টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতীয় দলে স্থান পেলেন যারা
বছরের শেষে অস্ট্রেলিয়ায় বসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আসর। তারই প্রস্তুতি নিচ্ছে সব দল। বিরাট কোহলির ভারতও বেছে নিতে চাইছে সেরা দল। দেখে নিতে চাইছে ক্রিকেটারদের। প্রথম এগারোয় কোন কম্বিনেশন বেশি কার্যকরী হবে অস্ট্রেলিয়ায়, তা নিয়ে চলছে নানা পরীক্ষা। এই আবহেই ভিভিএস লক্ষ্মণ বেছে নিলেন বিশ্বকাপে ভারতের সম্ভাব্য স্কোয়াড। দেখে নেয়া যাক কারা স্থান পেয়েছেন এই দলে।
-
অধিনায়ক অবশ্যই বিরাট কোহলি। সদ্য অধিনায়ক হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে দ্রুততম হাজার রান করেছেন তিনি। শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ইন্দোরে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টির পর অধিনায়ক হিসেবে এই ঘরানায় ৩০ ইনিংসে ১,০০৬ রান হয়ে গেল তার। সব মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ২,৬৬৩ রান রয়েছে। তিনিই এই ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি রানের মালিক। স্বাভাবিক ভাবেই লক্ষ্ণণের দলেরও নেতা তিনিই।
-
সহ-অধিনায়ক অবশ্যই রোহিত শর্মা। গত বছর ইংল্যান্ডে ওয়ানডে বিশ্বকাপে দুর্দান্ত ছন্দে ছিলেন তিনি। করেছিলেন পাঁচটি সেঞ্চুরি। এবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেও তার ব্যাটে ঝড় দেখতে চাইছেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। তিনিই দলের এক নম্বর ওপেনার। রোহিতের সঙ্গী কে হবেন, তা নিয়েই যত প্রশ্ন।
-
রোহিতের সঙ্গী ওপেনার হিসেবে লক্ষ্মণের পছন্দ লোকেশ রাহুল। দুর্দান্ত ফর্মে আছেন তিনি। ২৭ বছর বয়সি এই ফরম্যাটে ৩২ ইনিংসে ৪৩.৮১ গড়ে করেছেন ১১৮৩ রান। দুটো সেঞ্চুরিও করেছেন রাহুল। স্ট্রাইক রেট দেড়শোর কাছাকাছি। তার ব্যাটিং মুগ্ধ করছে বিপক্ষ শিবিরকেও। দলের দ্বিতীয় উইকেটকিপারও তিনি।
-
শ্রেয়াস আইয়ার চার নম্বরে নিজের দাবি পাকা করে ফেলেছেন। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় দল চার নম্বর ব্যাটসম্যান ঠিক করতে না পারায় ভুগেছে। ইংল্যান্ডে হওয়া বিশ্বকাপেও এই কারণে সমস্যায় পড়েছিল দল। শ্রেয়াস কিন্তু ভরসা দিচ্ছেন চারে নেমে। ২৫ বছর বয়সি এখনও পর্যন্ত টি-টোয়েন্টিতে ১৪ ইনিংসে করেছেন ২৬০ রান।
-
ঋষভ পান্থকে লক্ষ্মণ রেখেছেন পাঁচে। এর আগে ভারতীয় দল তাকে চার নম্বরে ক্রমাগত খেলালেও হালফিল দিল্লির উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যানকে পাঁচেই নামানো হচ্ছে। উইকেট ছুড়ে দেয়ার প্রবণতা ২২ বছর বয়সি কিছুটা কাটিয়ে উঠেছেন বলেও মনে করা হচ্ছে। এই ফরম্যাটে ২৫ ইনিংসে তিনি করেছেন ৪১০ রান। সঞ্জু স্যামসন জায়গা পাননি লক্ষ্মণের স্কোয়াডে।
-
মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হিসেবে থাকছেন মণীশ পান্ডে। প্রয়োজনে তাকে পাঁচ বা ছয় নম্বরে নামানো যায়। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে এর আগে ভাল ইনিংস রয়েছে তার। যা তার আত্মবিশ্বাস বাড়াতে কাজে আসবে। ৩০ বছর বয়সি এখন পর্যন্ত ২৭ ইনিংসে ৩৯.১৩ গড়ে করেছেন ৫৮৭ রান।
-
হার্দিক পান্ডেই দলের পয়লা নম্বর অলরাউন্ডার। অস্ট্রেলিয়ায় তার মিডিয়াম পেস কার্যকরী ভূমিকা নেবে। পাশাপাশি, ফিনিশার হিসেবেও দায়িত্ব নিতে হবে তাকে। ম্যাচ শেষ করে আসার ক্ষেত্রে ধারাবাহিকতার অভাব রয়েছে তার। আর যেন চোট না পান, লক্ষ্য রাখতে হবে সে দিকেও।
-
শিবম দুবে হলেন লক্ষ্মণের দলের দ্বিতীয় অলরাউন্ডার। জোরে শট মারতে পারেন, বিগহিটার হিসেবেই পরিচয় তার। সঙ্গে মিডিয়াম পেস বোলিংও রয়েছে। উইকেট নেয়ার প্রবণতা রয়েছে ২৬ বছর বয়সির। এখনও পর্যন্ত দেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে চার ইনিংসে ৩২ গড়ে ৬৪ রান করেছেন। যাতে একটি পঞ্চাশ রয়েছে। নিয়েছেন তিনটি উইকেটও।
-
রবীন্দ্র জাদেজা হলেন সত্যিকারের থ্রি-ডি প্লেয়ার। শুধু বাঁ-হাতি স্পিনার হিসেবেও দলে আসতে পারেন ৩১ বছর বয়সি। এই ফরম্যাটে নিয়েছেন ৩৫ উইকেট। ইকনমি রেট ৭.১৮। আবার ব্যাট হাতে স্ট্রাইক রেটও খুবই ভালো। সঙ্গে রয়েছে দুরন্ত ফিল্ডিং। তাকে প্রথম এগারোর বাইরে রাখা কঠিন হবে।
-
জশপ্রীত বুমরা দলের এক নম্বর স্ট্রাইক বোলার। শুরুতে নতুন বলে দুই ওভারের পর সম্ভবত ডেথ ওভারেই আনা হবে তাকে। চোটের জন্য গত বছরের শেষের দিকে খেলতে পারেননি। বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে এই সিরিজেই প্রত্যাবর্তন ঘটল তার। লক্ষ্মণও বলছেন কোহলির তুরুপের তাস হতে পারেন তিনি
-
মহম্মদ শামি খুব বেশি টি-টোয়েন্টি খেলেননি। তবে মাত্র আট ম্যাচেই নিয়েছেন ১০ উইকেট। স্ট্রাইক রেট ১৬.৬। ইকনমি রেট যদিও বেশি, প্রায় দশ। তবু উইকেট নেওয়ার ক্ষমতার জন্যই লক্ষ্মণ স্কোয়াডে রেখেছেন তাকে। আর শামি এখন বিধ্বংসী মেজাজেও রয়েছেন।
-
ভুবনেশ্বর কুমার ভারতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তার সুইং ভয়াবহ হয়ে উঠতেই পারে বিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের কাছে। ৪৩ টি-টোয়েন্টি আন্তর্জাতিকে ৪১ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ইকনমি রেট ৭.০৪। একবার পাঁচ উইকেটও নিয়েছিলেন এই ফরম্যাটে। এর সঙ্গে ব্যাট হাতেও তিনি লোয়ার অর্ডারে নির্ভরযোগ্য।
-
দীপক চাহারের অস্ত্র হল উইকেটের দুই দিকেই সুইং করানোর ক্ষমতা। আইপিএল খেলে নজর কেড়ে ছিলেন ডানহাতি পেসার। তার পর জাতীয় দলের জার্সিতেও একই ছন্দে বল করেছেন, বিব্রত করেছেন ব্যাটসম্যানদের। ১০ টি-টোয়েন্টিতে তিনি নিয়েছেন ১৭ উইকেট। লক্ষ্মণের দলে পেসারদের মধ্যে জায়গা হয়নি নবদীপ সাইনি, শার্দুল ঠাকুর, খলিল আহমেদদের।
-
বিশেষজ্ঞ স্পিনার বাছার ক্ষেত্রে উইকেট নেওয়ার দক্ষতায় জোর দিয়েছেন লক্ষ্মণ। তিনি ভরসা রেখেছেন ‘কুল-চা’ জুটিতে। চায়নাম্যান কুলদীপ যাদব এই মুহূর্তে জাতীয় দলে নিয়মিত খেলছেন। ২৫ বছর বয়সি ২০ টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ৩৯ উইকেট। ইকনমি রেট ৭.১১, স্ট্রাইক রেট ১১.৬। মিডল ওভারে আঘাত হানার জন্য কোহলির ভরসা তার উপরেই।
-
লেগস্পিনার যুজবেন্দ্র চহাল ৩৬ টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ৫২ উইকেট। তার ইকনমি রেট ৮.১০, স্ট্রাইক রেট ১৬.২। ২৫ রানে ছয় উইকেট তার সেরা বোলিং। লক্ষ্মণের দলে জায়গা হয়নি অফস্পিনার ওয়াশিংটন সুন্দর ও বাঁ-হাতি স্পিনার ক্রুণাল পান্ডের। এরা দু’জনেই অলরাউন্ডার। আর সুন্দর এখন নিয়মিত খেলছেনও। ‘কুল-চা’ জুটির উভয়েই কিন্তু ব্যাটিং একদমই পারেন না।
-
লক্ষ্মণের দলে জায়গা হয়নি মহেন্দ্র সিং ধোনির। এমএসডি এখনও জানাননি তিনি কবে খেলায় ফিরবেন। ইংল্যান্ডে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যাওয়ার পর থেকে ক্রিকেটমহলে প্রচুর জল্পনা তাকে নিয়ে। কিন্তু ধোনি স্পষ্ট করে কিছু জানাননি। মনে করা হচ্ছে, ধোনির ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে আইপিএল খুব জরুরি ভূমিকা নেবে।
-
লক্ষ্মণের দলে ঠাঁই হয়নি বাঁ-হাতি ওপেনার শিখর ধাওয়ানেরও। চোটের জন্য কিছুদিন বাইরে ছিলেন তিনি। সেই সুযোগে ওপেনার হিসেবে লোকেশ রাহুল নিজেকে প্রমাণ করেছেন। আর চোট সারিয়ে ফিরে মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে টি-টোয়েন্টিতে তেমন স্বচ্ছন্দেও দেখায়নি শিখরকে। যদিও আইসিসি প্রতিযোগিতায় তার রেকর্ড বেশ ভালো।