সময়ের স্রোতে হারিয়ে যাওয়া পেশা
জীবনধারণের তাগিদে তৈরি হয় পেশার। আবার সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেসব পেশার পরিবর্তন হয়। এমনকি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির প্রসার ও সমাজব্যবস্থার পরিবর্তনের ফলে এক সময় তা বিলুপ্ত হয়ে যায়।
-
পালকি ছিল এক সময়ে বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী ও প্রাচীন বাহন। মানুষ বহন করার কাজেই এর ব্যবহার হতো। সাধারণত সম্ভ্রান্ত বংশের লোকেরা এর মাধ্যমে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ভ্রমণ করতেন। বিয়েতে ব্যবহৃত হতো পালকি। কিন্তু এখন তা আর দেখা যায় না। ছবি: সংগৃহীত
-
তুলা ধুনা অতি প্রাচীন একটি পেশা। তুলা ধুনা করা পেশাজীবীরা লেপ, বালিশ ও তোষক প্রস্তুত করতেন। অতীতে তারা গ্রামে-শহরে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তুলা ধুনা এবং লেপ, বালিশ ইত্যাদি তৈরির কাজ করতেন। বর্তমানে রাজধানীতে এই পেশা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। তবে, তারা এখন লেপ-তোষক ইত্যাদি তৈরির বড় বড় দোকানে শ্রমিকের কাজ করে থাকেন। ছবি: সংগৃহীত
-
এক সময় ঢাকা শহরে গোয়ালাদের বসবাস ছিল। তারা গরু লালন-পালন করত এবং শহরবাসীর নিকট দুধ সরবরাহ করত। দুধ সরবরাহ ছাড়াও তারা দুধ দিয়ে ঘি, দই, ছানা তৈরি করত। ঢাকার মিষ্টি তৈরিকারকরা দুধের জন্য গোয়ালাদের উপর দারুণভাবে নির্ভরশীল ছিল। ছবি: সংগৃহীত
-
আগে রাজধানীসহ দেশের প্রায় সব জায়গায় জলা-জঙ্গলে ভর্তি ছিল। ফলে সাপও ছিল প্রচুর। সাপুড়েও ছিল। তবে মূল শহর থেকে এই পেশা হারিয়ে গেছে। তাদের কাজ ছিল বাড়ি থেকে সাপ বের করা। বিশেষ করে গ্রামে বর্ষার শেষে সাপের প্রকোপ বেড়ে যেত। এসময় তাদের কদর বাড়তো। ছবি: সংগৃহীত
-
বিশেষ ধরনের জীবনযাপন, কঠোর পর্দার মধ্যে বসবাস এবং প্রহরীদের প্রহরায় ঘোড়াগাড়িতে যাতায়াত করতেন বাইজিরা। এ কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে বাইজিদের সম্পর্কে অনেক কৌতূহল ছিল। ইংরেজ শাসন স্থায়ী হওয়ার পর বাইজি পেশায় ধীরে ধীরে ধস নামে। ঢাকার বাইজি পাড়ায়ও লাগে এর হাওয়া। নবাব, জমিদারদের আয়ের উৎস কমে যেতে থাকে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করা আর সম্ভব হয়নি। তখন ঢাকায় নব্য ধনি শ্রেণির জন্ম হয়। তারা বাইজিদের নাচ-গান উপভোগের চেয়ে শ্বেতাঙ্গ রমণীদের সঙ্গে বলড্যান্স উপভোগ করতে অধিক অর্থ ব্যয় করতে উৎসাহী হয়ে উঠেন। এভাবেই ঢাকা শহর থেকে বাইজিরা হারিয়ে যেতে থাকে। ছবি: সংগৃহীত
-
হুঁকা এক সময় খুব জনপ্রিয় ছিল। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হুঁকা নামের ধূমপানের বস্তুটি হারিয়ে গেছে। কিন্তু একসময় ঢাকা শহরেই ছিল উপমহাদেশের বৃহত্তম হুঁকা বানানোর শিল্প। হুঁকার নল যারা বানাতো তাদের বলা হতো ‘নৈচাবন্দ’। আজকের ঢাকার যে টিকাটুলি এলাকা তা ছিল মূলত হুঁকার টিকাদারদের আবাসস্থল। টিকাটুলির এই টিকাদাররা অতিসাধারণ টিকিয়াকে অসাধারণ শিল্পে পরিণত করেছিল। তাদের তৈরি টিকিয়ার কোনো তুলনা ছিল না। এগুলো এতো হাল্কা ও দাহ্য ছিল যে, দিয়াশলাইয়ের একটা শলা দিয়েই অনেকগুলো টিকিয়াতে আগুন ধরানো যেতো। ছবি: সংগৃহীত
-
হাতপাখা নির্ভর এই পেশাজীবীরা অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে। রাজা-জমিদারদের আমলে এই পেশাজীবীদের অনেক কদর ছিল। বড় আকারের তালপাখার নাম ছিল আরানি, ছোটগুলোর নাম আরবাকি। ছবি: সংগৃহীত
-
১৮৭৮ সালে ঢাকা শহরে আধুনিক সুপেয় পানি সরবরাহ ব্যবস্থা চালু হয়। এর আগে ঢাকায় খাবার পানির উৎস ছিল পুকুর, কুয়া, নদী। সে সময় কিছু লোক টাকার বিনিময়ে মশকে (চামড়ার ব্যাগ) করে ঢাকা শহরের বাসায় বাসায় খাবার পানি পৌঁছে দিতেন। এ ধরনের পেশাজীবীদের বলা হত ‘ভিস্তিওয়ালা’ বা ‘সুক্কা’। ছবি: সংগৃহীত
-
টেলিগ্রাম, ফ্যাক্স, টেলিফোন আসার পরই কমে গেছে চিঠির গুরুত্ব। আর চিঠির গুরুত্ব কমে আসায় কমে গেছে এই মাধ্যমের সঙ্গে জড়িত মানুষদের গুরুত্বও। যারা চিঠি আনা-নেওয়া করতেন তাদের বলা হতো রানার। প্রথমদিকে রাজা-বাদশাদের প্রশাসনিক কাজের জন্য রানারদের নিয়োগ করা হতো। তারপর বণিকদের বাণিজ্য-সংক্রান্ত কাজেও রানাররা নিয়োজিত হতেন। খুব প্রত্যন্ত অঞ্চলেই কাজ করতেন এই রানাররা। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব অতিক্রম করে চিঠির বোঝা পৌঁছে দিতেন অন্য আরেক রানারের হাতে। শুধু চিঠিই নয় বরং খামে করে টাকা পয়সার পরিবহনের কাজও করতেন রানার। ছবি: সংগৃহীত