জীববৈচিত্র্যে ভরপুর গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ
অস্ট্রেলিয়ার উত্তর-পূর্ব উপকূলে অবস্থিত প্রায় ২৫০০ থেকে ২৯০০টি একক প্রবাল প্রাচীরের সমন্বয়ে গঠিত, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যে সমৃদ্ধ ‘দ্য গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ’ পৃথিবীর বৃহত্তম প্রবাল প্রাচীর। যা পৃথিবীর সবচেয়ে বিচিত্র বাস্তুতন্ত্রের একটি এবং অস্ট্রেলিয়ার দর্শনীয় স্থানগুলোর অন্যতম।
-
৪০০ রকমের প্রবাল, ১,৫০০ প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ আর চার হাজারের অধিক প্রজাতির মলাস্কা পর্বের প্রাণী এই প্রবাল প্রাচীরকে করেছে জীববৈচিত্র্যের স্বর্গ। এছাড়া এখানে আছে ডুগং বা সমুদ্রধেনু আর সবুজ কচ্ছপের মতো আরো অনেক বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। ছবি: সংগৃহীত
-
সব মিলিয়ে গড়ে উঠেছে পৃথিবীর বুকে আরেক পৃথিবী, যা আমাদের জগত থেকে সম্পূর্ণ স্বতন্ত্র। ১৯৮১ সালে ইউনেস্কো একে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই সমগ্র অঞ্চলকে মোট ৭০টি বায়োরিজিওনে ভাগ করে দেয় ইউনেস্কো, যার মধ্যে ৩০টি হচ্ছে প্রবাল বায়োরিজিওন। ছবি: সংগৃহীত
-
গ্রেট ব্যারিয়ার রিফকে সংক্ষেপে ‘জিবিআর’ বলা হয়। তিন লাখ ৪৮ হাজার বর্গ কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত এই প্রবাল প্রাচীর অঞ্চলে রয়েছে ২৫০ কিলোমিটারের বেশি বৈচিত্র্যময় আড়াআড়ি মহীসোপান। আর মহীসোপান থেকে ভেতরের দিকে পানির গভীরতা সর্বোচ্চ দুই হাজার মিটার। ছবি: সংগৃহীত
-
ছোটখাটো বালুকাময় প্রবালদ্বীপ থেকে শুরু করে বড় বড় পাথুরে দ্বীপসহ মোট ৯০০ এর অধিক দ্বীপ রয়েছে এই সাড়ে তিন লাখ বর্গ কিলোমিটার স্থান জুড়ে। এসব দ্বীপের মধ্যে কোনো কোনোটি আবার উঠে গেছে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১১০০ মিটার উচ্চতায়। এসব দ্বীপগুলো নিয়ে গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে তৈরি হয়েছে পৃথিবীর অন্যতম দর্শনীয় সামুদ্রিক দৃশ্যাবলী। ছবি: সংগৃহীত
-
প্রায় ২০ হাজার বছর আগে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমাগত বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং প্রায় ছয় হাজার বছর পূর্ব পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের প্রবাল প্রাচীরগুলো এ সময়সীমায়ই গঠিত হয়। তবে প্রাচীরের একটা বড় অংশ একসময় মহাদেশীয় দ্বীপ ছিল, যেগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উপরে অবস্থান করতো। কিন্তু সমুদ্রের পানির উচ্চতা ধীরে ধীরে বেড়ে যাওয়ায় সেগুলো পানিতে নিমজ্জিত হয় এবং একসময় প্রবাল প্রাচীরগুলো দ্বীপের উপরেও বিস্তার লাভ করে। তবে এই বিস্তৃতির বিপরীতে প্রবাল প্রাচীরের একটি বড় অংশ হারিয়ে গেছে বলেও ধারণা করা হয়। ছবি: সংগৃহীত
-
এই বিশাল প্রবাল প্রাচীর জুড়ে রয়েছে অসংখ্য বিপন্ন এবং বিলুপ্তপ্রায় প্রাণী। এর মধ্যে রয়েছে ৩০টি বিরল প্রজাতির তিমি, শুশুক এবং ডলফিন। আর সমুদ্রধেনু বা ডুগং (গাভীর মতো দেখতে বিশাল উদ্ভিদভোজী প্রাণী) এর বসবাস তো এখানেই সবচেয়ে বেশি। ক্লোনফিশ, রেড থ্রোট এমপেরর, রেড ব্যাস, একাধিক প্রজাতির স্ন্যাপার ও কোরাল-ট্রাউট সহ ১,৫০০ প্রজাতির মাছের বসবাস গ্রেট ব্যারিয়ার রিফে। ছবি: সংগৃহীত
-
অন্যদিকে উপকূল থেকে ৫০ মিটার গভীরের মধ্যে উষ্ণ পানিতে ১৭ প্রজাতির সাপ শনাক্ত করা হয়েছে। এখানে বসবাস করা ৬ প্রজাতির কচ্ছপের মধ্যে সবুজ কচ্ছপগুলো (গ্রিন সি টার্টেল) সবচেয়ে বিরল প্রজাতির। ১২৫ প্রজাতির শার্ক আর স্কেটের পাশাপাশি এখানে রয়েছে একাধিক প্রজাতির নোনা পানির কুমির। আরও আছে সাত প্রজাতির ব্যাঙ। ছবি: সংগৃহীত
-
এছাড়া ২২ প্রজাতির সামুদ্রিক পাখি ও ৩২ প্রজাতির উপকূলীয় পাখি সহ মোট ২১৫ প্রজাতির পাখি উড়ে বেড়ায় এই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফ অঞ্চলে। ছবি: সংগৃহীত
-
এখানকার উত্তর এবং দক্ষিণ মেরুতে পাখির বসবাস সবচেয়ে বেশি। বংশবৃদ্ধির জন্যও পাখিরা সাধারণভাবে এই দুই স্থানকেই বেছে নেয়। বছরে প্রায় ১৭ লাখেরও বেশি পাখি এই দুই স্থানে প্রজনন ঘটায়। গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের দ্বীপগুলোতে আছে ২,১৯৫ প্রজাতির উদ্ভিদ। ছবি: সংগৃহীত
-
তবে দক্ষিণাঞ্চলের উদ্ভিদগুলো যেখানে বৃক্ষজাতীয়, উত্তরাঞ্চলের অধিকাংশ উদ্ভিদই গুল্ম এবং বিরুৎ। এছাড়াও আছে ৩০০ এর অধিক প্রজাতির অ্যাসিডিয়ান। ছবি: সংগৃহীত
-
অন্যদিকে হেলিমেডার ১৩টি প্রজাতি সহ এখানকার প্রবাল প্রাচীরে প্রায় ৫০০ প্রজাতির শৈবাল খুঁজে পেয়েছেন জীববিজ্ঞানীরা, যা পুরো প্রাচীরজুড়ে এমন আবরণের সৃষ্টি করেছে যেখানে তৈরি হয়েছে ‘মিনি-ইকোসিস্টেম’। এই মিনি বাস্তুসংস্থানকে অনেকে রেইনফরেস্টের সাথেও তুলনা করে থাকেন। ছবি: সংগৃহীত
-
পুরো পৃথিবী জুড়ে শ্রেষ্ঠ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের স্থানগুলোর তালিকা করতে গেলে অবশ্যম্ভাবীভাবেই গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের নাম চলে আসবে। পানির উপরে দ্বীপগুলো থেকে পানির নিচে জীববৈচিত্র্যে ঠাসা প্রবাল প্রাচীর, গ্রেট ব্যারিয়ার রিফের সৌন্দর্য অতুলনীয়। ছবি: সংগৃহীত