যে কারণে সালমান-বালাসুব্রহ্মণ্যমের জনপ্রিয় জুটি ভেঙে গেছে
এই নায়িকার সাথে সালমান খান জুটি বেঁধে সিনেমা উপহার দিয়েছেন। পরে ভেঙে গেছে তাদের জুটি। এবার জেনে নিন যে কারণে সালমান-বালাসুব্রহ্মণ্যমের জনপ্রিয় জুটি ভেঙে গেছে।
-
সময়ের সঙ্গে সবকিছুরই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। বলিউডের ক্ষেত্রেও তার ব্যত্তয় ঘটেনি। দীর্ঘ চড়াই-উতরাইয়ের পর এক দশকে যদি কেউ কামব্যাক করে থাকেন তিনি হলেন সালমান খান। ‘ওয়ান্টেড’, ‘দবং’, ‘সুলতান’, ‘এক থা টাইগার’, ‘টাইগার জিন্দা হ্যায়’-এর মতো ছবির দৌলতে বলিউডের ‘ভাইজান’ তথা ‘দাবং খান’-এ পরিণত হয়েছেন তিনি।
-
যদিও বলিউডে সালমানের উত্থান ঘটেছিল রোমান্টিক নায়ক হিসেবেই। ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’, ‘সাজন’, ‘হম আপকে হ্যায় কউন’-এ মতো ছবি তাকে ক্যারিয়ারের শুরুতেই প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল। তবে সালমানকে এই প্রতিষ্ঠা দেওয়া পিছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল এক গায়কেরও, এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যম।
-
এক সময় বলিউডে অভিনেতার পাশাপাশি গায়কদেরও সমান গুরুত্ব ছিল। কোন নায়কের গলায় কার গান বসালে ভাল লাগবে, তা বাছাই করার জন্য আলাদা টিম পর্যন্ত নিয়োগ করতেন প্রযোজক-পরিচালকরা। তাতে ক্যারিয়ারের শুরুতেই সালমানের নামের সঙ্গে এস পি বালাসুব্রহ্মণ্যমের নাম জুড়ে যায়। কিন্তু অন্যতম সফল এই নায়ক-গায়কের জুটি মাত্র কয়েক বছরের মধ্যেই কেন ভেঙে গেল, তা নিয়ে নানা কথা শোনা যায়।
-
১৯৮৯ সালে ‘ম্যায়নে প্যায়ার কিয়া’ ছবির মাধ্যমে নায়ক হিসেবে বলিউডে আত্মপ্রকাশ সালমানের। একমাত্র ‘আয়া মৌসম দোস্তি কা’ ছাড়া ছবিতে সালমানের গলায় সবক’টি গানই বালাসুব্রহ্মণ্যমের গাওয়া, যার মধ্যে ‘আতে যাতে’, ‘দিল দিওয়ানা’ এবং ‘মেরে রঙ্গ মে’-র মতো সুপরাহিট হয়।
-
সেখান থেকেই বলিউডে সালমান এবং এসপি বালাসুব্রহ্মণ্যম জুটির যাত্রা শুরু। ১৯৯১ সালে ‘লভ’ ছবিতেও সালমানের গলায় গান গেয়েছিলেন বালাসুব্রহ্মণ্যম। ছবিটি বক্সঅফিসে তেমন সাড়া ফেলতে না পারলেও, তার গাওয়া ‘সাথিয়াঁ তুনে ক্যায়া কিয়া’ গানটি সুপারহিট হয়।
-
এরপর ১৯৯১ সালেই ‘পাত্থর কে ফুল’ ছবিতে সালমানের হয়ে সাতটি গানে গলা দেন বালাসুব্রহ্মণ্যম। এর মধ্যে ‘কভি তু ছালিয়া লগতা হ্যায়’ এবং ‘তুমসে জো দেখতে হি প্যায়ার হুয়া’ গান দু’টি সুপার হিট হয়।
-
ওই বছরই ‘সাজন’ ছবিতে সালমানের গলায় বালাসুব্রহ্মণ্যমের গাওয়া ‘বহুত প্যায়ার করতে হ্যায়’, ‘তুমসে মিলনে কি তমন্না হ্যায়’, ‘পহেলি বার মিলে হ্যায়’ গানগুলো সুপারহিট হয়।
-
এর কয়েক বছর পর সালমানকে নিয়ে ফের ছবি করার সিদ্ধান্ত নেন পরিচালক সুরজ বরজাতিয়া। ১৯৯৪ সালে তাদের যুগলবন্দিতে তৈরি ‘হম আপকে হ্যায় কউন’ ছবিটি মুক্তি পায়। তাতেও সালমানের কণ্ঠ হিসেবে বালাসুব্রহ্মণ্যমকে বেছে নেন সুরজ।
-
ছবিতে ‘মৌসম কা জাদু’, ‘দিদি তেরা দেবর দিওয়ানা’, ‘জুতে দো প্যায়সে লো’, ‘পেহলা পেহলা প্যায়ার হ্যায়’, ‘ধিক তানা’, ‘মুঝসে জুদা হো কর’, ‘হম আপকে হ্যায় কউন’, ‘ওয়াহ ওয়াহ রাম জি’-র মতো সুপারহিট গান গেয়ে বলিউডে পাকাপাকি জায়গা করে নেন বালাসুব্রহ্মণ্যম।
-
বছরের পর বছর বলিউডে এই ধরনের গায়ক-নায়ক জুটি উঠে এসেছেন। এর মধ্যে অন্যতম হলেন কিশোর কুমার-রাজেশ খন্না, আমির খান-উদিত নারায়ণ, শাহরুখ খান-অভিজিৎ। নব্বইয়ের দশকে সলমন-বালাসুব্রহ্মণ্যম জুটিকেও কিশোর-রাজেশের জুটির সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেন সকলে।
-
কিন্তু এর পরেই বলিউডে কার্যত বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেন সঙ্গীত পরিচালক নাদিম-শ্রবণ জুটি। একের পর এক হিট গান উপহার দিতে শুরু করেন তারা। পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে, নায়ক-নায়িকার চেয়ে তার বেশি পারিশ্রমিক নিতে শুরু করেন। কিন্তু কাউকে টাইপকাস্ট করে ফেলার ঘোর বিরোধী ছিল এই জুটি।
-
সালমানের গলা বলতে মানুষ শুধু বালাসুব্রহ্মণ্যমকে খুঁজবেন, আমিরের গলা হিসেবে উদিত নারায়ণকে, বিষয়টি একেবারেই না পছন্দ ছিল নাদিম-শ্রবণের। তাই তারা এক্সপেরিমেন্ট শুরু করে দেন। ‘দিল তেরা আশিক’ ছবিতে সালমানের গলায় কুমার শানুকে যেমন সুযোগ দেন, তেমনই সোনু নিগমকে সুযোগ দেন ‘জিত’ ছবিতে।
-
এককথায় বলতে গেলে, হাতে কলমে সেইসময় বলিউডে বিপ্লব ঘটিয়ে ফেলেন নাদিম-শ্রবণ। পরীক্ষা করতে গিয়ে লাগাতার সাফল্যও পাচ্ছিলেন তারা। ডজন ডজন পুরস্কার ঘরে তুলছিলেন। তাই তাদের ছবিতে কার গলায় কাকে দিয়ে গাওয়ানো হবে, সে সব নির্ধারণের ক্ষেত্রে নাদিম-শ্রবণের কথাই শেষ হয়ে দাঁড়ায়।
-
তাতেই সালমান ও বালাসুব্রহ্মণ্যম জুটি ভেঙে যায়। সালমানকে নিয়ে যেখন ‘হম দিল দে চুকে সনম’ ছবিটি তৈরি করেন সঞ্জয় লীলা ভনসালী, সেইসময় অনেকেই বালাসুব্রহ্মণ্যমের নাম সুপারিশ করেছিলেন। কিন্তু ছবিতে সংগীত পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ইসমাইল দরবার সলমনের গলায় উদিত নারায়ণ, কুমার শানু, কেকে এমনকি হরিহরণকে দিয়ে গান গাওয়ান।
-
তার জেরেই জীবনে ৪০ হাজারের বেশি গান গাওয়া বালাসুব্রহ্মণ্যম ও সালমান খানের জুটি ভেঙে যায়। ২০১৫ সালে সালমানকে নিয়ে সুরজ বরজাতিয়া যখন ‘প্রেম রতন ধন পায়ো’ ছবিটি তৈরি করেন, তখনও বালাসুব্রহ্মণ্যমের প্রসঙ্গ ফিরে আসে। সেই নিয়ে প্রশ্ন করলে সলমন জানান, বয়স বেড়েছে তঁর। এখন হয়ত আর আগের মতো বালাসুব্রহ্মণ্যমের গান তার গলায় মানাবে না। তবে সালমানের সঙ্গে কাজ না করতে পারা নিয়ে আজও কোনো মন্তব্য করতে দেখা যায়নি বালাসুব্রহ্মণ্যমকে।