প্রতিকূলতা পেরিয়ে অপরাহর সাফল্য
জনপ্রিয় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব এবং টিভি শো উপস্থাপিকা অপরাহ উইনফ্রের জন্মদিন আজ। ১৯৫৪ সালের এই দিনে যুক্তরাষ্ট্রের মিসিসিপির এক দরিদ্র পরিবারে জন্ম তার। ছবি: ফেসবুক থেকে
-
ফোর্বস-এর হিসেবে, আমেরিকার ৪০০ ধনী ব্যক্তির মধ্যে প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ বিলিয়নিয়ার অপরাহ। তবে আজকের এই জায়গায় আসতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে তাকে। ছোটবেলায় আলুর বস্তা দিয়ে জামা বানিয়ে পরতেন তিনি। তার দরিদ্র পরিবারে সব সময় পোশাক কেনার জন্য বাজেট নির্ধারণ করা থাকত না।
-
শৈশবে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের রাজ্য মিসিসিপির নিভৃত পল্লীতে নানির ফার্মে থাকতেন অপরাহ। এখানেই অবিবাহিত মায়ের ঘরে জন্ম হয় তার। সংসার চালাতে ওই এলাকাতেই অপরাহর অল্প বয়সী মা কাজ খুঁজতেন।
-
তার নানি অসুস্থ হয়ে পড়লে ৬ বছর বয়সী অপরাহকে তার মায়ের সঙ্গে মিলউকি বোর্ডিং হাউজে পাঠিয়ে দেওয়া হয়, যেখানে তিনি দারিদ্রতার পাশাপাশি শারীরিক এবং যৌন নির্যাতনেরও শিকার হন।
-
‘দ্য হিলিং পাওয়ার অব সেলফ লাভ’ বইতে বামওয়েবেজ বামুহিগির লিখেছেন, অপরাহ মাত্র নয় বছর বয়সে তার ১৯ বছর বয়সী এক ভাই দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয়েছিলেন।
-
১৪ বছর বয়সে উইনফ্রে এখান থেকে মুক্তি পেয়ে চলে যান টেনেসির নাশভিলেতে তার বাবার কাছে। সেখান থেকেই তার ক্যারিয়ারের শুরু হয়। এরপর ইস্ট নাশভিল হাই স্কুলে তার পড়াশোনা শুরু। সেখানে তিনি দারুণ রেজাল্ট করতে লাগলেন আর ক্লাসে সবচেয়ে জনপ্রিয় মেয়ে হিসেবে নির্বাচিত হলেন। স্কুলেই তিনি যোগ দেন স্পিচ টিমে আর স্কুল শেষে কাজ করতে থাকেন স্থানীয় ব্ল্যাক রেডিও স্টেশনে।
-
মাত্র ১৯ বছর বয়সে তিনি মিডিয়ায় তার ক্যারিয়ার শুরু করেন। বাল্টিমোরে সহ-উপস্থাপিকা পদ পাওয়ার পূর্বে নাশভিলেতে ২০ বছর বয়সের আগেই তিনি প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ নারী হিসেবে স্থানীয় খবর উপস্থাপিকা হিসেবে কাজ শুরু করেন। কর্মরত অবস্থায় তিনি যৌন নির্যাতনের শিকার হন। কিন্তু তবু তিনি কাজ থেকে সরে আসেননি। কাজ শুরুর সাড়ে ৭ মাস পর তাকে সেখান থেকে বরখাস্ত করা হয়।
-
এরপর শিকাগোতে চলে এসে শুরু করলেন মর্নিং টক শো ‘এএম শিকাগো’। কয়েক মাস পর, শিকাগোতে নিচে থাকা এই শো’টির রেটিং উঠে আসে সর্বোচ্চতে। তিন বছর পর এই অনুষ্ঠান ‘দ্য অপরাহ উইনফ্রে শো’ নামেই পরিচিতি পায়।
-
১৯৮৬ সালে তিনি এই শো’টি জাতীয় পর্যায়ে শুরু করেন। পরবর্তী ২৫ বছর ২০১১ সাল পর্যন্ত এটি টানা চলে। ১২০টি চ্যানেল আর ১০ মিলিয়ন দর্শকের গ্রহণযোগ্যতায় প্রথম বছর শেষেই অনুষ্ঠানটি আয় করে ১২৫ মিলিয়ন ডলার। আর উইনফ্রে অর্জন করেন ৩০ মিলিয়ন ডলার।
-
এবিসি থেকে তিনি অনুষ্ঠানটির মালিকানা পেয়ে যান। ২০০৯ সালে উইনফ্রে ঘোষণা দেন ২০১১ সালে যখন এবিসির সঙ্গে তার চুক্তি শেষ হয়ে যাবে তখন তিনি অনুষ্ঠানটির সমাপ্তি ঘোষণা করবেন। তিনি তাই করেছিলেন।
-
ফোর্বস ম্যাগাজিনের তথ্যানুসারে, টানা তিন বছর ধরে উইনফ্রে বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে ধনী এবং একমাত্র আফ্রো-আমেরিকান। লাইফ ম্যাগাজিন তাকে তার প্রজন্মের সবচেয়ে প্রভাবশালী নারীর খেতাব দিয়েছে। ২০০২ সালের সেপ্টেম্বরে ‘উইনফ্রে অ্যাকাডেমি অফ টেলিভিশন আর্টস অ্যান্ড সায়েন্সেস’র বব হোপ মানবিক পুরস্কারের প্রথম প্রাপক হিসেবে মনোনীত হন।
-
২০১৮ সালের জানুয়ারিতে উইনফ্রে প্রথম আফ্রিকান-আমেরিকান নারী ছিলেন যিনি লাইফ টাইম এচিভমেন্ট হিসেবে গোল্ডেন গ্লোবস সিসিল বি ডেমিল অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।