যেসব দেশে সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক

উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়া গত সাত দশক ধরে একে অপরের বিরোধিতা করে আসছে প্রায় সব ক্ষেত্রেই। উভয় দেশই একে অপরের থেকে বেশি শক্তিশালী হওয়ার দৌড়ে সামরিক শক্তি বাড়িয়েই চলেছে। উত্তর কোরিয়া এক বিশেষ সামরিক নীতি মেনে চলে, যার নাম ‘সোঙ্গুন’। এই নীতি অনুযায়ী, দেশের মধ্যে থাকা সমস্ত সম্পদের উপর সেনাবাহিনীর অগ্রাধিকার রয়েছে। এই নিয়মের ব্যতিক্রম নন সেই দেশের বাসিন্দারাও। ছবি: সংগৃহীত

দক্ষিণ কোরিয়াতেও পুরুষদের জন্য সেনায় যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। পুরুযদের ২১ মাস সেনাবাহিনীতে বা ২৩ মাস নৌবাহিনীতে বা ২৪ মাস বিমানবাহিনীতেযুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক। তবে কেউ চাইলে বিকল্প হিসেবে পুলিশ ও দমকলেও যোগ দিতে পারেন। তবে সফল ক্রীড়াবিদরা এই নিয়ম থেকে অব্যাহতি পেতে পারেন। ছবি: সংগৃহীত

রাশিয়ায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার নিয়ম বেশ কঠিন। সদ্য সেনাদলে যোগ দেওয়া সদস্যদের প্রায়শই উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নির্যাতন সহ্য করতে হয় বলে অভিযোগ। সে দেশে এই প্রক্রিয়া ‘হ্যাজিং’ নামে পরিচিত। তবে রাশিয়া অন্য দেশের সঙ্গে সামরিক সংঘাতের সময় প্রশিক্ষণ না পাওয়া সৈন্যদের ব্যবহার করে বলেও দুর্নাম রয়েছে। ইউক্রেন এবং চেচনিয়ার সঙ্গে রাশিয়ার যুদ্ধ এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ছবি: সংগৃহীত

নিয়ম অনুযায়ী রাশিয়ার ১৮ থেকে ২৭ বছর বয়সী পুরুষদের ১২ মাসের জন্য সেনায় যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। এই নির্দেশ অমান্য করলে জরিমানা বা কারাদণ্ডও হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

ব্রাজিলের সংবিধান অনুযায়ী দেশের সমস্ত পুরুষের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া আবশ্যিক। সর্বনিম্ন ১২ মাসের জন্য সামরিকবাহিনীতে যুক্ত থাকতে হয় সে দেশের পুরুষদের। তবে কেউ চাইলে আট বছর পর্যন্ত নিজের ইচ্ছায় সেনাবাহিনীতে যুক্ত থাকতে পারেন। ব্রাজিলে সাধারণত ১৮ বছর বয়স পেরোলেই যুবকদের সেনায় ভর্তি করানো হয়। বাহিনীতে যোগ দিতে অনিচ্ছুকদের ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ারও আইন রয়েছে। তবে সেনাদলে যোগ দেওয়ার এই নিয়ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে নারীদের। ছবি: সংগৃহীত

১৯৪৯ সালের ইজরায়েলের নিরাপত্তা পরিষেবা আইন অনুযায়ী আরবের ইজরায়েলিরা ছাড়া বাকি সব ১৮ বছর বয়সী ইজরায়েলির সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দিতেই হবে ইহুদি, ড্রুজ বা সার্কাসিয়ান বংশোদ্ভূত ইজরায়েলিদের। পুরুষদের কমপক্ষে দুবছর আট মাস এবং নারীদের দুবছর সেনায় যুক্ত থাকার বিধি রয়েছে সে দেশে। ছবি: সংগৃহীত

আরবের ইজরায়েলি ছাড়াও বিবাহিত এবং শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থদের সেনাদলে যোগ দেওয়ার নিয়ম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী, ইজরায়েলি পুরুষদের একাংশ এই নিয়মের অবসান চান। তারা বরং স্বেচ্ছায় সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার পক্ষে। ছবি: সংগৃহীত

ইরানের সংবিধান অনুযায়ী ১৮ বছর পেরোলেই সে দেশের যুবকদের দেড় থেকে দুবছরের জন্য সেনাবাহিনীতে যোগ দিতেই হবে। তবে নারীদের জন্য নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক নয়। এছাড়া শারীরিক অসুস্থতা থাকলেও এই নিয়ম থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে। ১৮ বছরের যুবকদের বাবার বয়স ৬০ বছরের বেশি হলে তারাও এই নিয়ম থেকে অব্যাহতি পাবেন। সেনায় যোগ দেওয়ার নিয়ম না মানলে ওই যুবক ভয়ানক সাজার মুখোমুখি হতে পারেন। সমস্ত মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ওই যুবকদের দেশ ছেড়ে যাওয়াতেও নিষেধাজ্ঞা জারি হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত

এই বছরেরে শুরুতে ইরান সরকার নয়া নিয়ম আনার প্রস্তাব দেয়। সেখানে ১০ হাজার ডলারের পরিবর্তে ৩৫ বছরের বেশি বয়সি পুরুষরা সেনায় যোগ দেওয়া থেকে ছাড় পেতে পারেন। তবে এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ানোয় এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হয়নি। বিক্ষোভকারীদের দাবি ছিল, সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে ধনীদের সুবিধা হবে। ছবি: সংগৃহীত

কিউবাতে ১৭ থেকে ২৮ বছর বয়সী পুরুষদের দুবছর দেশের সামরিকবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। ১৬ বছর হলেই তাদের সে দেশের সেনাদলে নাম নথিভুক্ত করতে হয়। দুবছর পরিষেবা দেওয়ার পর পুরুষরা সেনাবাহিনী ছেড়ে চলে গেলেও তাদের সেনার অংশ হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। ৪৫ বছর বয়স হওয়া পর্যন্ত দেশের স্বার্থে যখন খুশি আবারও সেনায় যোগ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হতে পারে ওই ব্যক্তিদের। সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে অস্বীকার করলে সেই ব্যক্তির কারাদণ্ড বা জরিমানাও হতে পারে। তবে নারীদের ক্ষেত্রে নিয়মটা একটু আলাদা। নারীরা স্বেচ্ছায় দুবছরের জন্য সেনা হিসেবে যোগ দিতে পারেন। তবে যোগ দিতেই হবে এমন বাধ্যবাধকতা নেয়। ছবি: সংগৃহীত

সুইজারল্যান্ডেও পুরুষদের নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক। সে দেশে পুরুষদের ২০ বছর বয়সের পর থেকে সেনায় যোগ দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। দুবছরের কিছু কম সময় পুরুষদের সেনাবাহিনীতে যুক্ত থাকা বাধ্যতামূলক। তবে নারীরা যোগ দিতে পারেন নিজেদের ইচ্ছায়। ছবি: সংগৃহীত

পুরুষদের অবশ্যই সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার এই নিয়ম বদলানোর জন্য ২০১৩ সালে সুইজারল্যান্ডে গণভোট হয়। তবে ৭৩ শতাংশ মানুষ পুরুষদের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে আবশ্যিকভাবে যোগ দেওয়ার পক্ষেই ভোট দেন। এর আগেও দুবার এই গণভোটের আয়োজন করা হয়েছিল। পুরুষদের জন্য নিয়ম তো পাল্টাইনি, উল্টে ২০২৪ সালের মধ্যে নারীদেরও সামরিকবাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক করার চিন্তাভাবনা চলছে। ছবি: সংগৃহীত

তুরস্কেও ২০ থেকে ৪১ বছর বয়সী পুরুষদের নিরাপত্তা বাহিনীতে যোগদান বাধ্যতামূলক। তবে ২০১৯ সালে সে দেশের আইনসভায় একটি নতুন আইন পাশ করিয়ে সেনাবাহিনীতে পরিষেবার সময়সীমা ১২ মাস থেকে কমিয়ে ছমাস করা হয়েছে। তবে কেউ চাইলে এর পরেও নিজের ইচ্ছায় সেনাবাহিনীতে থাকতে পারেন। তবে কেউ সেনাবাহিনীতে যোগ দিতে না চাইলে তার বিকল্পও রয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

২০১০ সালে সুইডেনে পুরুষদের আবশ্যিকভাবে সেনাদলে যোগ দেওয়ার নিয়ম বাতিল করা হলেও ২০১৭ সালে তা আবার ফিরিয়ে আনা হয়। তবে ২০১৪ সালে ক্রাইমিয়া রাশিয়ার দখলে যাওয়ার পর পরই সুইডেনে আবারও সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে চিন্তাভাবনা শুরু হয়। তবে আগে শুধু পুরুষদেরই সেনাতে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক থাকলেও ২০১৭ সালের পর পুরুষ এবং নারী উভয়ের জন্যই সেনাবাহিনীকে যোগ দেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়। সেনায় আবশ্যিকভাবে যুক্ত থাকার সময়কাল ৯ থেকে ১২ মাস। ছবি: সংগৃহীত

উত্তর-পূর্ব আফ্রিকার দেশ ইরিত্রিয়া সেনায় নিয়োগের নিয়মের জন্য কুখ্যাত। মানবাধিকার কমিশনের মতে, এই দেশের অনেক বাসিন্দা তাদের পুরো জীবন অনিচ্ছা সত্তে¡ও সামরিক বাহিনীতে কাটিয়েছেন। ২০০৩ সালে সরকারের তরফে নির্দেশ দেওয়া হয়, স্কুল শিক্ষা শেষ করার আগে ছেলে এবং মেয়ে উভয়ের জন্যই সামরিক প্রশিক্ষণ নেওয়া বাধ্যতামূলক। ছবি: সংগৃহীত

ইরিট্রিয়ার এই আইন অনুযায়ী, কমপক্ষে ১৮ মাস সেনাবাহিনীতে যুক্ত থাকতেই হবে। তবে সে দেশের অনেক বাসিন্দাকেই আজীবন সেনায় কাজ করে যেতে হয়। রিপোর্ট অনুযায়ী, এই আইনের হাত থকে বাঁচতে ১৮ থেকে ২৪ বছর বয়সী অনেক যুবক-যুবতীই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। ছবি: সংগৃহীত

২০০০ সালে ইথিয়োপিয়ার সঙ্গে সীমান্তবর্তী যুদ্ধের সময় ইরিট্রিয়ায় এই নিয়ম চালু করা হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে ইথিয়োপিয়ার সঙ্গে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হওয়ার পরও ইরিট্রিয়া সরকার এই আইনে কোনো বদল আনেনি। ছবি: সংগৃহীত