বিশ্বকাপের মঞ্চে একার হাতে ম্যাচ জিতিয়েছিলেন যে ক্রিকেটাররা
শুরু হয়েছে টেস্ট বিশ্বকাপ। পাঁচ দিনের খেলায় একক নায়ক হয়তো সেভাবে পাওয়া যায় না। তবে ইতিহাস খুঁজলে দেখা যায়, একদিনের ক্রিকেটের বিশ্বকাপে এমন কিছু নায়কের কথা, যারা একার হাতে পাল্টে দিয়েছিলেন ম্যাচের রং। কেমন ছিল তাদের সেই ইনিংস, দেখে নেয়া যাক এবার।
-
ডেরিক মারে: ১৯৭৫ সালে প্রথম বিশ্বকাপ। পাকিস্তান বনাম ক্লাইভ লয়েডের ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচ। মজিদ খান, ওয়াসিম রাজারা প্রথমে ব্যাট করে ৬০ ওভারে তোলেন ২৬৬ রান। সেই রান তাড়া করতে নেমে ২০৩ রানে নয় উইকেট পড়ে যায় ক্যারিবিয়ানদের। সেইখান থেকে অ্যান্ডি রবার্টসকে সঙ্গী করে দুই বল বাকি থাকতে ম্যাচ জেতান উইকেটকিপার ডেরিক মারে। তিনি করেন ৭৬ বলে ৬১। একার হাতে হারা ম্যাচ নিজেদের দিকে ঘুড়িয়ে দেন মারে।
-
গ্যারি গিলমোর: সেই বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে বিশ্ব দেখে আরেক নায়ককে। এবার একা হাতে ম্যাচের রং পাল্টান বাঁ-হাতি অজি অলরাউন্ডার গিলমোর। প্রথমে বল হাতে ছয় উইকেট নিয়ে ৯৩ রানে শেষ করে দেন ইংল্যান্ডকে। তারপর ব্যাট হাতে ২৮ বলে ২৮ রান করে সেই রানের গÐি পার করেন দলের ৩৯ রানে ছয় উইকেট পরে যাওয়ার পর।
-
কপিল দেব: ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে ভারত অধিনায়কের ১৭৫ রানের ইনিংসকে ভুলতে পারবেন না কেউই। ১৩৮ বলে তার খেলা এই ঝোড়ো ইনিংস ভারতকে পৌঁছে দেয় ২৬৬ রানে। তার এই ইনিংস গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায় কারণ মাত্র ১৭ রানে ভারতের পাঁচ উইকেট পড়ে যায়। বল হাতে বাকি কাজটা মিলে মিশে শেষ করেন মদন লাল, রজার বিনিরা। ভারতের বিশ্বকাপ জেতার আগে স্মরণীয় হয়ে থাকবে এই ম্যাচ।
-
সুনীল গাওস্কর: তারপরের বিশ্বকাপে আরও এক ভারতীয় ক্রিকেটারের উল্লেখযোগ্য ইনিংস জায়গা করে নেয় এই তালিকায়। তিনি সুনীল গাভাস্কার। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমে বল করে কিউয়িদের ২২১ রানে আটকে রাখেন চেতন শর্মারা। তারপরেই দেখা যায় এক অন্য গাভাস্কারকে। মাত্র ৮৮ বলে ১০৩ রানের ইনিংস খেলেন তিনি। যদিও বিশ্বকাপ জেতা হয়নি ভারতের।
-
ওয়াসিম আকরাম: ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপটা পাকিস্তানের জেতাই হত না আকরামের সেই অলরাউন্ড পারফরমান্স ছাড়া। প্রথমে ব্যাট হাতে ১৮ বলে ৩৩ রানের ঝোড়ো ইনিংস। তারপর ইয়ান বোথাম, অ্যালান ল্যাম্ব ও ক্রিস লুইসকে ফিরিয়ে দিয়ে পাকিস্তানের বিশ্বজয়ের স্বপ্ন সত্যি করেন তিনি।
-
মরিস ওদুম্বে: ১৯৯৬ বিশ্বকাপে কেনিয়া মুখোমুখি হয় শক্তিশালী ওয়েস্ট ইন্ডিজের। টস জিতে কেনিয়াকে ব্যাট করতে পাঠান ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক রিচি রিচার্ডসন। মাত্র ১৬৬ রানে অলআউট হয়ে যায় আফ্রিকান দেশটি। কিন্তু বল হাতে অধিনায়ক ওদুম্বে ক্যারিবিয়ান দৈত্যদের দাপট শেষ করে দেন মাত্র ৯৩ রানে। ১০ ওভার বল করে তিনটি মেডেন দিয়ে তিনি নেন তিন উইকেট।
-
শেন ওয়ার্ন: সেই বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সেমিফাইনাল। মুখোমুখি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও অস্ট্রেলিয়া। যদিও প্রথমে বল করে ইয়ান বিশপরা অজিদের থামিয়ে দেন ২০৭ রানে। ব্যাট হাতে শুরুতে জেতার আশা দেখাছিলেন চন্দ্রপল, লারারাও। কিন্তু তখনই আগমন ঘটল ওয়ার্নের। তার স্পিনের জাদুতে একে একে সম্মোহিত হয়ে ফিরে যান লারা, গিবসন, বিশপরা। চার উইকেট নিয়ে তিনিই হন ম্যাচের সেরা, দলকে নিয়ে যান ফাইনালেও।
-
লান্স ক্লুজনার: ক্রিকেট বিশ্বে এক বহু চর্চিত নাম ক্লুজনার। ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে এই অলরাউন্ডার একা হাতে উড়িয়ে দেন শ্রীলঙ্কাকে। প্রথমে ব্যাট হাতে ৪৫ বলে ৫২ করে দলের ব্যাটিং বিপর্যয় ঢাকা দেন। তারপর বল হাতে ৫.২ ওভারে তিন উইকেট নিয়ে প্রায় একাই শেষ করে দেন শ্রীলঙ্কাকে। ম্যাচের সেরাও হন তিনিই।
-
আশিস নেহরা: ২০০৩ বিশ্বকাপে শচীন, সৌরভ সমৃদ্ধ ভারতীয় ব্যাটিং-এর পাশে নজর কাড়েন নেহরা। ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বল হাতে আগুন ঝড়ান তিনি। ১০ ওভারে ছয় উইকেট নিয়ে একার হাতে ১৬৮ রানে শেষ করে দেন ভন, ট্রেসকোথিকদের। সেবারের দুরন্ত ইংল্যান্ড টিম হার মানে নেহরার কাছে।
-
কেভিন ও’ব্রায়ান: ২০১১ সালে ইংল্যান্ডকে হার মানতে হয় একক দক্ষতার কাছে। দুর্বল আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে প্রথমে ব্যাট করে ৩৩৭ রান করে নিশ্চিন্ত ছিলেন ইংরেজরা। কিন্তু ব্যাট হাতে এই গল্পের নায়ক হয়ে ওঠেন আইরিশ কেভিন। তার ৬৩ বলে ১১৩ রান ইংরেজ আভিজাত্যে কালো দাগ ফেলে দেয়। পাঁচ বল বাকি থাকতে ৩২৯ রান তুলে ম্যাচ জিতে নেয় আয়ারল্যান্ড।