আফগানিস্তানের এক সময়ের রানি
এক সময়ের আফগানিস্তানের রানি ছিলেন সোরাইয়া। তাকে ঘিরে অনেক ঘটনা ঘটেছে সে সময়ে। জেনে নিন এই রানি সম্পর্কে।
-
সোরাইয়ার জন্ম হয়েছিল নির্বাসনে। আবার নির্বাসনেই মৃত্যু হয়েছে তার। তার ৭০ বছরের জীবনে আনন্দে জীবনযাপন করেছেন মাত্র ১০ বছর। তার মধ্যেই আফগান মাটিতে নারী স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিলেন। তিনি জনপ্রিয় হয়েছিলেন আফগানিস্তানের রানি হিসেবে। ছবি: সংগৃহীত
-
১৮৯৯ সালের ২৪ নভেম্বর সিরিয়ার দামেস্কে জন্মগ্রহণ করে সোরাইয়া। তার বাবা ছিলেন সর্দার মাহমুদ বেগ তর্জি। ধর্ম নিরপেক্ষ, আধুনিক আফগানিস্তানের প্রতিষ্ঠায় আজীবন লড়াই করে গিয়েছেন তিনি। আফগান সাংবাদিকতার জনকও বলা হয় মাহমুদকে। তৎকালীন আমীর আব্দুর রহমানের বিরুদ্ধে লেখালেখির জন্য মাহমুদ যখন সিরিয়ায় নির্বাসনে, সেখানেই জন্ম সোরাইয়ার। ছবি: সংগৃহীত
-
১৯০১ সালে আব্দুর রহমানের মৃত্যুর পর মাহমুদকে আফগানিস্তানে স্বাগত জানান তৎকালীন আমীর হাবিবুল্লা খান। সরকারে গুরুত্বপূর্ণ পদেও অধিষ্ঠিত হন মাহমুদ। সেই ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে পশ্চিমা সংস্কৃতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন আফগানিস্তান গড়ার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন তিনি। বাবার কাছ থেকেই আধুনিক পশ্চিমা শিক্ষায় হাতেখড়ি সোরাইয়ার। ছবি: সংগৃহীত
-
মূলত সিরিয়ায় পড়াশোনা করেন সোরাইয়া। পশ্চিমা দেশের সংস্কৃতিতেই বেশি স্বচ্ছন্দ ছিলেন তিনি। কৈশোরেই আমির হাবিবুল্লার ছেলে আমানাতুল্লা খানের প্রতি অনুরাগ জন্মায় তার। কিশোরী বয়সেই আমানাতুল্লার সঙ্গে বিয়ে হয় সোরাইয়ার। ১৯১৯ সালে আমানাতুল্লা আফগানিস্তানের রাজা হলে সোরাইয়ার মাথায় ওঠে রানির মুকুট। ছবি: সংগৃহীত
-
আমানাতুল্লা এবং সোরাইয়ার মধ্যে বয়সের পার্থক্য ছিল সাত বছরের। কিন্তু একে অপরের দোসর হয়ে উঠেছিলেন তারা। প্রশাসনিক কর্মসূচি, শিকার করা, মন্ত্রিসভার বৈঠক, যুদ্ধ, এমনকি বিদ্রোহী অধ্যুষিত এলাকা পরিদর্শন, সব কিছুতেই আমানাতুল্লার পাশে দেখা যেত সোরাইয়াকে। সোরাইয়াকে দেশের শিক্ষামন্ত্রীও নিযুক্ত করেন আমানাতুল্লা। ১৯২৮ সালে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় সোরাইয়াকে সাম্মানিক ডিগ্রি প্রদান করে। ছবি: সংগৃহীত
-
বহু ইতিহাসবিদ মনে করেন, সোরাইয়াই প্রথম মুসলিম নারী যিনি প্রকাশ্যে স্বামীর সঙ্গে বের হওয়ার সাহস দেখিয়েছিলেন। ১৯২৭ থেকে ১৯২৮ সাল পর্যন্ত ইউরোপের নানা দেশে স্বামীর সফরসঙ্গীও হয়েছিলেন সোরাইয়া। সেই সময় তাকে দেখতে ইউরোপের রাস্তায় মানুষের ঢল নামত বলে জানা যায়। টাইম ম্যাগাজিনের প্রভাবশালী নারীদের তালিকাতেও জায়গা পান সোরাইয়া। ছবি: সংগৃহীত
-
১৯২৬ সালে দেশের সপ্তম স্বাধীনতা দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেন সোরাইয়া। তিনি বলেন, ‘স্বাধীনতার অধিকার সকলের। শুধু পুরুষদের নিয়ে কি দেশ চলতে পারে? দেশসেবায় নারীদের যোগদানও সমান জরুরি। আমাদের দেশের ইতিহাস তো বটেই, ইসলামেও মহিলাদের অবদানের উল্লেখ রয়েছে। তাই মহিলাদেরও পড়াশোনার সমান অধিকার থাকা প্রয়োজন।’ ছবি: সংগৃহীত
-
ইউরোপ সফর থেকে ফিরে আফগানিস্তানের খোলনলচে বদলে দিতে উদ্যোগী হন আমানাতুল্লা এবং সোরাইয়া। মেয়েদের জোর করে বিয়ে দেওয়া, এক পুরুষের একাধিক বিয়েতে নিষেধাজ্ঞা বসায় আমানাতুল্লা সরকার। মেয়েদের বিয়ের বয়স বাড়িয়ে ১৬ বছর করা হয়। তাদের শিক্ষা এবং ভোটদানের অধিকারও দেন আমানাতুল্লা। ছবি: সংগৃহীত
-
১৯২১ সালে কাবুলে প্রথম মেয়েদের জন্য মাসতুরত প্রাথমিক স্কুলের প্রতিষ্ঠা করেন সোরাইয়া। পরবর্তীকালে মেয়েদের জন্য একাধিক স্কুল খোলেন তিনি। ১৯২৮ সালে ওই সমস্ত স্কুল থেকে বাছাই করা ১৫ জন পড়ুয়াকে উচ্চশিক্ষার জন্য তুরস্ক পাঠায় আমানাতুল্লা সরকার। ছবি: সংগৃহীত
-
শোনা যায়, রক্ষণশীলতার বেড়াজাল কাটিয়ে বেরিয়ে আসতে মহিলাদের উৎসাহ দিতেন সোরাইয়া। ইসলামে কোথাও মহিলাদের হিজাব পরার নির্দেশ নেই বলে একবার এক সমাবেশে মন্তব্য করেন আমানাতুল্লা। সেখানে সকলের সামনেই নিজের হিজাব টেনে ছিঁড়ে ফেলেন সোরাইয়া। তার দেখাদেখি অন্য মন্ত্রীদের স্ত্রীরাও নিজেদের হিজাব ছিঁড়ে ফেলেন। ছবি: সংগৃহীত