লাল রঙের যে হ্রদে নামলেই পশু-পাখিরা পাথর হয়ে যায়!
হ্রদে নামামাত্রই ‘পাথর’ হয়ে যাচ্ছে পশুপাখি! বিষয়টি শুনে অবিশ্বাস্য লাগছে, তাই না? আদৌ কি সত্যিই এমন ঘটনা ঘটছে? নাকি এটা শুধুই একটা রটনা! সত্যিই কি হ্রদের এমন ক্ষমতা রয়েছে? এই অদ্ভুত ঘটনার পিছনে যে কাহিনি রয়েছে সে সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক।
-
লাল টুকটুকে রঙের নদী।
-
হ্রদটির নাম নেট্রন। দক্ষিণ আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ার উত্তর প্রান্তে রয়েছে এই হ্রদটি। এটি একটি লবণাক্ত হ্রদ।
-
দৈর্ঘ্যে ৫৭ কিলোমিটার এবং প্রস্থে ২২ কিলোমিটার নেট্রন হ্রদে এওয়াসো নায়গ্রো নদীর জল এসে পড়ে। আশপাশের বেশ কয়েকটি উষ্ণ প্রস্রবণের জলও এই হ্রদে পড়ে। ফলে বিভিন্ন খনিজে সমৃদ্ধ এই হ্রদের জল।
-
আগে এই হ্রদ নিয়ে বহু কথা শোনা গেলেও প্রামাণ্য কিছু মেলেনি কোনো দিনই। ২০১১ সালে নিক ব্রান্ডট নামে এক ওয়াইল্ড লাইফ ফোটোগ্রাফার নেট্রন হ্রদের সামনে গিয়ে চমকে গিয়েছিলেন। হ্রদের পাড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছিল অসংখ্য পশুপাখির দেহ। ব্রান্ডট জানান, সেগুলো দেখে মনে হচ্ছিল যেন কোনো পাথরের মূর্তি সাজিয়ে রাখা!
-
এর পিছনের রহস্য জানতে শুরু হয় গবেষণা। জানা যায়, সোডিয়াম কার্বোনেট এবং সোডার পরিমাণ অত্যধিক বেশি এই হ্রদের জলে। প্রচুর সোডিয়াম ও কার্বোনেট যুক্ত ট্র্যাকাইট লাভা দিয়ে প্রায় ২৬ লাখ বছর আগে প্লিসটোসিন যুগে তৈরি হয়েছে নেট্রন হ্রদের তলদেশ।
-
পরীক্ষায় জানা যায়, হ্রদের জল অস্বাভাবিক ক্ষারধর্মী (পিএইচ ১০.৫)। ত্বককে পুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যা পশুপাখির পক্ষে অসহনীয়।
-
পরীক্ষায় জানা যায়, হ্রদের জল অস্বাভাবিক ক্ষারধর্মী (পিএইচ ১০.৫)। ত্বককে পুড়িয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে। যা পশুপাখির পক্ষে অসহনীয়।
-
বছরের বেশির ভাগ সময় হ্রদের জলের তাপমাত্রা থাকে ৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে জল দ্রæত বাষ্পীভূত হয়ে যায়। আর তলদেশে পড়ে থাকে জলের মতো তরল লাভা।
-
সোডিয়াম ও কার্বোনেটের জন্য হ্রদে জন্ম নেয় সায়োনোব্যাকটিরিয়া নামে অণুজীব। এই অণুজীবের শরীরে লাল রঞ্জক থাকে। ফলে হ্রদের জল লাল রঙের হয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই রঙেই আকৃষ্ট হয়ে পশুপাখি হ্রদে নামে। কিন্তু জলের অতিরিক্ত ক্ষারধর্মীর জন্য সেগুলোর মৃত্যু হয়।
-
নেট্রন হ্রদের জল ক্ষারধর্মী হলেও এই হ্রদই পূর্ব আফ্রিকার লেসার ফ্লেমিঙ্গোদের সবচেয়ে বড় এক প্রজনন ক্ষেত্র। প্রায় ২৫ লাখে লেসার ফ্লেমিঙ্গো এই হ্রদে দেখতে পাওয়া যায়। কারণ এই হ্রদের অগভীর জলে পাওয়া যায় প্রচুর নীলাভ-সবুজ শৈবাল। এই শৈবাল খেয়েই তারা বেঁচে থাকে এবং বংশবৃদ্ধি করে।
-
বিজ্ঞানীদের ধারণা, হ্রদের এই ক্ষারধর্মীর সঙ্গে নিজেদের খাপ খাইয়ে নিয়েছে এই ফ্লেমিঙ্গোরা। ফলে নেট্রন হ্রদের জলে ফ্লেমিঙ্গোদের জমাট দেহ খুঁজে পাওয়া যায়নি।