এখন বাইরে বের হতে যেসব নিয়ম মানবেন
করোনার প্রতিষেধক বা ওষুধ আসেনি এখনো। মাস্ক, সাবান আর স্যানিটাইজার। এই তিন প্রধান অস্ত্রেই কোভিড-১৯-কে ঘায়েল করার চেষ্টা চলছ। ছুটি চলাকালীন তো বটেই, তা উঠলেও এই সাবধানতাগুলো আমাদের মেনে চলতে হবে বলে মত বিশেষজ্ঞদের। প্রতিষেধক বা ওষুধ না পাওয়া পর্যন্ত বদলে ফেলতে হবে পুরনো জীবনযাপনের অনেকটাই।
-
বাইরে বের হলে মাস্ক-সাবান-স্যানিটাইজার ছাড়াও তার সঙ্গে যোগ হবে অনেক কিছুই।
-
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সময়টা বাইরের খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বিকেল হলেই স্ন্যাক্স বা ক্যাফে-রেস্তরাঁপ্রিয় মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে আরও কয়েক মাস। বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘প্রতিষেধক বা ওষুধ না মেলা অবধি বাড়িতে বানানো খাবার খাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।’
-
বাজার-দোকান করার জন্য বাইরে যেতে হলে খুব দরকার না পড়লে বাড়িতে মোবাইল রেখে যান। যাদের অফিস করতে হয়, তারা মোবাইল রাখুন ব্যাগের মধ্যে। খুব দরকার না হলে ফোন বার করবেন না। মোবাইল থেকেও সংক্রমণ ছড়ায়। বাড়ি ফিরে অ্যান্টিসেপটিক লোশনে তুলো ভিজিয়ে মুছে নিন মোবাইল।
-
বাজারের ব্যাগ তো বটেই, অফিসের ব্যাগও সাবান জল, কীটনাশক মেশানো জল বা পটাশিয়াম পারম্যাঙ্গানেট মেশানো জলে তুলো ভিজিয়ে তা দিয়ে মুছে নিতে পারেন। বাজারের ব্যাগ অবশ্যই কেচে নেবেন।
-
বেরনোর জন্য গাড়ি ব্যবহার করলে সেই গাড়ি নিয়ম করে ধুতে হবে। জীবাণুনাশক স্প্রে করতে হবে নিয়মিত।
-
এই সময় হাতে কোনো রকম গয়না পরবেন না। হাতে ঘড়ি, আংটি, পাথর পরার অভ্যাস রয়েছে অনেকের। এই ক’দিন সেসব অভ্যাস সরিয়ে রাখাই ভাল। বিশেষজ্ঞদের মতে, যে কোনো ধাতব জিনিসে এই ভাইরাস থেকে যায় অনেক ক্ষণ। তাই আংটি-পাথর থেকে সংক্রমণ ছড়ায়। তা ছাড়া এ সব হাতে থাকলে হাত ধুতেও অসুবিধা হয়।
-
এই সময় সাধারণ ময়েশ্চারাইজার ছাড়া খুব বেশি মেক আপ না করাই ভালো। মেক আপের রসায়নিক উপাদান বাতাসে ভেসে বেরনো নানা অণুকে ত্বকে আটকে রাখতে পারে। বলা ভাল, এঁটে বসিয়ে রাখে। তাই খুব বেশি মেক আপের দরকার নেই। একান্ত প্রয়োজনে সানস্ক্রিন মাখুন। তবে চোখ-মুখ ও ঠোঁটকে যত প্রসাধনবিহীন রাখবেন, ততই সে সব পরিষ্কারে সুবিধা। তবে বার বার হাত ধুতে হবে ও মাস্ক পরতে হবে বলে ত্বক শুকিয়ে র্যাশ বেরতে পারে।
-
নিয়মিত বেরতে হলে দু’টি মাস্ক ব্যাগে রাখুন। মুখে বাঁধা মাস্ক কোনও কারণে নষ্ট হলে বা ভিজে গেলে কাজে লাগবে অন্যটি।
-
টাকাপয়সা ঘাঁটার কাজ বেশি করতে হলে হাতে গ্লাভস পরুন। বাজার-দোকানের সময়েও হাতে গ্লাভস পরলে ভালো হয়। গ্লাভস হাতে থাকলে নাকে-মুখে হাত দেয়ার প্রবণতাও তুলনামূলকভাবে কমে। তা ছাড়া গ্লাভস পরলে অন্যের হাতের সঙ্গে সরাসরি আপনার হাতের সংযোগ কমে।
-
বাড়ি থেকে বেরনোর সময় চেষ্টা করুন ফ্লাস্কে গরম জল নিয়ে যেতে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বারে বারে অল্প করে গরম জল পান করলে করোনা সমেত যে কোনও ড্রপলেট সংক্রমণ কিছুটা অন্তত প্রতিহত করা যায়।
-
গরমে কষ্ট হলেও চেষ্টা করুন জুতোর সঙ্গে মোজা পরতে। বেশিক্ষণ এসিতে থাকলে এটা নিয়ে কোনো অসুবিধা হওয়ার কথা নয়। তা না থাকলে একটু পাতলা সুতির মোজা পরুন। ফিরে জুতো-মোজা খুলে হাতে নিয়ে সোজা বাথরুমে চলে যান। পায়ের থেকে নাক-মুখ অনেকটা দূরে থাকে ঠিকই। কিন্তু তাকে যতেœ রাখতে হবে, বাইরে বেরলে হাতের মতো করেই পা মুড়ে ফেলাই বুদ্ধিমানের কাজ।
-
জুতো সাবান দিয়ে ধোওয়া সম্ভব নয় সব সময়। রবারের বা বর্ষার জুতো পরে বের হলে অবশ্যই বাড়ি ফিরে তা ধোবেন। অন্য রকম জুতো পরলে রোজ স্যানিটাইজার স্প্রে করে নিন জুতোয়। তাতেও অসুবিধা হলে বাড়ি ফিরে আলাদা জায়গায় জুতো রাখুন, পরের দিন সকালে ঘণ্টাখানেক কড়া রোদে রেখে দিন।
-
মেডিসিন বিশেষজ্ঞ সৌত্রিক মুখোপাধ্যায়ের মতে, পুলিশকর্মী, সাংবাদিক, চিকিৎসক— যারা এই মুহূর্তে সবচেয়ে বেশি বাইরে বেরচ্ছেন এবং লকডাউন উঠলেও যাদের গুরুত্ব এতটুকু কমবে না, তারা এখনো প্রতিদিন বাড়ি ফিরে হালকা গরম জলে চুল ধুয়ে নিন। ড্রায়ার দিয়ে ভাল করে শুকিয়ে নিন চুল। তাতে ঠান্ডা লাগার হাত থেকে কিছুটা রক্ষা পাবেন।
-
মাথার চুলও পারলে ঢেকে রাখুন। এমন মন্তব্য করলেন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ গৌতম বরাট। ড্রপলেট ছড়াতে পারে তিন থেকে ছ’ফুট। তাই ভিড় বাসে-ট্রেনে যাতায়াত শুরু হলে এই দূরত্ব কিছুতেই মেনে চলা যাবে না। এ দিকে কোনো কারণে চুলে হাত দিয়ে সেই হাতই ফের চোখে-মুখে যেতেই পারে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে চুল ঢেকে রাখুন টুপি বা স্কার্ফে। বাড়ি ফিরে সেই টুপি বা স্কার্ফ কেচে নিন।