যে কারণে কাশ্মীরে স্বকীয়তা রাখতে মরিয়া আলেকজান্ডারের সেনার বংশধররা
খ্রিস্টপূর্ব ৩২৬ অব্দে ভারত অভিযানে এসেছিলেন আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট। সিন্ধু নদ অতিক্রম করে গ্রীক বীরের গন্তব্য ছিল গান্ধারের তক্ষশীলা। পথে ঝিলম আর চন্দ্রভাগা নদীর মাঝে হিদাসপিসের যুদ্ধে আলেকজান্ডার-পুরু বৃত্তান্ত বহুচর্চিত ও বহু আলোচিত।
-
সম্পূর্ণ ভারত বিজয়ের স্বপ্ন অধরা রেখে ফিরে যেতে হয় আলেকজান্ডারকে। কারণ দীর্ঘ অভিযানে তিনি নিজে ও তার সেনাবাহিনী ক্লান্ত হয়ে পড়েছিল। তবে ফিরে যাওয়ার আগে তিনি কয়েকজন সেনাপতিসহ সৈন্য রেখে যান ভারতবর্ষে। তাদের বংশধররা নাকি এখনো আছেন লাদাখের কয়েকটি গ্রামে।
-
লে এবং কার্গিলের ধা, হানু, ভীমা, দারচিক আর গারকোন গ্রামে বাস ব্রোকপা বা দার্দ উপজাতির। তাদের দাবি, তারা আলেকজান্ডারের সেনাদের বংশধর।
-
এই উপজাতির শারীরিক বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে ইউরোপীয় জনজাতির দৈহিক বৈশিষ্ট্যের বেশ সাদৃশ্য রয়েছে। নিজেদের স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্য সযত্নে বাঁচিয়ে রেখেছেন ব্রোকপারা।
-
কার্গিল থেকে ১৩০ কিমি উত্তর পূর্বে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছেই ব্রোকপাদের গ্রামগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে সিন্ধুনদের উত্তর তীরে, বাল্টিস্তান যাওয়ার পথে। কিছু ব্রোকপা মানুষের থাকেন পাক অধিকৃত কাশ্মীরেও।
-
বহুযুগ ধরে নিজেদের ঘেরাটোপেই থাকতেন ব্রোকপা-রা। একেবারেই মিশতেন না বহিরাগতদের সঙ্গে। ১৮৩০ সালে তাদের কথা প্রথম বাইরের জগতকে জানান ব্রিটিশ অভিযাত্রী গডফ্রে থমাস ভিনিয়া। তাদের নিয়ে প্রথম লেখেন কাশ্মীর মহারাজার হয়ে কর্মরত ভূতাত্ত্বিক ফ্রেডেরিক ড্রিউ। ১৮৭৫ খ্রিস্টাব্দে তার প্রকাশিত বই, ‘দ্য জম্মু অ্যান্ড কাশ্মীর টেরিটোরিজ’-এ।
-
কয়েক বছর আগে অবধি নিজেদের গ্রামে বহিরাগতদের পা রাখা পছন্দ করত না এই জনজাতি। ধীরে ধীরে হলেও সেই রীতি পাল্টাচ্ছে। মূলত বিদেশি পর্যটকরা বেশি এলেও ইদানীং কাশ্মীর পর্যটনের অংশ হচ্ছে ব্রোকপাদের গ্রাম। বাইরের দুনিয়ায় প্রকাশ হচ্ছে তাদের রীতি রেওয়াজ।
-
ব্রোকপা জনজাতিতে সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ হল বিয়ে। কারণ প্রচলিত নিয়ম হল, তারা নিজেদের বাইরে বিয়ে নিষিদ্ধ। তারা এভাবেই রক্ষা করেন রক্তের ‘বিশুদ্ধতা’। বিশ্বাস এই উপজাতির। কারণ তাদের বিশ্বাস, তারা নাকি খাঁটি ‘আর্য’। তাদের নতুন প্রজন্ম আধুনিকতার স্রোতে সামিল হয়েছে অনেক ক্ষেত্রেই। কিন্তু তবুও এই জনগোষ্ঠী আন্তরিক চেষ্টা করে চলেছে, নিজেদের স্বকীয়তা বজায় রাখতে।
-
কিন্তু কাদের বলা হবে আর্য বা এরিয়ান ? সে প্রসঙ্গে এখনও দ্বন্দ্ব কাটেনি। বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকরা এখনও ধন্ধে, কাদের বলা হবে আর্য? নৃতত্ত্ব-বিশেষজ্ঞ উপল মান্নার মতে, আর্য কোনো জনজাতিকে কখনোই বলা যায় না। বরং ‘এরিয়ান’ হল একটি নির্দিষ্ট ভাষাগোষ্ঠী।
-
উপলের আরও বক্তব্য, আধুনিক গবেষণা বলছে, আজকের দিনে বিশুদ্ধ জনজাতি বা ট্রু রেস বলে কার্যত কিছু হয় না। কিন্তু তর্কে যা বহুদূর, সেটাই তো মিলায় বিশ্বাসে। তাই নিজেদের বিশ্বাসেই বুঁদ থাকেন ব্রোকপারা। তাদের সঙ্গে আমরাও পাড়ি দিই ইতিহাসের জগতে।