ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করছেন যে যুবক
শুধু ট্রে আর টবে ফুল চাষ করে মাসে ৫০ হাজার আয় করেন এক কম্পিউটার প্রোগ্রামার। জেনে নিন সেই যুবক সম্পর্কে।
-
কাজের প্রতি যদি ভালোবাসা তৈরি না হয়, তা হলে যত টাকাই মাইনে পান না কেন, সে কাজে উত্সাহ আসে না। রোজ জোর করেই শরীরটাকে টেনে হিঁচড়ে অফিসে নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু যদি এমন সুযোগ সামনে আসে, যেখানে টাকাও আছে আর ভালোলাগাও!
-
এমন সুযোগ কি কেউ হাতছাড়া করতে চাইবেন! না। যেমন চাননি ভারতের হরিয়ানার সইদপুরে এক চাষি পরিবারের ছেলে। তার নাম বিপিন রাও যাদব।
-
বিপিন পেশায় একজন কম্পিউটার প্রোগ্রামার। কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক বিপিন একটি কোম্পানিতে চাকরি পেয়ে যান।
-
বিপিনের বাবা চাষবাস করেই জীবিকা নির্বাহ করেন। তিনি প্রথম থেকেই স্থির করে ফেলেছিলেন, তার দুই ছেলেকে কখনো এই কষ্টের পেশায় আনবেন না। তারা দু’জনেই ভালো চাকরি করবেন।
-
বিপিন এবং বিপিনের দাদা দুজনেই বাবার স্বপ্ন দেখা পথেই এগিয়েছেন। তার দাদাও বি টেক সম্পূর্ণ করে চাকরিতে ঢুকে গিয়েছেন।
-
আর বিপিন ২০১৫ সালে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক হয়ে গুরুগ্রামের একটি কোম্পানিতে যোগ দেন। কিন্তু সেই চাকরি বিপিনের একেবারেই ভালো লাগত না।
-
এক, বিপিন যেভাবে জীবন কাটাতে চাইতেন, প্রাপ্য মাইনেতে তা সম্ভব ছিল না। দুই, তার উপর সেই কাজের প্রতি ভালোবাসাও তৈরি হচ্ছিল না।
-
এক বন্ধুর পরামর্শে বিপিন বাড়ির কাছের কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে একটি প্রশিক্ষণে যোগ দেন। কীভাবে লাভজনক উপায়ে কৃষিকাজ করা যায়, কী ভাবে প্রচুর জমি ছাড়াই চাষাবাদ করা যায়, এরকম নানা বিষয়ে জ্ঞান লাভ করেন তিনি।
-
সাহস এবং আত্মবিশ্মারের সঙ্গে গুরুগ্রামের চাকরি ছেড়ে চাষ করতে বাড়ি ফিরে আসেন বিপিন। বিপিনের এই সিদ্ধান্ত একেবারেই মানতে পারছিল না তার পরিবার। গ্রামের লোকের কাছেও হাসির খোরাক হয়ে উঠেছিলেন তিনি।
-
কিন্তু সে সবে পাত্তা না দিয়ে নিজের জমানো দুই লাখ টাকা দিয়ে প্রথমেই চাষের প্রয়োজনীয় মালপত্র কিনে ফেলেন। বাবার জমি থেকে প্রথমে মাত্র ১০০ বর্গ ফুট জমিতে পলিহাউস তৈরি করে চাষ শুরু করেন।
-
প্রথমেই খুব লাভ হতে শুরু করে তা নয়। হাতে কলমে কাজ করতে গেলে অনেক ভুলভ্রান্তি হয়, আর তা থেকেই শেখা যায়। বিপিনের ক্ষেত্রেও তা-ই হয়েছিল।
-
মাটি ছাড়া কোকোপিট এবং আরও নানারকম উপকরণ দিয়ে টবেই চাষ করতে শুরু করেন তিনি। ২০১৬ সালে চাষ করা শুরু করেছিলেন বিপিন। তার দু’বছরের মধ্যেই আশাতীত ফল পান।
-
নানা প্রজাতির ফুল, সব্জি সব কিছুই চাষ করতে শুরু করেন তিনি। আলাদা করে ১৮০০ বর্গ ফুটের জমি ভাড়া নিয়ে সেখানে পলিহাউস তৈরি করে চাষ করতে শুরু করেন।
-
বর্তমানে তার আড়াই হাজার ট্রে এবং টব রয়েছে। প্রতি মাসে প্রায় আড়াই লাখ ফুল ফোটান তিনি। মূলত ফুলের ব্যবসা তার।
-
বর্তমানে বিপিনের বয়স মাত্র ২০ বছর। এখনই তিনি মাসে আয় করেন অন্তত ৫০ হাজার টাকা। এই ব্যবসাকে আরও বড় করাই তার উদ্দেশ্য এখন। তার মতো তরুণরা অহেতুক চাকরির পিছনে না ছুটে চাষাবাদকেই আপন করে নিন, এটাই চান তিনি।