বাড়ির দেয়ালে নোনা ধরলে সহজে দূর করবেন যেভাবে
অনেক বাড়ির দেয়ালে নোনা ধরতে দেখা যায়। যে রং করা হোক না কেন, তার ওপর হালকা থেকে গাঢ় সাদা রঙের আস্তরণ পড়ে। এই নোনা ধরার ফলে ইট বা পাথরের তৈরি দেয়ালে সাদা সাদা লবণের অধঃক্ষেপ সৃষ্টি হয়। যা দেয়ালের সৌন্দর্য ও স্থায়িত্ব নষ্ট করে। এ থেকে রক্ষা পাওয়ার কিছু উপায় রয়েছে। জেনে নিন সেসব উপায় বা কৌশল সম্পর্কে।
-
নোনা ধরার লক্ষণ: প্রথম প্রথম দেয়াল ঘেমে যেতে থাকে বা ভেজা ভেজা ভাব চলে আসে। এর কিছুদিন পর দেয়ালে সাদা সাদা আস্তরণ দেখা দেয়। পরবর্তীতে সাদা লবণের ভারি আস্তরণ দেখা দেয় এবং প্লাস্টার ঝরে পড়তে থাকে।
-
নোনা ধরার কারণ: নোনা ধরার কারণসমূহের মধ্যে রয়েছে,- ভবন নির্মাণে কম পোড়ানো ইট ব্যবহার। যে মাটি দিয়ে ইট তৈরি করা হয়, সে মাটিতে লবণের পরিমাণ বেশি। বাড়ি তৈরির উপকরণ, যেমন- বালি, সিমেন্ট, পানি প্রভৃতির মধ্যে লবণের পরিমাণ ২.৫% এর বেশি। সঠিক পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থার অভাব। দেয়ালের মাঝের পানির লাইনে ছিদ্র থাকা। প্লাস্টার শুকানোর আগেই রং করে ফেলা। গাঠনিক ত্রুটি ঘরের ভেতরে পর্যাপ্ত আলো বাতাসের অভাব। মেঝে এবং ঘরের মাঝের দেয়ালে সঠিকভাবে সিক্ততা স্তর না দেওয়া।
-
নোনা থেকে বাঁচতে করণীয়: ভবন নির্মাণের আগেই নোনা ধরার বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত। নোনা ধরার মূল কারণ নির্মাণ সামগ্রী আর নির্মাণ প্রক্রিয়ার ওপর নির্ভরশীল। তবে সাধারণত দুটি উপায়ে নোনা প্রতিরোধ করা যায়- স্বাভাবিক উপায়: প্রথমত সঠিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থার মাধ্যমে। তাই বাড়ি নির্মাণের আগেই সে স্থানের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। বাড়ির চারপাশে ভালো ড্রেন স্থাপনের ব্যবস্থা করতে হবে, যেন পানি জমে না থাকে।
-
দ্বিতীয়ত প্রয়োজনীয় আলো-বাতাস চলাচলের মাধ্যমে নোনা রোধ করা যায়। ঘরের মাঝে সব দেয়ালে সমানভাবে রোদের আলো প্রবেশ করতে পারে না, সেক্ষেত্রে নকশা তৈরির সময়ই যেসব দেয়ালে রোদের আলো কম পড়ে; সেসব দেয়ালে সঠিকভাবে বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা করতে হবে। না হলে বৃষ্টির পানি আর রোদের অভাবে দেয়ালটি স্যাঁতসেঁতে হয়ে নোনা ধরার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তাই সূর্যতাপ এবং বাতাস চলাচলের উপর নির্ভর করে নির্মাণ করতে হবে ভবন।
-
কৃত্রিম উপায়: এক্ষেত্রে প্রথমত গাত্রক পানি নিরোধক ব্যবস্থার মাধ্যমে রোধ করা যায়। এ ব্যবস্থা দু’ভাবে হতে পারে, যেমন- বাইরের দিকের গাত্র এবং ভেতরের দিকের গাত্র। যেহেতু বাইরের দিক থেকেই পানি বুনিয়াদ বা কাঠামোতে প্রবেশ করে।
-
সেজন্য বাইরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থা ভেতরের দিকের গাত্রক ব্যবস্থার চেয়ে বেশি কার্যকরী। বাইরের দিকের গাত্রের সিক্ততা নিরোধ করার সহজ ব্যবস্থা হচ্ছে, ইটের জোড়ায় মুখগুলো খুলে পয়েন্টিং করা এবং পরে ভালো করে প্লাস্টার করা। ভেতরের দিকে প্লাস্টারের ওপর সাধারণত মোম বা সিলিকেট দ্রবণ লাগানো হয়। তবে এ ব্যবস্থা ২-৩ বছর পরপর করতে হবে।
-
দ্বিতীয়ত পানি নিরোধক আচ্ছাদন সংযোজনের মাধ্যমেও রোধ করা যায়। বিটুমিন শিট, প্লাস্টিক শিট, মেটাল শিটের মাধ্যমে পানি প্রতিরোধী একটি স্তর গড়ে তোলা হয়।
-
প্রতিকারের উপায়: ভবন নির্মাণের পর নোনা দেখা যাওয়া আমাদের দেশের আবহাওয়ায় বেশ কমন। একে তো বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ অনেক বেশি থাকে বছরজুড়ে; সেই সাথে নির্মাণের সময়ে সতর্কতার অভাব। শখের বাড়িতে নোনা ধরে গেলে সেটা প্রতিকারের ব্যবস্থা করার কিছু উপায় রয়েছে।
-
হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এইচবিআরআই) ভবনের নোনা ধরা প্রতিকারের জন্য এইচবিআরআই-এসপি এবং এইচবিআরআই-ডিপি নামে দুটি দ্রবণ উদ্ভাবন করতে সক্ষম হয়েছে। ভবনের যেসব স্থানে নোনা দেখা দিয়েছে; সেসব জায়গার রং, চুন ইত্যাদির প্রলেপ ভালোভাবে সরিয়ে ফেলতে হবে। প্রয়োজনবোধে আক্রান্ত স্থানসমূহ পানি দিয়ে ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে।