ব্রাজিলে বসেই ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোনালদোর ১৫ গোলের রেকর্ড ভেঙে করেছেন ১৬ গোলের রেকর্ড। জার্মানির হয়ে সর্বোচ্চ ৭১ গোল করার রেকর্ডও মিরোস্লাভ ক্লোসার নামে। বিশ্বকাপের ফাইনালে ৮৮ মিনিট পর্যন্ত মাঠে ছিলেন ক্লোসা। তার পরিবর্তেই মাঠে নামানো হয় মারিও গোৎসেকে। অতিরিক্ত সময়ে যার গোলে বিশ্বকাপ জয় করে জার্মানি। ২০১৪ বিশ্বকাপের পরই অবসরের ঘোষণা দেন মিরোস্লাভ ক্লোসা।
-
জিয়ানলুইজি বুফন : বিশ্বসেরা অন্যতম গোলরক্ষক জিয়ানলুইজি বুফন। কেউ কেউ তো তাকে ইকার ক্যাসিয়াস এবং লেভ ইয়াসিনদের কাতারেও তুলে নিয়ে আসেন। ২০০৬ বিশ্বকাপের ফাইনালে ফ্রান্সকে হারানোর অন্যতম নায়কই ছিলেন জিয়ানলুইজি বুফন। জিদানের মত কিংবদন্তি ফুটবলারও পরাস্ত করতে পারেননি বুফনকে। সেই জিয়ানলুইজি বুফন এবার বিশ্বকাপে নেই। অবসর না নিলেও নিজের দেশ ইতালিকে বিশ্বকাপে তুলতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি। আবার বয়স হয়েছে ৪০। সুতরাং, আর যে তাকে বিশ্বকাপে দেখা যাবে না এটা নিশ্চিত।
-
আন্দ্রে পিরলো : ইতালির ২০০৬ বিশ্বকাপ জয়ের অন্যতম সেরা তারকা ছিলেন আন্দ্রে পিরলো। কোচ মার্সেলো লিপ্পির আস্থার জায়গায় ছিলেন তিনি। তাকে ঘিরেই পুরো দল সাজাতেন লিপ্পি। ২০০৬ বিশ্বকাপে সবগুলো ম্যাচেই খেলেছেন ৬৬৮ মিনিট। ফ্রান্সের বিপক্ষে ফাইনালে হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা এবং বিশ্বকাপে সব মিলিয়ে তিনবার ম্যাচ সেরা। সেই আন্দ্রে পিরলো খেলেছেন ২০১৪ বিশ্বকাপেও। তবে ২০১৫ সালে এসে জাতীয় দল থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মিডফিল্ডে ইতালির অন্যতম ভরসার এই প্রতীক।
-
অ্যারিয়েন রোবেন : বায়ার্ন মিউনিখের এই উইঙ্গারকে বিশ্বসেরা না বলে উপায় নেই। দারুণ শক্ত-সামর্থ্যের অধিকারী এই ফুটবলার গতি দিয়েই যেন সব কিছুকে হার মানাতেন। মিডফিল্ডে ডান পাশ থেকে কোনাকুনি বল নিয়ে দৌড়ে বাম পাশে এসে ডি বক্সে ঢুকে পড়ার দৃশ্য এখনও সবার চোখে ভাসে। ডাচ ফুটবল ইতিহাসে অন্যতম সেরা উইঙ্গার। ২০১০ বিশ্বকাপে দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে। ২০১৪ বিশ্বকাপে এসে হয়েছিল তৃতীয়। কিন্তু অন্যতম সেরা এই উইঙ্গারের অবসরের কারণেই হয়তো বিশ্বকাপেই নাম লেখাতে ব্যর্থ হয়েছে নেদারল্যান্ডস।
-
রবিন ফন পার্সি : অন্যতম বিশ্বসেরা স্ট্রাইকার। ২০১৪ ব্রাজিল বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বিশ্বজয়ী স্পেনকে ৫-১ গোলে পরাজিত করেছিল ডাচরা। দলের অধিনায়কও ছিলেন ফন পার্সি। ওই ম্যাচে নিজে করেছেন ২ গোল। যার একটি ছিল ফ্লাইং হেডে করার অসাধারণ এক গোল। যেটা আবার বিশ্বকাপে সেরা গোলের স্বীকৃতিও পেয়েছিল। জিতেছিল পুসকাস অ্যাওয়ার্ড। সেই ফন পার্সিরা ২০১৮ বিশ্বকাপে দলকেই চূড়ান্ত পর্বের টিকিট এনে দিতে পারেননি। বিশ্বকাপও মিস করবে দুর্দান্ত এক স্ট্রাইকারকে।
-
ওয়েসলি স্নেইডার : অ্যারিয়েন রোবেনের সমসাময়িক বিশ্বের অন্যতম সেরা আরেক ফুটবলার ছিলেন ওয়েসলি স্নেইডার। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার হিসেবে নিজের গ্রহণযোগ্যতা তিনি তুলে ধরেছেন বিশ্বব্যাপি। ২০১০ বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসেক ফাইনালে তোলা কিংবা ২০১৪ বিশ্বকাপে দলকে তৃতীয় করার পেছনে অন্যতম অবদানও ছিল তার। তবে সেমিফাইনালের টাইব্রেকারে স্নেইডারের স্পট কিক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন আর্জেন্টিনা গোলরক্ষক রোমেরো। ২০১৭ সালে এসে অবসরের ঘোষণা দেন এই ফুটবলার।
-
আলেক্সিস সানচেজ : বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা স্ট্রাইকার। বার্সেলোনা হয়ে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে আর্সেনাল এবং সর্বশেষ তিনি খেলছেন ম্যানইউতে। চিলির সোনালি প্রজন্মের ফুটবলার ধরা হয় তাকে। টানা দুটি কোপা আমেরিকা শিরোপা জয়ে চিলিকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আলেক্সিস সানচেজদের হাতেই দু'বার ফাইনালে উঠেও পরাস্ত হয়েছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। সেই চিলিকেই বিশ্বকাপের টিকিট এনে দিতে ব্যর্থ হয়েছেন সানচেজরা।
-
আর্তুরো ভিদাল : বায়ার্ন মিউনিখের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার। নিজেদের মাটিতে আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে চিলিকে তাদের নিজেদের ইতিহাসে প্রথম কোনো বড় ট্রফি এনে দেয়ার ক্ষেত্রে অন্যতম বড় অবদান ছিল আর্তুরো ভিদালের। ২০১৫ কোপা আমেরিকার ফাইনালে আর্জেন্টিনার বিপক্ষে টাইব্রেকারে গোল করেছিলেন। হয়েছিলেন ম্যাচ সেরা। ২০১৬ কোপা আমেরিকায়ও তিনি ছিলেন চিলির অন্যতম সেরা তারকা। যদিও টাইব্রেকারে গিয়ে প্রথম শটটা মিস করেছিলেন তিনি। যদিও শেষ পর্যন্ত চিলি জিতেছে ৪-২ ব্যবদানে এবং আবারও নির্বাচিত হয়েছিল টিম অব দ্য টুর্নামেন্ট হিসেবে।
-
দিয়েগো ফোরলান : উরুগুয়ের ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফুটবলারের একজন হলেন দিয়েগো ফোরলান। ১৯৫০ বিশ্বকাপ জয়ের পর উরুগুয়ে যেন হারিয়েই গিয়েছিল বিশ্ব ফুটবল থেকে। কোনো তারকা নেই, লাতিন পাওয়ার হাউজের যে তকমা ছিল সেটাও নেই। কিন্তু ২০১০ বিশ্বকাপের আগে হঠাৎ ফোরলানের আবির্ভাব। তাদের হাত ধরে উরুগুয়ে উঠে গেলো সেমিফাইনালে। দল চতুর্থ হলেও টুর্নামেন্ট সেরা গোল্ডেন বলের পুরস্কার জিতলেন ফোরলান। ২০১৪ বিশ্বকাপের পরই তিনি নিয়েছেন অবসর। নিশ্চিত, এবারের বিশ্বকাপ তাকে মিস করবে।