কলেজ থেকে ঝরে পড়া যুবক যেভাবে লাখপতি
সবাইকে চমকে দিলেন কলেজ থেকে বাদ পড়া এই যুবক। জীবনে কিছু হতে পারবেন না বলে যারা একদিন বলেছিলেন, তারাই আজ এই যুবকের প্রশংসা করছেন। জেনে নিন এই যুবক সম্পর্কে।
-
পড়াশোনায় মন বসত না। ক্লাসে শিক্ষকরা যা পড়াতেন, তা তার মাথায় কিছুই ঢুকতো না। কোনো রকম কলেজে ভর্তি হলেও পড়াশোনার ভার আর বইতে পারছিলেন না। মা-বাবার বিরুদ্ধে গিয়েই মাঝপথে কলেজ ছেড়ে দেন। নিজের পরিশ্রম আর অদম্য জেদে ভর করে মিলিয়নিয়র সিইও হয়ে গেলেন সেই কলেজ বাদ পড়া ছেলে।
-
তিনি সুশীল সিংহ। বয়স এখন ৪০ বছর। নিরাপত্তারক্ষীর এই কলেজ বাদ পড়া ছেলে কীভাবে মিলিয়নিয়র হলেন? ভারতের উত্তরপ্রদেশের জুনপুরের একটি গ্রামে জন্ম তার। মাত্র তিন বছর বয়সে জীবিকার কারণে বাবা তাদের নিয়ে চলে এসেছিলেন মুম্বাইয়ে।
-
মুম্বাইয়ের এক বস্তিতে তারা থাকতেন। বাবা একটি ব্যাংকে নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করতেন। সুশীলরা ছিলেন তিন ভাই-বোন।
-
তাদের সংসারে তেমন অভাব ছিল না। বাবা যা রোজগার করতেন, তা দিয়ে দু’বেলা খাওয়া-পরা জুটে যেত তাদের। সবচেয়ে ভরসার বিষয় হলো, তাদের মাথা গোঁজার ছাদ ছিল নিজেদের। সেখানকার মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের একটি হিন্দি মিডিয়াম স্কুলে সুশীলকে ভর্তিও করে দিয়েছিলেন বাবা। দশম শ্রেণি পর্যন্ত তার পড়াশোনা ভালোই চলছিল।
-
কিন্তু একাদশ শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই ক্রমে পড়াশোনার প্রতি অমনোযোগী হয়ে পড়তে শুরু করেন সুশীল। পরের বছর দ্বাদশ শ্রেণির বোর্ডের পরীক্ষায় বসেননি।
-
অনিচ্ছা সত্ত্বেও মা-বাবার কথায় অবশেষে দ্বাদশ শ্রেণি উত্তীর্ণ হন। তারপর কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে ভর্তি হলেন এলাহাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে। তিন বছরের স্নাতক স্তরের দ্বিতীয় বর্ষে এসে পড়াশোনায় ইতি টানার কথা সুশীল স্থির করে নিয়েছিলেন। ২০০৩ সালে দ্বিতীয় বর্ষের পরীক্ষায় একেবারেই বসতে রাজি ছিলেন না তিনি। এবারও মা-বাবার কথায় পরীক্ষা দেন। কিন্তু অঙ্কে ফেল করেন।
-
আসলে এমন কিছুতে তিনি সময় নষ্ট করতে চাইছিলেন না, যা ভবিষ্যতে তার কোনো কাজেই লাগবে না। কলেজ ছেড়ে দেন। মা-বাবা তার সিদ্ধান্তে খুশি ছিলেন না। ভাই আর বোনের পূর্ণ সমর্থন ছিল। বাড়িতে খুব অশান্তি শুরু হয়েছিল। বাকি পড়ুয়াদের মতো পড়াশোনা শেষ করে ক্যারিয়ার বাছাই করেননি সুশীল। বরং তিনি নিজের ক্যারিয়ার আগে থেকেই স্থির করে ফেলেছিলেন। কলেজ ছাড়াটা তার ভুল সিদ্ধান্ত ছিল না, সেটা প্রমাণ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছিলেন।
-
থার্ড পার্টির মাধ্যমে একটি টেলিকম সংস্থায় কাজ পান। ওই সংস্থার কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধি ছিলেন। রোজ ১২-১৩ ঘণ্টা কাজ করতেন। এরপর একটি সংস্থার সেলসম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন। প্রতিটি কাজই মনপ্রাণ দিয়ে করতেন। যতক্ষণ না পর্যন্ত বিক্রি করতে পারতেন, নিজের চেয়ার ছেড়ে উঠতেন না। সারাদিন না খেয়েও কাটিয়েছেন।
-
তার জীবন বদলে যায় ২০১৩ সালে। স্ত্রী সরিতা রাওয়াত সিংহের সঙ্গে ওই বছরই তার পরিচয়। তিনি ছিলেন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। এর দুই বছরের মধ্যে তারা দুজন একটি আমেরিকান সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়ে নয়ডায় একটি বিপিও খোলেন।
-
প্রথমে একটি ছোট অফিস ভাড়া নিয়েছিলেন। মাত্র তিনজন কর্মী নিয়ে কাজ শুরু করেছিলেন। যে বিল্ডিংয়ে একটি ছোট্ট ঘরভাড়া নিয়ে অফিস শুরু করেছিলেন তারা, মাত্র আড়াই বছরের মধ্যে পুরো বিল্ডিংটাই কিনে নেন। ধীরে ধীরে ব্যবসাও বাড়তে থাকে তাদের। আইটি কনসাল্টিং ফার্ম, ফ্যাশন ফার্ম চালু করেন তারা। ফ্যাশন সংস্থা স্ত্রীই মূলত দেখেন। কলেজ থেকে বাদ পড়া সুশীল এখন মিলিয়নিয়র।