যেসব চোখ ধাঁধানো প্রাসাদে থাকেন ইংল্যান্ডের রানি
ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। গত এপ্রিলে ৯৩ বছর পূর্ণ করলেন তিনি। তিনিই বিশ্বের দ্বিতীয় বয়স্কতম রাষ্ট্রনেতা। সবচেয়ে বয়স্ক হলেন মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী মহাথির মহম্মদ। তার বয়স ৯৪ বছর। চলতি বছর ফেব্রুয়ারিতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের রাজত্বকাল ৬৭ বছর পূর্ণ করল। এবার দেখুন তিনি যেসব চোখ ধাঁধানো প্রাসাদে থাকেন।
-
ইংল্যান্ডের রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
-
রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ তার বাবা রাজা ষষ্ঠ জর্জের থেকে মুকুট পেয়েছিলেন। মুকুটের সঙ্গে ব্রিটিশ রাজপরিবারের যাবতীয় সম্পত্তির অধিকারীও তিনি হন। সঙ্গে পান রাজপরিবারের অনেকগুলো প্রাসাদ।
-
বিভিন্ন সময়ে এই প্রাসাদগুলোতে সময় কাটিয়ে থাকেন রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ। প্রাসাদগুলোর অন্দরমহল দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যাবে।
-
বাকিংহাম প্যালেস: রানির সরকারি বাসভবন এটি। ১৭০৩ সালে সেন্ট জেমস জেলায় ডিউক অফ বাকিংহাম এই টাউন হাউসটি বানিয়েছিলেন। পরে ১৭৬১ সালে রাজা তৃতীয় জর্জ প্রাসাদের বিস্তৃৃতি ঘটান। প্রায় সাড়ে ৮ লাখ বর্গফুটের এই প্রাসাদে মোট ৭৭৫টি ঘর রয়েছে। এর মধ্যে বিলাসবহুল শৌচাঘরই রয়েছে ৮০টি।
-
এ ছাড়াও রয়েছে ১৯টি স্টেট রুম, অতিথিদের জন্য ৫২টি ঘর, কর্মচারীদের জন্য আলাদা ১৮৮টি ঘর এবং ৯২টি অফিস।
-
সপ্তাহের বেশির ভাগ সময় রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ এই প্রাসাদে থাকেন। বছরে প্রায় ৫০ হাজার অতিথি এই প্রাসাদে আসেন। রানির নিজস্ব পছন্দের গ্যালারিতে রয়েছে সারা বিশ্বের অন্যতম সেরা প্রায় ৪৫০টি ছবি। ৪০ একর খেলার মাঠও রয়েছে এই প্রাসাদ সংলগ্ন এলাকায়।
-
এই প্রাসাদে একটি নয়টা ঘরের ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্টে থাকেন রানি। তিনি নাকি প্রথমে চেয়েছিলেন প্রাসাদ সংলগ্ন ক্লারেন্স হাউসে থাকতে। কিন্তু তাকে পারিবারিক পরম্পরা বজায় রাখতে এই প্রাসাদেই থাকতে হয়েছে।
-
উইন্ডসর ক্যাসল: বাকিংহাম প্যালেসের পর উইন্ডসর ক্যাসলই রানির সবচেয়ে পছন্দের ঠিকানা। মোট এক হাজারটি ঘর রয়েছে এতে। ৪ লাখ ৮৪ বাজার বর্গ ফুট এলাকা জুড়ে রয়েছে এই প্রাসাদটি। বিশেষ করে ইস্টারের সময় তিনি এই প্রাসাদে কাটান।
-
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা (রুবেনস, ক্যানালেত্তো) দুর্লভ ছবি রয়েছে এই প্রাসাদে। রয়েছে প্রাচীন আমলের বিরল আসবাবপত্রও, যেমন দ্বিতীয় চার্লসের খাট। মধ্যযুগের সেন্ট জর্জ চ্যাপেল ও হল রয়েছে এখানেই। ১০. বাকিংহাম প্যালেসের মতো উইন্ডসর প্যালেসের রক্ষণাবেক্ষণের বিপুল খরচ। ১৯৯২ সালে আগুন লাগার পর এই প্রাসাদ মেরামত করতে প্রায় ২৩৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছিল।
-
হোলিরুড হাউস: ১৬০০ শতকে স্কটল্যান্ডের রাজা-রানিরা থাকতেন এই প্রাসাদে। আরো আগে ১১২৮ সালে এটি ছিল একটি মনাস্ট্রি। স্কটল্যান্ডের রাজা চতুর্থ জেমস এটি তৈরি করেন। পরে ইংল্যান্ডের রাজারানিরা এটির দেখভাল করতেন। স্কটল্যান্ডের ইতিহাস, সংস্কৃতির সঙ্গে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে এই প্রাসাদ।
-
স্কটল্যান্ডে রানির যাবতীয় সরকারি কাজকর্ম হয় এই প্রাসাদ থেকেই। রানি বা রাজপরিবারের কেউই যখন থাকেন না, প্রাসাদ ফাঁকা থাকে, তখন তাদের ব্যক্তিগত থাকার জায়গা, আর্ট গ্যালারি খুলে দেয়া হয় দর্শকদের জন্য। স্কটল্যান্ডের প্রায় ১০০ জন শাসকের ছবি রয়েছে এই গ্যালারিতে। সম্প্রতি প্রায় ৮৬ কোটি টাকা দিয়ে রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ হয়েছে এই প্রাসাদে।
-
বালমোরাল ক্যাসল: বাকিংহাম, উইন্ডসর বা হলিরুড হাউসের মতো ক্রাউন এস্টেটের তত্ত¡াবধানে নেই এই প্রাসাদ। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের একান্ত ব্যক্তিগত প্রাসাদ এটি। স্কট-বারোনিয়াল স্টাইলের এই বালমোরাল প্রাসাদটি প্রায় ৫০ হাজার একর জমির উপর তৈরি। প্রাচীন ক্যালিডোনিয়ান স্টাইলে তৈরি এই প্রাসাদটি। প্রাসাদ লাগোয়া বেশ কিছু প্রাচীন বাংলোও রয়েছে।
-
স্যান্ডরিংহ্যাম প্রাসাদ: প্রায় ২০ হাজার একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত। ১৮৬২ সালে রানি ভিক্টোরিয়া এটি নিজের ছেলে সপ্তম এডওয়ার্ডের জন্য ক্রয় করেন। বড়দিন থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রানি এলিজাবেথ থাকেন এই প্রাসাদেই। জনগণের উদ্দেশে বলা তার বেশিরভাগ বার্তাই এই বাড়ি থেকে রেকর্ড হয়।
-
এই প্রাসাদকে বলা হয় ইংল্যান্ডের সবচেয়ে আরামদায়ক জায়গা। এটি ইংল্যান্ডের প্রথম কয়েকটি বাড়ির অন্যতম যেখানে প্রথমবার ফ্লাশিং টয়লেট, শাওয়ার বাথ, গ্যাস লাইটিংয়ের ব্যবস্থা ছিল। ১৮৭০ সাল নাগাদ পুনর্র্নিমাণ করা হয় এটি।
-
হিলসবোরো ক্যাসল: উত্তর আয়ারল্যান্ডের লিসবার্নের কাছে এই প্রাসাদে রানি সবচেয়ে কম দিন থেকেছেন। ১৮ শতকের শেষের দিকে এই হিলসবোরো প্রাসাদ তৈরি করেন উইলস হিল। দুই একর জমির উপর তৈরি এই দোতলা জর্জিয়ান ম্যানসনটি।
-
১৯২২ সালে আয়ারল্যান্ড গঠনের পর ব্রিটিশ সরকাররকে হিলসবোরো প্রাসাদ বিক্রি করা হয়। এর ডাইনিং হলে ৩২জন অতিথি এক সঙ্গে বসতে পারেন। ১৯৮৫ সালে অ্যাংলো-আইরিশ চুক্তিও হয় এই হিলসবোরো প্রাসাদে। এটি সাধারণের জন্য খুলে দেয়া হয় এপ্রিল, মে, জুন সেপ্টেম্বরে।
-
কেনসিংটন প্যালেস: ১৭০০ শতকের কেনসিংটন রাজপ্রাসাদের বর্তমান বাসিন্দা কেমব্রিজের ডিউক ও ডাচেস প্রিন্স হ্যারি ও তার স্ত্রী কেট। প্রায় ৪.৫ মিলিয়ন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৩৩ কোটি টাকা) খরচ করে ১৯টি ঘরের সুইটের রক্ষণাবেক্ষণ করা হয়েছে। এই প্রাসাদের অর্ধেকটায় রাজপরিবারের সদস্যেরা বাস করেন, বাকি অর্ধেক সাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।