মঙ্গল গ্রহ থেকে চন্দ্র অভিযানের যে নারী বিজ্ঞানী সংসারও সামলান
ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ‘ইসরো’র মঙ্গল গ্রহ থেকে চন্দ্র অভিযানের সাথে যুক্ত আছেন এক নারী বিজ্ঞানী। তিনি বৈজ্ঞানিক কাজের পাশাপাশি সামলান সংসার ও সন্তানদের হোমওয়ার্ক। জেনে নিন সেই নারী সম্পর্কে।
-
রাতের আকাশ পাগলের মতো টানত কিশোরীকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা ছাদে শুয়ে শুয়ে তারা দেখত সে। মনে চলে যেত আকাশ বেয়ে। তারাদের দেশে হারিয়ে যাওয়া সে দিনের কিশোরী আজ অভিজ্ঞ বিজ্ঞানী। ছুঁয়ে ফেলেছেন চাঁদের মাটি।
-
ছোটবেলা থেকেই রাতে পড়াশোনা করতে ভালবাসতেন ভারতের লক্ষ্নৌয়ের ঋতু করিধাল। যখন নিশ্চুপ হয়ে যেত পাড়া। বই খুলে বসতেন লখনৌয়ের মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে, ঋতু। পাশে পেতেন মাকেও। সংসারের কাজ সেরে ঘুম চোখে হলেও পড়ার সময় মেয়েকে সঙ্গ দিতেন তিনি।
-
চাঁদে যেতে চান, মাকে বলতেন ঋতু। শুনে হেসে মা বলতেন, তার জন্য টাকা জমাতে হবে। যেখান থেকে যা টাকা পেতেন, ঋতু জমাতেন। নইলে তার মতো সাধারণ পরিবারের মেয়ে কী করে চাঁদে পাড়ি দেবে!
-
আকাশপাঠের সঙ্গে সমান তালে চলতে থাকে বই পড়া। সবচেয়ে প্রিয় বিষয় ছিল গণিত আর পদার্থবিদ্যা। লখনৌয়ের নবযুগ কন্যা বিদ্যালয়ের পরে মহিলা বিদ্যালয় পি জি কলেজ। সেখান থেকে পদার্থবিজ্ঞানে স্নাতক হওয়ার পরে লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর।
-
স্নাতকোত্তরে মেধাবী ফল। শুরু হল উচ্চশিক্ষার জন্য প্রবেশিকা পরীক্ষা। গ্র্যাজুয়েট অ্যাপটিটিউড টেস্ট ইন ইঞ্জিনিয়ারিং বা ‘গেট’-এ ভালো স্কোর করে অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রির জন্য সুযোগ পান বেঙ্গালুরুর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব সায়েন্সে। সেখান থেকে এম টেক।
-
ইসরোয় চাকরির আবেদন করলেন ঋতু। খুব দেরি করতে হয়নি। ডাক এল, পরীক্ষা ও ইন্টারভিউয়ের। যেতে হবে বেঙ্গালুরুতে। বাবাকে সঙ্গে নিয়ে গেলেন, পরীক্ষা, ইন্টারভিউ দিলেন। পেয়ে গেলেন ইসরোর চাকরিও।
-
বাইশ বছর আগে ট্রেনের দ্বিতীয় শ্রেণির কামরায় বাড়ি থেকে দু’হাজার কিলোমিটার দূরে প্রথম চাকরিতে চললেন ঋতু। বাবা, মা, দুই ভাই এবং বোনকে ফেলে।
-
স্কুল কলেজে যে ইসরোর বিভিন্ন খবরের কাটিং জমাতেন ঋতু, ১৯৯৭ সালে যোগ দিলেন সেই সংস্থায়। নবীন বিজ্ঞানী হিসেবে। তার দশ বছর পরে ২০০৭ সালে তদানীন্তন রাষ্ট্রপতি, প্রয়াত এ পি জে আবদুল কালামের হাত থেকে পেয়েছিলেন ‘ইয়ং সায়েন্টিস্ট অ্যাওয়ার্ড’।
-
২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ অভিযানে ঋতুই মিশন ডিরেক্টর। এর আগেও ইসরোর বিভিন্ন গবেষণায় তিনি ছিলেন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে। ‘মার্স অরবিটার মিশন’ বা ‘মম’-এর ডেপুটি অপারেশন্স ডিরেক্টর ছিলেন তিনি। ‘মঙ্গলযান’ কোন পথ ধরে যাবে, উৎক্ষেপণের কত দিন কত ঘণ্টায় তা ঢুকে পড়বে মঙ্গলের প্রথম কোনো কক্ষপথে, সেই সব কিছু চূড়ান্ত করার দায়িত্ব ইসরো যাদের হাতে দিয়েছিল, ঋতু ছিলেন তাদের মধ্যমণি।
-
বিজ্ঞানসাধনার পাশাপাশি আছে সংসারও। ঋতুর স্বামী অবিনাশ শ্রীবাস্তব চাকরি করেন বেসরকারি সংস্থায়। মেয়ে অনীশা এবং ছেলে আদিত্যকে নিয়ে তাদের সংসার বেঙ্গালুরুতে। মঙ্গল অভিযানের সময় প্রচণ্ড ব্যস্ত হয়ে পড়লেও ঋতু প্রতিদিন বাড়ি ফিরে দুই ছেলেমেয়েকে পড়াতে বসাতেন। তারপর সংসারের প্রয়োজনীয় দেখভাল করে আবার মধ্য রাত থেকে ভোর অবধি কাজে ডুবে যেতেন। সব ক্ষেত্রেই পেয়েছেন স্বামীর সাহায্য ও উৎসাহ। জানিয়েছেন, ঋতু।
-
‘মঙ্গলযান’-এর পরে ‘বিক্রম’-কে চাঁদে পাঠিয়ে ঋতু এখন দেশের ‘রকেট উওম্যান’। তার সাফল্যের নেপথ্যে কৃতিত্ব দিতে চান ছোটবেলায় শোনা মায়ের বকুনিকেই। যে তিরষ্কার আদতে উজ্জীবিত করত চাঁদকে স্পর্শ করার।
-
ঋতুর আশা, দেশের মেয়েরা আরও বেশি করে এগিয়ে আসবেন বিজ্ঞান গবেষণায়। সামজের বিভিন্ন স্তরের মেধাবী ছাত্রীদের তিনি আরও বেশি করে দেখতে চান বিজ্ঞানী ও গবেষকের ভূমিকায়।