বয়স বাড়লে শরীরের যেসব বিষয়ে সতর্ক হতে হবে
অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন, কর্মব্যস্ত জীবন ও খাদ্যাভ্যাস- এসব মিলেই শরীরে বাসা বাঁধে নানা অসুখ। বয়স বেড়ে চলার সঙ্গে এই সব রোগভোগের প্রকোপও বাড়তে থাকে। জেনে নিন বয়স বাড়লে শরীরের যেসব বিষয়ে সতর্ক হতে হবে।
-
এক সময় খেতে ভালবাসতেন, আজকাল আর ততটা খেতে পারেন না। এমন হলে ‘নাক’কে নির্দোষ ভাববেন না। অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় নাকের স্নায়ুতে সমস্যা তৈরি হলে গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা কমে আসে। ফলে খাবারের স্বাদও আর ভাল লাগে না, খাওয়া কমে। এমন হলে কমিয়ে ফেলুন অতিরিক্ত লবণ খাওয়া। এতে নানা অসুখের সঙ্গে গন্ধ নেওয়ার শক্তিও হ্রাস পায়।
-
এমনিতে দেখতে কোনো অসুবিধা হয় না। কিন্তু অফিসে একটানা কম্পিউটারে কাজের মাঝে বা অনেকক্ষণ মোবাইল ঘাঁটতে ঘাঁটতে হঠাৎই অনেকগুলো স্পট বা দাগ দেখতে পান? কিংবা জাল বা দানার মতো কিছু চোখের চারপাশে ঘুরে বেড়াচ্ছে বলে মনে হয়? তা হলে বুঝবেন সময় হয়েছে চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার। নইলে বয়সের সঙ্গে রেটিনার সমস্যাও আসবে।
-
হাঁটুতে মাঝে মাঝে খিঁচ লাগছে কিংবা উপর-নীচ করতে গেলে হাঁটু ভাঁজ করতে কষ্ট হচ্ছে? এমনটা হলে প্রথম থেকেই অস্থি ও স্নায়ুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন। বিশেষ করে মেনোপজের পর মেয়েরা অবশ্যই হাড়ের যত্ন শুরু করে দিন। নইলে অস্টিওআর্থ্রাইটিস বা রিউম্যাটিকের ব্যথা শুরু হতে দেরি হবে না।
-
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে হরমোনের প্রভাবেও নানা রোগের শিকার হতে হয়। তার মধ্যে অন্যতম চুলের সমস্যা। একটা সময়ের পর চুল পাতলা হয়ে আসাই স্বাভাবিক। ডাইহাইড্রোটে স্টোস্টেরনের কম ক্ষরণই এর জন্য দায়ী। চুল পাতলা হতে শুরু করলেই ঘরোয়া যত্ন নিন চুলের। সঙ্গে পরামর্শ নিন বিশেষজ্ঞদের। অকালে টাক পড়া থেকে বাঁচা তা হলে কঠিন হবে না।
-
মুখের ভিতরটা শুষ্ক লাগলে বুঝতে হবে ডায়াবেটিস হয়েছে। তবে অনেক সময়ই দেখা যায় অতিরিক্ত ওষুধ সেবনের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এমনটা হচ্ছে। মহিলাদের মেনোপজের সময় ইস্ট্রোজেনের ক্ষরণ কমায় মিউকাস মেমব্রেনগুলো তাদের আর্দ্রতা খুইয়ে ফেলে। এই সমস্যাকে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
-
বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ক্যালসিয়াম ও কোলাজেনের ঘাটতি নখকে পাতলা ও ভঙ্গুর করে দেয়। ঘন ঘন নখ ভেঙে গেলে বুঝবেন, ক্যালসিয়ামের অভাব ঘটছে। তাই ডায়েটে যোগ করুন ক্যালশিয়াম সমৃদ্ধ খাবার।
-
মাঝে মাঝেই ঘুম ভাঙা কিংবা এক বার ঘুম ভাঙলে ঘুম আর আসতে না চাওয়া, দু’টোই বয়সজনিত সমস্যার অন্যতম। শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি কম, ভুল জীবনশৈলী এগুলোই এর কারণ। এই সমস্যা বাড়াবাড়ির আকার নিলে তা স্নায়ুর অসুখ, মানসিক চাপবৃদ্ধি, ত্বকের নানা সমস্যা ডেকে আনে। কাজেই এমন সমস্যা এলে তা মেটাতে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।
-
আগে অনেক কিছু মনে রাখতে পারতেন। আজকাল আর পারছেন না। এমন হলে জানবেন তা বয়সজনিত কারণেই ঘটছে। মস্তিষ্কের কাজ করার প্রবণতা কমায় এমনটা হয়। অনেক সময় শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ না পেয়েও এমন প্রতিক্রিয়া দেখায়। তাই মস্তিষ্ককে সচল রাখতে নিয়মিত শরীরচর্চা করুন ও ডায়েটে রাখুন ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার।
-
সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়া, অল্পেই হাঁপিয়ে যাওয়া এগুলো সবই শরীরের কলকব্জাগুলো পুরনো হয়ে যাওয়ার ফল। তাই হার্টকে সচল রাখতে ও পেশীশক্তি বাড়াতে ডায়েটে যোগ করুন দরকারি প্রোটিন। প্রয়োজনে আপনার শরীরে কতটুকু ব্যায়াম নিরাপদ তা বিশেষজ্ঞদের থেকে জেনে সেই মতো শরীরচর্চা করুন।
-
দাঁতের নানা সমস্যায় জেরবার হওয়ার সময়ও এটা। বয়স ৪০ পেরলেই এই ধরনের সমস্যাগুলি হাজির হয়। তাই মাঝে মাঝেই দাঁতের অবস্থা বুঝে স্কেলিং বা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা করান। বছরে এক বার কোনও সমস্যা না থাকলেও দাঁতের চেক আপ করিয়া নিন।
-
পায়ের আঙুলগুলো বয়সের সঙ্গে হলুদ হয়ে এলে তাকে স্রেফ ক্যালসিয়ামের অভাব বলে ধরবেন না। শ্বাসযন্ত্রে কোনও প্রকার সমস্যা দেখা দিলেও এমনটা হয়। তাই পায়ের নখ হলুদ হয়ে এলে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যান।