দেশ করোনামুক্ত করা এই প্রধানমন্ত্রী খাবারের দোকানেও কাজ করেছেন
ক্ষমতা গ্রহণের শুরু থেকেই এই প্রধানমন্ত্রী আলোচিত ছিলেন। নিজ দেশ শুধু নয় অন্য দেমের মানুষের প্রশংসাও লাভ করেছেন। এবার তিনি দেশ করোনামুক্ত ঘোষণা দিলেন। জেনে নিন তার সম্পর্কে।
-
করোনা মহামারি বিশ্বজুড়ে প্রত্যেক রাষ্ট্রপ্রধানের কাছেই অগ্নিপরীক্ষা। এক একজন নেতা এই সমস্যার মোকাবিলা করছেন ভিন্ন ভিন্ন উপায়ে।
-
জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মের্কেল করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধে আপন করে নিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিকে। ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট জেয়ার বোলসোনারো যদিও সে পথে হাঁটেননি।
-
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিয়মিত ব্রিফ করেছেন দেশের সার্বিক পরিস্থিতি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আবার হেঁটেছেন দীর্ঘ লকডাউনের পথে।
-
সবাইকে ছাপিয়ে গিয়েছেন নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্র্ডেন। দেশে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ নিজের পথ অনুসরণ করেছেন ৩৯ বছর বয়সি এই রাষ্ট্রপ্রধান।
-
দেশবাসীর প্রতি তিনি যেভাবে বার্তা দিয়েছেন, তা খুবই ফলপ্রসূ হয়েছে। সেই বার্তায় আবেগ ও সহমর্মিতার পাশাপাশি ছিল অভিভাবকের কঠোর দৃষ্টিভঙ্গিও।
-
নিউজিল্যান্ডবাসীর কখনো মনে হয়নি প্রধানমন্ত্রী তাদের জ্ঞানগর্ভ বাণী শোনাচ্ছেন। বরং, তাদের মনে হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী পাশে আছেন সবসময়। সে রকমই মনে হয়েছে নিউজিল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হেলেন ক্লার্কের।
-
১৯৯৯ থেকে ২০০৮ অবধি সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ক্লার্ক। লেবার পার্টির সদস্য হিসেবে আর্ডের্নের রাজনীতিতে হাতেখড়ি ক্লার্কের নেতৃত্বেই। ২০১৭ সালের ২৬ অক্টোবর তিনি নিউজিল্যান্ডের ৪০তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথগ্রহণ করেন।
-
ক্লার্ক আরও মনে করেন, আর্র্ডেন শুধু সুদক্ষ রাজনীতিকই নন। তিনি সংযোগ রক্ষা করার বিষয়েও পটু। করোনা পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী আর্র্ডেন নিয়মিত ফেসবুক লাইভ করেছেন। আটপৌরে ভাবে বলা তার তথ্যবহুল বার্তা মন জয় করেছে দেশবাসীর।
-
মার্চের শেষ দিকে লকডাউনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল নিউজিল্যান্ড। সে সময় সাধারণ একটি সোয়েট শার্ট পরে নিজের শিশুকন্যাকে পাশে বসিয়ে বাসভবন থেকে বার্তা দেন আর্র্ডেন। দেশবাসীর সমস্যা যে প্রধানমন্ত্রীরও সমস্যা, তিনি স্পষ্টতই বুঝিয়ে দিয়েছিলেন নিজের আচরণে।
-
জেসিন্ডা আর্ডার্ন বলেছিলেন, দেশবাসী যেন নিজের বাড়িতেই থাকেন। একজন মা হিসেবে তিনিও বোঝেন, বাচ্চাদের পার্কে না নিয়ে গেলে কী হয়। কিন্তু একইসঙ্গে সতর্ক করেন যে, খোলা জায়গায় ৭২ ঘণ্টা অবধি জীবিত থাকে কোভিড জীবাণু।
-
সাংবাদিকদের সঙ্গে আর্ডার্নের আচরণ ছিল সৌজন্যমূলক। এই কঠিন পরিস্থিতিতে সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নে তিনি মেজাজ হারাননি। বরং, কোনো সাংবাদিক যখন প্রশ্ন করতে ভুলে গিয়েছে, মজা করে আর্র্ডেন বলেছেন, তার ঘুম কম হচ্ছে!
-
মার্চ থেকেই নিউজিল্যান্ড সরকারে লক্ষ্য ছিল আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা কমানোর পাশাপাশি দেশ থেকে কোভিড ১৯ জীবাণুকে তাড়ানোর। পরিবেশরক্ষার বিষয়ে অত্যন্ত সতর্ক এই প্রশান্ত মহাসাগারীয় দেশটি সফল তাদের উদ্দেশ্যপূরণে।
-
নিউজিল্যান্ড সরকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সেখানে কোভিড আক্রান্ত হয়েছিলেন ১১৫৪ জন। পরীক্ষায় নেগেটিভ এলেও কোভিডে সম্ভাব্য আক্রান্তের সংখ্যা ছিল আরও ৩৫০ জন। সব মিলিয়ে এই ১৫০৪ জনের মধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছেন ১৪৮২ জন। মারা গিয়েছেন ২২ জন।
-
গত কয়েক দিনে নতুন কোনো আক্রান্তের সন্ধান পাওয়া যায়নি এই দেশে। নিজেদের কোভিডমুক্ত ঘোষণা করেছে তারা। তার জন্য সিংহভাগ কৃতিত্ব পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা।
-
জেসিন্ডা আর্ডার্নের জন্ম ১৯৮০ সালে ২৬ জুলাই নিউজিল্যান্ডের হ্যামিল্টন শহরে। তার বড় হয়ে ওঠা মরিন্সভিলের মোরমোন শহরে। বাবা ছিলেন পুলিশকর্মী। মা কাজ করতেন স্কুলের ক্যাটারিং সংস্থায়। স্কুলে পড়তেই প্রথম কাজ স্থানীয় ফিশ অ্যান্ড চিপসের দোকানে। পরবর্তীতে তিনি ওয়াইকাটো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কমিউনিকেশন স্টাডিজে স্নাতক হন।
-
আত্মীয়া মেরি আর্ডার্নের হাত ধরে মাত্র ১৭ বছর বয়সে জেসিন্ডা যোগ দেন নিউজিল্যান্ডের লেবার পার্টিতে। তারপর ধাপে ধাপে তার উত্তরণ ঘটেছে রাজনীতির আলিন্দে। প্রথমে দাপুটে বিরোধী নেত্রী। তার পর দেশের প্রধানমন্ত্রী।
-
গোড়া পরিবেশে বড় হওয়া জেসিন্ডা কয়েক বছর আগে নিজেকে নিরীশ্বরবাদী বলে ঘোষণা করেছেন। কারণ হিসেবে জানিয়েছেন, গির্জার সঙ্গে তার ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্ঘাত হচ্ছে। বিশেষ করে, সমকামীদের প্রতি গির্জার বৈষম্যমূলক আচরণ তিনি মেনে নিতে পারছেন না।
-
২০১২ সালে চলচ্চিত্র সঞ্চালক ক্লার্ক গেফোর্ডের সঙ্গে আলাপ হয় জেসিন্ডার। দু’জনে দীর্ঘ দিন লিভ ইন সম্পর্কে আছেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে জন্ম হয়েছে তাদের একমাত্র কন্যাসন্তানের।
-
বিশ্বে জেসিন্ডাই দ্বিতীয় মহিলা যিনি রাষ্ট্রপ্রধানের দায়িত্বে থাকাকালীন মা হয়েছেন। তার আগে ১৯৯০ সালে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন মা হন বেনজির ভুট্টো। জেসিন্ডা এবং ক্লার্ক তাদের মেয়ের নাম রেখেছেন নেভ তে আরোহা।
-
আইরিশ শব্দ থেকে ‘নিমাহ’ থেকে তৈরি নেভ কথার অর্থ উজ্জ্বল। ‘তে আরোহা’ নামে নিউজিল্যান্ডে একটি পাহাড় আছে। স্থানীয় মাওরি উপজাতির ভাষায় ‘আরোহা’ শব্দের অর্থ ভালবাসা। একরত্তি নেভকে বড় করার পাশাপাশি তার মা আগলে রেখেছেন গোটা দেশের মানুষকে।