টেবিল মোছার কাজ থেকে নায়ক হলেন বিক্রান্ত!
‘ইচ্ছা থাকলে উপায় হয়’-এ কথা আরও একবার প্রমাণ করলেন বিক্রান্ত মেসি। কপিশপে কাজ করেও হয়েছেন নায়ক। তার এ গল্পটি জেনে নেয়া যাক এবার।
-
এক সময় কাজ করতেন কফিশপে। সেখানে টেবিলে টেবিলে ধোঁয়া ওঠা কফিমাগ ঘিরে শুনতেন ছবি নিয়ে আলোচনা। আজ তিনি নিজেই অভিনয় করেন ছবিতে। ‘দিল ধড়কনে দো’, ‘ছপাক’, ‘মির্জাপুর’ ছবির অভিনেতা বিক্রান্ত মেসি কোনো পার্টি বা অ্যাওয়ার্ড ফাংশন থেকে ডাক পান না। কিন্তু ভালো অভিনয়ের প্রয়োজন হলেই ডাক আসে তার কাছে।
-
ভারতের ভরসোভার বাসিন্দা বিক্রান্ত অভিনয়জীবন শুরু করেছিলেন টেলিভিশন থেকে। তারপর তিনি পা রাখেন ছবির জগতে। কিন্তু তাকে শুনতে হয়েছিল ছোট পর্দার অভিনেতারা সিনেমায় কিছু করতে পারেন না। সেই অপবাদ নিজের কাজ দিয়ে খণ্ডন করেছেন তিনি।
-
ভরসোভার এক নিম্নবিত্ত পরিবারে বড় হয়ে ওঠেন বিক্রান্ত এবং তার ভাই। তাদের বাবা জলি ছিলেন সাধারণ চাকুরে। মা মীনা ব্যস্ত থাকতেন ঘর সংসারেই। এক সাক্ষাৎকারে বিক্রান্ত বলেছিলেন, তাদের বাবার বেতনের বেশির ভাগ অংশ ফুরিয়ে যেত মাসের মাঝামাঝিই। তারপর সংসার চলত টেনেটুনে।
-
বিক্রান্তের বাড়ি সামনেই একটি পার্ক ছিল। সেখানে এক যুবককে প্রায়ই লম্বা ঝোলা কাঁধে বসে থাকতে দেখা যেত। পরে তাকেই ‘মকবুল’ ছবিতে দেখে চমকে গিয়েছিলেন বিক্রান্ত। জানতে পেরেছিলেন, নিজের জীবনের স্ট্রাগলের সময়ে ওই পার্কে বসে থাকতেন ইরফান।
-
অনেকেই জানেন না, বিক্রান্ত মডেলিং শুরু করেছিলেন দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময়। সেখানে তিনি অভিনয় করেছিলেন মায়ের সঙ্গে। পারিশ্রমিক পেয়েছিলেন ২০০ টাকা। স্কুলে নাচ এবং অভিনয়ের প্রতি আকর্ষণ দেখে শিক্ষকরা তাকে অভিনয় শেখার উপর জোর দিয়েছিলেন।
-
কিন্তু দশম শ্রেণিতে ওঠার পর থেকেই বাস্তবতা ধরা পড়ল তার সামনে। বাবা চাকরি করেন সামান্য বেতনে। সেই টাকায় তার এবং দাদার পড়াশোনার খরচ চালানো অসম্ভব হয়ে পড়েছিল। সংসারের হাল ধরতে স্থানীয় এক কফিশপে চাকরি নেন বিক্রান্ত। সেখানে তিনি কফি তৈরি, কফি সার্ভ করা থেকে শুরু করা টেবিল পরিষ্কারও করতেন।
-
উপার্জন থেকে নিজেরও একটা শখ পূর্ণ করেছিলেন বিক্রান্ত। ভর্তি হয়েছিলেন শমক দভরের নাচ শেখানোর প্রতিষ্ঠানে। তার নাচের দক্ষতায় খুশি হয়ে শমক তাকে ৪০ জন সেরা শিক্ষার্থীর মধ্যে বেছে নিয়েছিলেন। তার সহকারী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি বিক্রান্ত নাচ শেখাতেন যৌনকর্মীদের সন্তানদের।
-
পড়াশোনা শেষ করে বিক্রান্ত ঠিক করেছিলেন ফ্লাইট অ্যাটেনড্যান্ট হবেন। পরীক্ষার প্রতিটা ধাপ পেরিয়েও গিয়েছিলেন। সে সময় একদিন হঠাৎই পাল্টে গেল জীবনের মোড়। বন্ধুর সঙ্গে গিয়েছিলেন রেস্তোরাঁয়। সেখানে অপেক্ষা করছিলেন টয়লেটের সামনে কিউয়ে। তাকে দেখে এক প্রযোজক প্রস্তাব দেন শো-এ অংশগ্রহণের।
-
এই সময় বড় দ্বিধার মুখে পড়েন বিক্রান্ত। একদিকে তার ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্টের চাকরি প্রায় হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু অভিনয়ের প্রতি ভালোবাসাও এড়াতে পারছিলেন না। শেষে তিনি মনের ডাকেই সাড়া দেন। রাজি হয়ে যান অভিনয়ের প্রস্তাবে। দৈনিক পারিশ্রমিক ছিল ৬ হাজার টাকা।
-
শো-এর নাম ছিল ‘কঁহা হুঁ ম্যায়’। কিন্তু এই ধারাবাহিক কোনোদিন টিভিতে সম্প্রচারিতই হয়নি। মাঝপথেই তার কাজ বন্ধ হয়ে যায়। আবার বন্ধ হয়ে যায় উপার্জনের পথ। বিক্রান্ত এরপর ওই প্রযোজনা সংস্থার কাছেই কাজ চান। তাকে সহকারী প্রযোজকের কাজ দেয়া হয়। তার কাজ ছিল অডিশন নেয়া।
-
কিন্তু একটানা অন্যদের পোর্টফোলিয়ো বাছাই করতে ভালো লাগছিল না বিক্রান্তের। তার স্বপ্ন ছিল অভিনেতা হওয়ার। এরপর তিনি ঝুঁকি নিয়ে পুরো সময় দেন অভিনেতা হওয়ার পিছনেই। এনডিটিভি ইমাজিন-এ তিনি সুযোগ পান ‘ধর্মবীর’ ধারাবাহিকে ধর্মের চরিত্রে। তার কাজ জনপ্রিয় হয়।