বিদেশে সুরেশ রায়নার স্ত্রী যা করতেন
ভারতের উত্তরপ্রদেশের শহরে একসঙ্গে বেড়ে ওঠা সুরেশ এবং প্রিয়াঙ্কার। প্রথম দিকে প্রিয়াঙ্কার বাবার কাছে ক্রিকেটের প্রশিক্ষণও নিতেন সুরেশ। দু’জনের মায়ের মধ্যেও ছিল বন্ধুত্বের সম্পর্ক। কিন্তু সুরেশ-প্রিয়াঙ্কা সম্পর্কে কৈশোর বা তারুণ্যে কোনো প্রেমের আঁচড় পড়েনি। কেউ কোনোদিন ভাবতেও পারেননি একে অন্যের জীবনসঙ্গী হবেন।
-
গাজিয়াবাদের কলেজ থেকে বি টেক করেন প্রিয়াঙ্কা সিংহ চৌধুরি। তারপর একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি নিয়ে নেদারল্যান্ডস চলে যান। তার পরিবারও গাজিয়াবাদ থেকে চলে গিয়েছিল পাঞ্জাব। ফলে অনেকটাই ক্ষীণ হয়ে যায় রায়না ও চৌধুরি পরিবারের যোগাযোগ।
-
বেশ কিছু বছর পরে ২০০৮-এ দিল্লি বিমানবন্দরে আচমকাই দেখা দুই বাল্যবন্ধুর। সুরেশ যাচ্ছিলেন বেঙ্গালুরু, আইপিএল ম্যাচ খেলতে। ছুটি কাটিয়ে প্রিয়াঙ্কা ফিরছিলেন তার কাজের জায়গা নেদারল্যান্ডস। ৫ মিনিট স্থায়িত্ব ছিল সাক্ষাতের। পরে দু’জনেই জানিয়েছিলেন, তখনও তারা জানতেন না ভবিষ্যতে কী অপেক্ষা করে আছে তাদের জন্য।
-
৭ বছর পরে সুরেশ তখন বিশ্বকাপ খেলতে অস্ট্রেলিয়ায়। বাড়িতে বিয়ের কথা চলছিলই। অস্ট্রেলিয়ায় বসে মায়ের ফোনে সুরেশ জানতে পারেন ছোটবেলার বন্ধুর সঙ্গে তার বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে! কে সেই বান্ধবী? জানতে চাইলে সুরেশের মা ফোন দিয়ে দেন প্রিয়াঙ্কাকে। সেই শুরু।
-
পূর্ব পরিচিত হলেও নিজেদের সাতপাকে ঘোরাকে ‘অ্যারেঞ্জড ম্যারেজ’ বলতেই ভালবাসেন সুরেশ ও প্রিয়াঙ্কা। দু’জনে এ বিষয়েও সহমত যে পরিবারের পছন্দে সম্মতি জানিয়ে তারা কোনো ভুল করেননি।
-
২০১৫ সালের ১ এপ্রিল ঘরোয়া পারিবারিক অনুষ্ঠানে দু’জনের এনগেজমেন্ট হয়। রায়না পরিবারের বাড়িতে সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন দুই পরিবারের লোকজন।
-
বিয়ের জন্য রায়না বেছে নিয়েছিলেন দিল্লির বিলাসবহুল হোটেল দ্য লীলা প্যালেস-কে। তার বিয়ে উপলক্ষে হোটেল কার্যত হয়ে উঠেছিল চাঁদের হাট। ক্রিকেট, অভিনয় এবং রাজনীতি জগতের বিখ্যাত ব্যক্তিত্বরা আমন্ত্রিত ছিলেন সেই অনুষ্ঠানে।
-
লখনউয়ের কাবাব ও বিরিয়ানির ভক্ত রায়না তার বিয়ের ভোজও সাজিয়েছিলেন নিজের পছন্দ অনুসারে। ভুলভুলাইয়ার শহরের বিখ্যাত ‘টুন্ডে কাবাব’ দোকান থেকে তার বিয়ের মেনু তৈরি করতে দিল্লি গিয়েছিলেন রন্ধনশিল্পীদের একটি বিশেষ দল।
-
টুন্ডে কাবাবের পাশাপাশি লখনউয়ের বিখ্যাত গলহৌটি কাবাব, মাটন বিরিয়ানি, মাটন কোর্মা ছিল সুরেশ-প্রিয়াঙ্কার বিয়ের ভোজের অন্যতম আকর্ষণ।
-
বেশির ভাগ ক্রিকেট তারকাদের স্ত্রীরা বিয়ের পরে চাকরি ছেড়ে দেন। প্রিয়াঙ্কা কিন্তু একটা সময় পর্যন্ত দীর্ঘদিন চাকরি করে গিয়েছেন। শোনা যায়, সম্প্রতি তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। ফলে সুরেশ মাঠে খেললেই গ্যালারিতে প্রিয়াঙ্কা— এই ছবি সচরাচর ধরা পড়েনি। স্ত্রীর ক্যারিয়ারে বাধা হয়ে দাঁড়াননি রায়নাও।
-
২০১৭ সালে সুরেশ এবং প্রিয়াঙ্কার সংসারে আসে নতুন অতিথি। নেদারল্যান্ডসে কন্যাসন্তানের জন্ম দেন প্রিয়াঙ্কা। মেয়ের নাম রাখেন ‘গ্রেসিয়া’।
-
সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার এবং ফুটবলপ্রেমী প্রিয়াঙ্কা কাজ করেছেন রেডিয়ো জকি হিসেবেও। তার সঞ্চালনায় শো বেশ জনপ্রিয়। তার শো-এর মূল আলোচ্য বিষয় মানবাধিকার ও নারীকল্যাণ। মা এবং শিশুকল্যাণের সঙ্গে জড়িত একটি সংস্থাও পরিচালনা করেন প্রিয়াঙ্কা। সংস্থাটির নাম তিনি রেখেছেন মেয়ে গ্রেসিয়ার নামে।
-
প্রথম বারের মতো এবারও প্রিয়াঙ্কা নেদারল্যান্ডসেই সন্তানের জন্ম দেবেন বলে ঠিক করেছিলেন। কিন্তু অতিমারি পরিস্থিতিতে ভয় পেয়ে তিনি ভারতে চলে আসেন।
-
ভালো খবরের পাশাপাশি এ বছর দুঃসময়ও অপেক্ষা করে ছিল সুরেশ রায়নার জন্য। গত ১৯ অগস্ট মাঝরাতে পাঠানকোটের থারিয়াল গ্রামে তার কাকার পরিবারকে ডাকাতির উদ্দেশে আক্রমণ করেছিল দুষ্কৃতীরা।
-
দুষ্কৃতীদের আক্রমণে প্রাণ হারান কাকা। গুরুতর জখম হন কাকিমা। ভাইবোনেরাও মারাত্মক আহত হন। পারিবারিক বিপর্যয়ের এই খবর পেয়ে দ্রুত আমিরশাহি থেকে সিএসকে শিবির ছেড়ে দেশে ফেরত আসেন রায়না।
-
পরে জানা যায় চেন্নাই শিবির ছেড়ে রায়নার চলে আসার পিছনে অন্য কারণও আছে। পরবর্তীকালে রায়নার একটি মন্তব্য ছড়িয়ে পড়ে। তাতে তিনি বলেছিলেন যে, সন্তানদের জীবন তার কাছে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কোভিড পরিস্থিতিতে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি দেশে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে মনে করা হয়েছিল সে সময়।
-
সে সময় চেন্নাই সুপার কিংস শিবিরে ১৩ জন করোনা আক্রান্ত ছিলেন। তার মধ্যে দীপক চাহার ও ঋতুরাজ গায়কোয়াড়ের মতো ক্রিকেটারও ছিলেন। শোনা গিয়েছিল, করোনা সংক্রমণের হার দেখে দুবাইয়ে থাকা আর ঠিক বলে মনে করেননি রায়না।
-
সিএসকে ম্যানেজমেন্ট তার সিদ্ধান্ত মেনে নিয়ে দেশে ফেরার ব্যবস্থা করে দেয়। রায়না ‘ব্যক্তিগত কারণ’-এ দেশে ফিরেছেন বলে জানানো হয় ফ্র্যাঞ্চাইজির তরফে। দেশে ফিরে নয়াদিল্লির বাড়িতে রায়না নাকি কোরেনটাইনে চলেও যান।
-
পরে আবার অন্য একটি কারণ সামনে আসে। শোনা যায়, দুবাইয়ের হোটেলে তার জন্য বরাদ্দ ঘর পছন্দ হয়নি রায়নার। সেই ঘরে কোনও ব্যালকনি ছিল না। ব্যালকনি না থাকায় রায়নার নাকি অসুবিধা হচ্ছিল। সিএসকে অধিনায়ক মহেন্দ্র সিংহ ধোনিকে যেমন ঘর দেওয়া হয়েছিল, ঠিক তেমনই ঘর নাকি চেয়েছিলেন রায়না। আর এই ঘটনার জেরেই নাকি আইপিএল না খেলার সিদ্ধান্তে পৌঁছন রায়না।