সব সময় আলো জ্বলে যে জঙ্গলে
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য, সব সময় আলোকিত থাকে এই জঙ্গল। জেনে নিন রহস্যয় এই জঙ্গলের কথা।
-
এমনই এক জঙ্গল, যা সব সময়ই ‘জ্বলন্ত’। ভারতের পশ্চিমঘাট পর্বত বা সহ্যাদ্রির ভীমশঙ্কর অভয়ারণ্যে আছে সেই প্রাকৃতিক বিস্ময়।
-
কর্নাটক, গোয়া এবং মহারাষ্ট্রের পশ্চিমঘাট বলয় জুড়ে বিস্তৃত এই অরণ্যকে বিজ্ঞানের পরিভাষায় বলা হয় ‘লুমিনিসেন্ট ফরেস্ট’।
-
বিশ্বের কয়েকটি জায়গায় লুমিনিসেন্ট সমুদ্রের কথা শোনা যায়। যাদের সৈকত এবং সেখানকার বালিতে আছড়ে পড়া ঢেউ দেখলে রাতের বেলা মনে হয় যেন অসংখ্য রত্ন ছড়িয়ে আছে।
-
নিকষ অন্ধকারে উজ্জ্বল নীল এই তটরেখা দেখলে মনে হয় যেন তারা ঝলমল রাতের আকাশ। পৃথিবীতে ১১টি লুমিনিসেন্ট সমুদ্র সৈকত পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়।
-
লুমিনিসেন্ট সমুদ্র বিরল। তার থেকেও বিরল এই ধরনের অরণ্য। পশ্চিমঘাট পর্বতের ভীমশঙ্কর অভয়ারণ্য সেই বিরল নিদর্শনের মধ্যে অন্যতম। অরণ্যের এই উজ্জ্বল রূপ সবথেকে বেশি এবং সবথেকে ভাল দেখা যায় বর্ষায়।
-
বাতাসে অত্যধিক পরিমাণে জলীয় বাষ্প জমলে তার সঙ্গে মিসেনা ব্যাকটিরিয়ার বিক্রিয়ায় উজ্জ্বল আলোর সৃষ্টি হয়। বর্ষায় ভীমশঙ্কর জঙ্গলের মাটিতে জমে থাকা পাতা, গাছের ছোট বড় ডাল পচতে শুরু করে। ফলে সেখানে তখন দ্রুত বংশবিস্তার করে মিসেনা জীবাণু।
-
সেই পরিস্থিতিতে এই জীবাণুর সঙ্গে জলীয় বাষ্পের বিক্রিয়ায় উজ্জ্বল হয়ে ওঠে ভীমশঙ্কর অভয়ারণ্য। পশ্চিমঘাট পর্বতের নৈশ উজ্জ্বলতার আরও একটি কারণ হল জোনাকি। মে জুন মাসে, বর্ষা শুরুর ঠিক আগে সহ্যাদ্রির অরণ্য জুড়ে যেন জোনাকিদের বাড়ি।
-
রাতের অন্ধকারে সেই অপার্থিব সৌন্দর্য দেখতে অনেকেই ট্রেক করেন পর্বতের বিভিন্ন অংশে। তবে অভিজ্ঞ ট্রেকার না হলে পশ্চিমঘাট পর্বতে নাইট ট্রেকিংয়ের অনুমতি দেয়া হয় না।
-
ভীমশঙ্কর অরণ্য স্থানীয় উপজাতিদের কাছে পবিত্র। সমৃদ্ধ জীববৈচিত্র এই অরণ্যের বৈশিষ্ট্য। মূলত ইন্ডিয়ান জায়ান্ট স্কুইরেল বা বড় আকারের কাঠবিড়ালিদের জন্যই এই অভয়ারণ্য। পাশাপাশি, বিভিন্ন প্রজাতির শিয়াল, হায়না, লেপার্ড এবং বিভিন্ন প্রজাতির পাখি এই অরণ্যের স্থায়ী বাসিন্দা।
-
মুম্বাই থেকে ২১৩ কিমি দূরে এই অভয়ারণ্যে গাড়িতে পৌঁছতে সময় লাগে পাঁচ থেকে ছ’ঘণ্টা। পর্যটকদের কাছে এই অরণ্যের আর এক আকর্ষণ ভীমশঙ্করের মন্দির। মহাদেবের এই মন্দির থেকেই নামকরণ অরণ্যের। ত্রয়োদশ শতকের এই মন্দির ভারতের দ্বাদশ জ্যোতির্লিঙ্গের অন্যতম।
-
সমুদ্র সৈকত হোক বা অরণ্য অন্ধকারে উজ্জ্বলতার নেপথ্য কারিগর হল ‘বায়োলুমিনিসেন্স’। বায়োলুমিনিসেন্স হল এমন কিছু জীব বা ছত্রাক, যাদের দেহ আলোর উৎস। মিসেনা এবং জোনাকি সেই বায়োলুমিনিসেন্সেরই উদাহরণ। কিছু ছত্রাকও এই গোত্রে পড়ে।
-
প্রকৃতিতে এই বায়োলুমিনিসেন্সের উপস্থিতিই রাতের অন্ধকারে নির্জন সৈকত ও গভীর অরণ্যে এনে দেয় অকাল দীপাবলি।