বিদেশে ইঞ্জিনিয়ারিং পড়া ছেড়ে অগণিত দরিদ্র শিশুকে পড়াচ্ছেন যে তরুণ
স্বপ্নবাজ অনেক তরুণের মতো হারুন ইয়াসিনও পাড়ি দিয়েছিলেন বিদেশে। ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার জন্য। কিন্তু মাঝপথেই ছেড়ে দিলেন পড়াশোনা। ড্রপ আউট ছাত্র তারপর বানালেন অ্যাপ। যা দিয়ে শিক্ষার আলো পৌঁছে দিচ্ছেন অসংখ্য দরিদ্র শিশুর কাছে।
-
স্বপ্নবাজ তরুণ ইয়াসিন।
-
পাকিস্তানের হারুন ছোট থেকেই মেধাবী। উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যেতে সমস্যা হয়নি। সেখানে গিয়েও বজায় রেখেছিলেন নিজের পারফরম্যান্স। কিন্তু কয়েক মাস পর থেকেই দমবন্ধ মনে হতে লাগল।
-
ঝাঁ চকচকে পরিবেশে সারা দিন বিত্তের আবহে থাকতে ভাল লাগত না হারুনের। মনে হত, যেখানে তার থাকার কথা, সেখানেই তিনি নেই। একদিন সিমেস্টারের মাঝেই সব ছেড়েছুড়ে চলে এলেন জন্মভূমিতে।
-
পাকিস্তানে ঘিঞ্জি বস্তিতে ঘুরে বেড়াতে লাগলেন হারুন। প্রান্তিক পরিবারের দরিদ্র শিশুদের পড়ানোর উদ্যোগ নিলেন। শুরু করলেন একটি স্কুল।
-
কিন্তু নতুন প্রজন্মের ছেলে হারুন বুঝতে পারলেন, এই কাজেও দরকার প্রযুক্তি। তা হলেই খুব অল্প সময়ে পৌঁছনো যাবে অনেক পড়–য়ার কাছে। সেই উদ্দেশে কাজে লাগালেন স্মার্টফোনকে।
-
তার আগে পাকিস্তানের গ্রামাঞ্চলে ঘুরলেন হারুন। অন্তরঙ্গ হয়ে মিশলেন কৃষিজীবীদের সঙ্গে। দেখলেন, প্রায় সব পরিবারেই আর কিছু না হোক, একটি করে অন্তত স্মার্টফোন আছে।
-
স্মার্টফোন আছে শ্রমিক পরিবারেও। অনেক ক্ষেত্রেই সেই ফোন এসেছে বাড়ির শিশুদের রক্ত পানি করা পয়সায়। পাকিস্তানের গ্রামের শিশুদের একটা বড় অংশ বন্ডেড লেবার। তাদের মজুরির পয়সায় স্মার্টফোন কিনছে তাদের অভিভাবকরা।
-
তাই স্মার্টফোনকেই হাতিয়ার করলেন হারুন। প্রথমে একটি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, তারপর অ্যাপ ‘তালিমাবাদ’। তার সাহায্যেই পাকিস্তানের বিস্তর্ণ অংশের প্রায় দশ হাজার শিশুকে উর্দু, ইংরেজি ও অঙ্ক শেখানো হচ্ছে।
-
ইয়াসিনের আশা, কয়েক দিনের মধ্যেই তার অ্যাপ পৌঁছবে কমপক্ষে দশ লাখ শিশুর কাছে। তিনি পাকিস্তানের পাশাপাশি আফগানিস্তানের শিশুদের কাছেও শিক্ষার আলো পৌঁছে দিতে চান।
-
মালালা ফান্ডসহ পাকিস্তানের বিভিন্ন সংস্থা থেকে অর্থসাহায্য পান হারুন ইয়াসিন। তার স্বপ্ন,অ্যাপের সাহায্যে আরও অনেক অবহেলিত শিশুকে অন্ধকার থেকে আলোয় আনা। নিজের কাজের জন্য বাকিংহাম প্রাসাদে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের হাতেও পুরস্কৃত হয়েছেন তিনি। আরও উচ্চতায় নিয়ে যেতে চান নিজের উড়ানকে।