বিয়ের জন্য জমানো টাকায় রাস্তা পাকা করলেন যুবক
অবিশ্বাস্য হলেও সত্য বিয়ের জন্য জমানো অর্থ দিয়ে গ্রামের রাস্তা পাকা করেছেন এক যুবক। এ নিয়ে তুমুল আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে ঘটনাটি ভাইরাল হয়েছে।
-
গ্রামে প্রায় ২৫ বছর ধরে পাকা রাস্তা নেই। গ্রাম পঞ্চায়েতের কাছে বারবার গিয়েও কোনো লাভ হয়নি। বরং এই রাস্তা তৈরি নিয়ে প্রশাসনের উদাসীন মনোভাবই বারবার প্রকাশ পেয়েছে। তাই রাস্তা তৈরির দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিলেন গ্রামেরই যুবক পি চন্দ্রশেখরণ। রাস্তা তৈরি করতে নিজের বিয়ের জন্য জমানো শেষ পুঁজিটুকু খরচ করলেন তিনি। ছবি: সংগৃহীত
-
চন্দ্রশেখরণের বাড়ি ভারতের তামিলনাড়–র ভিলুপুরম জেলার ভানুর থেকে প্রায় ১৮ কিলোমিটার দূরে নল্লাভুর গ্রামে। সর্বসাকুল্যে সাড়ে ৩০০ পরিবারের বাস এই গ্রামে। ছবি: সংগৃহীত
-
গ্রামে যাতায়াত করার জন্য মোট সাতটি রাস্তা রয়েছে। এর মধ্যে চন্দ্রশেখরণের পরিবারসহ আরও ৫০ পরিবার বাস করেন ঈশ্বরন কোয়েল স্ট্রিটে। ছবি: সংগৃহীত
-
কিন্তু তাদের বাড়ির সামনের এই রাস্তা দীর্ঘ দিন ধরেই ভাঙাচোরা। বর্ষাকালে কাদায় রাস্তায় চলতে ফরতে আছাড় খেতে হত গ্রামবাসীদের। কখনো আবার ভাঙা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালানোর সময় ছোটখাটো দুর্ঘটনার মুখেও পড়তে হত স্থানীয়দের। ছবি: সংগৃহীত
-
গ্রাম থেকে পড়াশোনা শেষ করে চন্দ্রশেখরণ বর্তমানে চেন্নাইয়ের একটি সফটওয়্যার সংস্থায় কর্মরত। চন্দ্রশেখরণ আজীবন গ্রামের পাকা রাস্তার স্বপ্ন দেখে এসেছেন। ছবি: সংগৃহীত
-
গ্রামের রাস্তা পাকা করা নিয়ে বারবার গ্রাম পঞ্চায়েতের দ্বারস্থ হয়েছেন চন্দ্রশেখরণ। বহু টালবাহানার পর প্রশাসনের তরফ থেকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়, গ্রামের রাস্তা পাকা করার মতো টাকা এই মুহূর্তে হাতে নেই। টাকা এলে তবেই রাস্তা সারাইয়ের কাজ শুরু করা সম্ভব। ছবি: সংগৃহীত
-
চন্দ্রশেখরণ ঠিক করেন, গ্রামের রাস্তা পাকা করার জন্য আর কারো হাত-পা ধরবেন না। নিজেই গ্রামের রাস্তা পাকা করার দায়িত্ব কাঁধে তুলে নেবেন। ছবি: সংগৃহীত
-
তিনি হিসেব করে দেখেন এই ২৮০ মিটার লম্বা রাস্তা পাকা করতে খরচ হবে প্রায় ১০ লাখ রুপি। হাতে টাকা বলতে বিয়ের জন্য জমিয়ে রাখা সাড়ে ১০ লাখ রুপি। স্বপ্নপূরণ করতে শেষমেশ সেই টাকা দিয়েই রাস্তা তৈরির সিদ্ধান্ত নিলেন চন্দ্রশেখরণ। ছবি: সংগৃহীত
-
তামিলনাড়ুর একটি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার সময় চন্দ্রশেখরণ বলেন, ‘আমাদের গ্রামে শেষ বার যখন রাস্তা তৈরি হয়েছিল তখন আমি প্রাথমিকের ছাত্র। এরপর আমি পড়াশোনা শেষ করে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে কাজ করছি। কিন্তু এত বছরে এই রাস্তার আর কোনো উন্নতি হয়নি।’ ছবি: সংগৃহীত
-
চন্দ্রশেখরণ জানান, গ্রামের রাস্তার অবস্থা এতটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল যে, প্রতি দিন অন্তত একজন গ্রামবাসী কাদামাখা রাস্তায় পিছলে পড়ে আহত হতেন। ছবি: সংগৃহীত
-
চন্দ্রশেখরণের বাবা এক জন ছোট ব্যবসায়ী এবং মা গৃহিণী। করোনার কারণে বাড়ি থেকে কাজ করছিলেন চন্দ্রশেখরণ। যখনই তিনি কাজ থেকে বিরতি পেতেন, তখনই নতুন রাস্তা তৈরির অনুরোধ নিয়ে পঞ্চায়েত এবং বøক উন্নয়ন অফিসে হাজির হতেন। কিন্তু সরকারি আধিকারিকরা তাকে জানান, তহবিল না পেলে গ্রামের রাস্তা নতুন করে তৈরি করা সম্ভব হবে না। ছবি: সংগৃহীত
-
এই রাস্তা তৈরি করতে হুমকির মুখেও পড়তে হয় চন্দ্রশেখরণকে। নিজের টাকায় রাস্তা তৈরির প্রস্তাব নিয়ে সরকারি আধিকারিকদের কাছে যাওয়ার পর তারা চন্দ্রশেখরণকে আনুমানিক খরচের অর্ধেক দিতে বলেন। কিন্তু পরে তিনি দেখেন সরকার রাস্তা তৈরি করতে অর্থ বরাদ্দ করেছে তা যথেষ্ট নয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন নিজের সঞ্চয় থেকেই এই রাস্তা বানাবেন। ছবি: সংগৃহীত
-
প্রথম দিকে রাস্তা তৈরির জন্য পুরো টাকা খরচ করার অনুমোদন পাননি চন্দ্রশেখরণ। চন্দ্রশেখরণের বাবা এস পেরুমল এবং মা পি লক্ষ্মী জানান, স্থানীয় কিছু রাজনীতিবিদ চন্দ্রশেখরণকে রাস্তা তৈরির কাজ থামাতে বলেন। হুমকিও দেন। কিন্তু কোনো হুমকির কাছে মাথা না ঝুঁকিয়ে চন্দ্রশেখরণ জুলাই মাসে ২৮০ মিটার লম্বা, ১৪ ফুট চওড়া, ১৫ সেমি পুরু পাকা রাস্তা তৈরির কাজ শেষ করেছেন। ছবি: সংগৃহীত
-
চন্দ্রশেখরণ জানান, ভিলুপুরম জেলা গ্রামীণ উন্নয়ন সংস্থার কিছু কর্মকর্তা তাকে নিজস্ব তহবিলে রাস্তা তৈরির জন্য ভিলুপুরম জেলা কালেক্টরের কাছ থেকে বিশেষ অনুমতি পেতে সাহায্য করেছিলেন। ছবি: সংগৃহীত
-
চন্দ্রশেখরণের প্রতিবেশী এ এজুমালাই জানিয়েছেন, গ্রামের এই রাস্তা এখন প্রশংসার কারণ। সবাই চাইছে তাদের পাড়াতেও চন্দ্রশেখরণের মতো কেউ থাকুন। গ্রামবাসীদের দাবি, সরকার যেন চন্দ্রশেখরণকে সংবর্ধনা দেন। ছবি: সংগৃহীত