বরফের রাজ্য সিকিমের রূপ-রহস্য
সারারাত ভ্রমণ শেষে খুব ভোরে পৌঁছালাম বুড়িমারী স্থলবন্দরে। ফ্রেশ হয়ে নিলাম সবাই। বুড়িমারীর খাবার দোকানে নাশতা সেরে নিলাম। নির্দিষ্ট সময়ে ইমিগ্রেশন শেষ হলো। ভারতের চ্যাংড়াবান্ধা থেকে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলাম। রওনা দেবার পূর্বেই চ্যাংড়াবান্ধা থেকে ডলার এক্সচেঞ্জ করে নিয়েছিলাম। কারণ এখানে শিলিগুড়ি বা গ্যাংটকের চেয়ে ভালো রেট পাওয়া যায়।
-
ঘুরতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। তাই সুযোগ পেলে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছুটে যাই। এবারের ঘটনাটা একটু আলাদাই বটে। আমাদের টিমের চারজনই প্রথমবার সিকিম ভ্রমণে যাচ্ছে। তাই জার্নিটা একটু রোমাঞ্চকর হবে সেটা পূর্বেই অনুমেয় ছিল। ছবি: ইমন ইসলাম
-
শীতকালে পাহাড় ভ্রমণের মজাই আলাদা। তাইতো শীতের মজা পেতে আমাদের এতো আয়োজন। টিম লিডার রাসেলের নেতৃত্বে আমাদের ছুটে চলা। বর্ডারে পৌঁছাতেই বিপত্তি বাঁধলো। অমিত আর প্রীতম ভুলে ট্রাভেল ট্যাক্সের কাগজ ফেলে এসেছে। আমার মাথায় হাত পড়ে গেল। তবে রাসেলের মুখে হাঁসি ছিল। বললো সমস্যা নেই বর্ডারে ব্যাংক আছে নতুন করে ট্রাভেল ট্যাক্স দেওয়া যাবে। ছবি: ইমন ইসলাম
-
আমাদের পরিকল্পনা ছিল খুব সকালেই বর্ডার পাস করা। তারপর শিলিগুড়ি গিয়ে গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া। তবে দেরি হওয়ার দরুণ আমাদের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। কারণ রাত ৮টার মধ্যে গ্যাংটক থেকে বিভিন্ন গন্তব্যে যাওয়ার জন্য অনুমতি নিতে হয়। তাই নিরুপায় হয়ে শিলিগুড়ি থেকেই ট্রাভেল এজেন্সি ঠিক করতে হয়। এতে গন্তব্যে যাবার জন্য যাবতীয় অনুমতির কাজ তারাই করে দেয়। ছবি: ইমন ইসলাম
-
দুপুর আড়াইটার দিকে পৌঁছালাম শিলিগুড়ি। তারপর লাঞ্চ সেরে নিলাম। দার্জিলিং টেক্সিস্ট্যান্ড থেকে একটি ছোট টাটা অল্টো গাড়িতে রওনা হলাম সিকিমের রাজধানী গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে। সুবিশাল পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে হিমশীতল ঝিরিঝিরি হাওয়ার অনুভূতি নেওয়ার এক অভূত স্থান হলো সিকিম। ছবি: ইমন ইসলাম
-
ছোট্ট শিলিগুড়ি শহর, ক্যান্টনমেন্ট, সেভক এরিয়া পাড়ি দিয়ে গাড়ি চলছে তিস্তা নদীর পাড় ঘেঁষা সড়ক ধরে। তিস্তার নীলচে পানির সৌন্দর্যে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। নদীর মতই এঁকেবেঁকে রাস্তা চলে গেছে, সে রাস্তা ধরে আমাদের গাড়ি ছুটছে। পিচঢালা মসৃণ সড়ক, খানাখন্দক খুবই কম। ছবি: ইমন ইসলাম
-
আশপাশের দৃশ্য বদলাচ্ছিল একটু পরপরই। কখনো পাহাড়ের সারির পাশ দিয়ে ছুটছি, সঙ্গে ঘন গাছপালা। আবার কখনো পাহাড়গুলো দূরে সরে যাচ্ছিল, সামনে চলে আসছিল গাছের সারি আর ঘন ঘাসের জমি। শিলিগুড়ি থেকে গ্যাংটক যেতে লাগলো প্রায় ৫ ঘণ্টার মত সময়। ছবি: ইমন ইসলাম
-
সিকিম ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি রাজ্য। এটি জনপ্রিয় একটি পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে বিশ্বব্যাপী খ্যাত। সিকিমের রাজধানী শহরের নাম গ্যাংটক। গ্যাংটকের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ হলো এমজি এমআরজি বা মহাত্মা গান্ধী মার্গ। এই এমজি মার্গের রাস্তার মাঝখান দিয়ে সুন্দর ফুল দিয়ে সাজানো, যাহা দেখতে দুর্দান্ত লাগে। এখানে আছে বসার জায়গা, সুসজ্জিত দোকান-পাঠ ও রাস্তাগুলো সব সময় পরিষ্কার-পরিছন্ন। যেন ইউরোপের কোন শহরে এসে পৌঁছেছি । এমজি মার্গের একপাশে মহাত্মা গান্ধীর একটি মূর্তি আছে। ছবি: ইমন ইসলাম
-
গ্যাংটকের রাস্তায় ধূমপান, আবর্জনা ফেলা এবং থুতু ফেলা আইনত নিষিদ্ধ। রাস্তার মাঝখানের বাগান পরিপূর্ণ করে রাখা হয়েছে বিভিন্ন প্রকার ঝুলন্ত টপ ও মাটিতে বপন করা ফুল ও সৌন্দর্য বধনকারী গাছের সমাহারে। গাছের প্রতিটি ডাল ও পাতায় বিভিন্ন রং-বেরঙের লাইটিং করে রাস্তার সৌন্দর্যের মাত্রা যেন আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। কিছুদূর পর পর বাগানের মাঝে স্থাপন করা হয়েছে কৃত্রিম ঝরনা। বাগানের গা ঘেঁষে দুধারে রাখা বেঞ্চগুলোতে বসে ভ্রমণকারীরা বসে আছে, কেউবা সেলফি তোলায় ব্যস্ত। ছবি: ইমন ইসলাম
-
গ্যাংটকে রাত্রি যাপনের পর আমরা পৌঁছালাম নর্থ সিকিমের পর্যটন এলাকা ‘লাচুং’। যার অবস্থান উত্তর সিকিমের অন্তর্গত তিব্বতিয়ান বর্ডারের কাছে। সেখানে মাইনাস ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাত্রিযাপন করলাম। উঁচু পাহাড়ি রাস্তায় যখন আমাদের গাড়ি এঁকেবেঁকে চলছে, তখন নিচের দিকে তাকিয়ে দেখা মিলল পাথুরে স্বচ্ছ হ্রদ। দু’পাশে পাহাড় আর মাঝে বয়ে চলা হ্রদের পানির গভীরতা না থাকলেও আছে স্রোতের তীব্রতা। ছবি: ইমন ইসলাম
-
স্বচ্ছ নীলাভ জলের খরস্রোতা লেকের মাঝে পড়ে থাকা বিশাল বিশাল পাথর খণ্ডে ধাক্কা খেয়ে নিজের গতিপথ পরিবর্তন করে এগিয়ে যাচ্ছে দুরন্ত গতিতে। মাঝে মাঝে দেখা মিলছে বন্য বানরের। ওরা উপদলে বিভক্ত হয়ে রাস্তার বাঁকে বাঁকে বসে আছে। ছবি: ইমন ইসলাম
-
গ্যাংটক থেকে ১২৫ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই গ্রামে যেতে সময় লাগলো প্রায় সাড়ে ৫ ঘণ্টার মতো। চারপাশের অদ্ভুত সুন্দর পরিবেশ ও ইয়ামথাং ভ্যালি যাবার পথে স্বচ্ছ নীল পানির ঝরনা মনকে যেন প্রশান্তি এনে দেয়। সেখানে সুবিশাল বরফের আস্তরণ, তুষারপাতের অপূর্ব দৃশ্য দেখলাম। যা কি না সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯ হাজার ৬০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। সাদা বরফে আচ্ছাদিত থাকার আকর্ষণই মূলত আমাদের পর্যটক বানিয়ে এত দূর টেনে নিয়ে এসেছে। ছবি: ইমন ইসলাম
-
যেখানে বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ভূ-স্বর্গখ্যাত খাগড়াছড়ির সাজেক ভ্যালির উচ্চতা ভূ-পৃষ্ঠ থেকে মাত্র ১৪৭৬ ফুট। বরফ আচ্ছাদিত রাস্তার ওপর দাঁড়িয়ে আছে বড় পশমওয়ালা তিব্বতি গরু বা ইয়াক। এমন নৈসর্গিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বরফাচ্ছন্ন পরিবেশ যে কোনো ভ্রমণপিপাসুকে মুহূর্তে মাতাল করে তুলবে। ছবি: ইমন ইসলাম
-
খাঁড়া পাহাড়ের উচ্চতায় এ পর্যটন স্থাপনায় পৌঁছাতে প্রতি মুহূর্তে আপনার গায়ের লোম নাড়া দিয়ে উঠবে। পাহাড়ের উঁচু-নিচু সরু রাস্তার বাঁক রীতিমতো এক মরণ ফাঁদ। যাকে বলে ভয়ংকর সুন্দর। লাচুংয়ে দূর পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝরনা, সূর্যের আলোকরশ্মিতে সুউচ্চ পর্বতের মোহনীয় দৃশ্য আমাদের প্রতিটি পরদে পরদে মুগ্ধ করেছে। শেষ বিকেলে সুউচ্চ পর্বতমালায় সূর্যের আলোক রশ্মি যেন হীরার খনির মতো মনে হয়েছে। ছবি: ইমন ইসলাম