সমুদ্রের মাঝে কংক্রিটের জঙ্গল
জাপানের নাগাসাকি থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরে সমুদ্রের মাঝে এমন একটি দ্বীপ রয়েছে যার আয়তন মাত্র ০.০৬৩ বর্গ কিলোমিটার। দ্বীপটির নাম হাসিমা দ্বীপ কিংবা গুনকাঞ্জিমা। ২০০৫ সাল থেকে জাপানের নাগাসাকির অন্তর্ভুক্ত দ্বীপটি।
-
হাসিমা দ্বীপটি গুনকানজিমা নামেও বেশ পরিচিত। গুনকানজিমা অর্থ হচ্ছে যুদ্ধজাহাজ দ্বীপ। কারণ বাইরে থেকে এই দ্বীপটি দেখতে ঠিক একটা যুদ্ধজাহাজের মতোই। ছবি: সংগৃহীত
-
ছোট এই দ্বীপটিতে এক সময় প্রায় ৬ হাজার মানুষ বসবাস করতেন। বহুতল ভবন, বিনোদনের ব্যবস্থা, স্কুল, হাসপাতাল সব মিলিয়ে জাঁকজমক পূর্ণ শহর ছিল এটি। ছবি: সংগৃহীত
-
দ্বীপটিতে ছিল ১৫টি এপার্টমেন্ট আর প্রায় ১০০টি ছোট দোকান। ১৯৭৪ সালের এপ্রিল মাসে রাতারাতি বদলে যায় শহরের ছবি। জাঁকজমকপূর্ণ শহর মুহূর্তে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত
-
তবে এখনো দ্বীপের উপর থেকে দেখলে এখনো মনে হবে নিশ্চয় এখানে মানুষের বসবাস আছে। ছবি: সংগৃহীত
-
জানা যায়, ১৮১০ সালে এ দ্বীপে প্রথম কয়লার সন্ধান পাওয়া যায়। ১৮৮৭-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত এই দ্বীপে বসতি গড়ে উঠতে শুরু করে। আশেপাশের এলাকা থেকে, বিশেষ করে কোরিয়া থেকে প্রচুর কর্মীকে রাখা হয় দ্বীপে। ছবি: সংগৃহীত
-
১৮৯০ সাল থেকে শুরু হয় কয়লার উত্তোলন। এর আগে ভূমিক্ষয় রোধে দ্বীপের চারধারে শক্ত প্রাচীর গড়ে তোলা হয়। কয়লা তোলার জন্য ১ কিলোমিটার গভীরতার চারটি মাইন-শ্যাফট গঠিত হয়। ছবি: সংগৃহীত
-
জাপানের মিৎসুবিসি ১৮৯০ সালে দ্বীপটি ক্রয় করে নেয় এবং সমুদ্রের নিচের খনি থেকে কয়লা উত্তোলন শুরু করে। প্রায় ১৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করে কোম্পানিটি। ১৮৯১-১৯৭৪ সাল পর্যন্ত মোট এক কোটি ৫৭ লাখ টন কয়লা তোলা হয় ওই খনি থেকে। ছবি: সংগৃহীত
-
কয়লার ভালো জোগানের জন্য দ্রুত প্রচুর খনি শ্রমিককে এই দ্বীপে নিয়ে আসা হয়। পরবর্তী ৫৫ বছরে এখানে থাকা উত্তোলক ও তাদের পরিবারের সুবিধার্থে অনেক অ্যাপার্টমেন্ট, স্কুল, হাসপাতাল, টাউন হল ও একটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মিত হয়। বিনোদনের জন্য নির্মিত হয় একটি ক্লাব হাউস ও সিনেমা হল। সম্পূর্ণ শহরে পরিণত হয়েছিল হাসিমা। ছবি: সংগৃহীত
-
১৯৩০-১৯৪৫ অর্থাৎ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শেষ হওয়া পর্যন্ত কোরিয়া, চীন থেকে প্রচুর বন্দিকে জোর করে দ্বীপে নিয়ে এসে কয়লা তোলার কাজে লাগানো হয়।সেই শ্রমিকরা অনেক দুর্যোগপ্রবণ অবস্থায় খনিতে কাজ করতো। তখন সেখানে শ্রমিকদের উপযোগী তেমন কিছুই ছিলো না। সেখানে প্রায় এক হাজার শ্রমিক মারা যায়। অনেকের মতে এই সংখ্যা আরও বেশি (প্রায় ১৩০০ শ্রমিক)। ছবি: সংগৃহীত
-
১৯৬০ সাল থেকে বিভিন্ন খনিজ আকরিক উত্তোলন সংস্থা কয়লার পরিবর্তে পেট্রোলিয়ামের দিকে ঝুঁকতে শুরু করে। পুরো জাপান জুড়ে কয়লা খনিগুলি বন্ধ হতে শুরু করে। হাসিমাও এর ব্যতিক্রম ছিল না। তাই কোম্পানিও এখানের শ্রমিকদের রেহাই দেয়। তখন সবাই দ্বীপটি ছেড়ে অন্যত্র পাড়ি জমায়। ছবি: সংগৃহীত
-
১৯৭৪ সালের জানুয়ারিতে বন্ধ হয়ে যায় হাসিমা দ্বীপে কয়লা উত্তোলন। ওই বছরই এপ্রিলে সমস্ত খনি শ্রমিককে অন্যত্র নিয়ে চলে যাওয়া হয়। হাসিমা দ্বীপে পড়ে থাকে কংক্রিকেটর জঙ্গল। এরপর থেকে দ্বীপটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। ছবি: সংগৃহীত
-
৩৫ বছর পর ২০০৯ সাল নাগাদ দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়। ইউনেস্কো ২০১৫ সালে এই পরিত্যক্ত দ্বীপটিকে বিশ্বের অন্যতম ঐতিহাসিক স্থাপনা ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। ছবি: সংগৃহীত
-
বর্তমানে পর্যটকরা সেখানে ঘুরতে যান। তবে পর্যটকেরা দ্বীপের খুব সামান্য অংশই ঘুরে দেখার অনুমতি পেয়েছেন। কারণ ধ্বংসপ্রাপ্ত ওই দ্বীপের বহুতলগুলো যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়ে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে নাগাসাকি প্রশাসন। ছবি: সংগৃহীত