যে কারণে বারবার সুশান্তের ম্যানেজার বদলেছে
প্রয়াত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু নিয়ে চলছে এখনও তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। তার মৃত্যু নিয়ে প্রকাশিত হচ্ছে নানা রকম তথ্য। এবার জেনে নিনযে কারণে বারবার সুশান্তের ম্যানেজার পাল্টে গিয়েছে।
-
বলিউডের তারকাবৃত্তে প্রবেশের পরে গত কয়েক বছরে ঘন ঘন নিজের ম্যানেজার পরিবর্তন করেছেন সুশান্ত সিংহ রাজপুত। তার রহস্যমৃত্যুতে প্রকাশিত হয়েছে ম্যানেজারদের নাম। তাদের কাউকে কাউকে জেরা করেছে ইডি। অনেকে আবার মুখোমুখি হয়েছেন মুম্বই ও বিহার পুলিশের।
-
সুশান্তের প্রাক্তন পাবলিসিস্ট ছিলেন রোহিনী আইয়ার। নায়কের জনসংযোগ বা পাবলিক রিলেশনের দিকটি দেখাশোনা করতেন রোহিনী-ই। পেশাদারি সম্পর্কের বাইরে দু’জনে খুব ভালো বন্ধুও ছিলেন।
-
গত ১৪ জুন উদ্ধার হয় সুশান্তের ঝুলন্ত দেহ। পর দিনই তার সঙ্গে নিজের পুরনো ছবি ইনস্টাগ্রামে শেয়ার করেন রোহিনী। সঙ্গে মর্মস্পর্শী বার্তায় লেখেন, ‘তুমি বলেছিলে সারা জীবন আমার পাশে থাকবে। আমি বলেছিলাম, যা-ই হয়ে যাক না কেন, তোমার ঠোঁটের কোণে আমি ঠিক হাসি আনব। মনে হয়, আমরা দু’জনেই ভুল ছিলাম।’
-
বক্তব্যের শেষে সুশান্তকে তিনি সম্বোধন করেছেন ‘মাই সন’ বলে। এখানেই শেষ নয়। স্নেহের সুশান্তের অকালমৃত্যুতে পরপর বেশ কিছু পোস্ট করেছেন রোহিনী। বলেছেন, এই শোক তিনি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না। স্বজনপোষণকে কাঠগড়ায় দাড় করিয়ে তার আক্ষেপ, সুশান্তের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দিল না বলিউড।
-
বান্দ্রা থানায় রোহিনীকে গত ২২ জুন টানা ৯ ঘণ্টা জেরা করে পুলিশ। তার মতোই পুলিশি জেরার মুখে পড়েন সুশান্তের আর এক প্রাক্তন ম্যানেজার রাধিকা নিহালনিও। একটি পি আর এজেন্সিরসহ কর্ণধার রাধিকাকে গত ১৮ জুন জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তিনিও সুশান্তের জনসংযোগের দিকটি দেখাশোনা করতেন।
-
গত ১৮ জুন মুম্বাই পুলিশের মুখোমুখি হন শ্রুতি মোদীও। তিনি ছিলেন সুশান্তের প্রাক্তন বিজনেস ম্যানেজার। ভবিষ্যৎ নিয়ে সুশান্তের অনেক পরিকল্পনার কথা পুলিশকে জানান তিনি। তার আগে তিনবার ইডি-র মুখোমুখি হন শ্রুতি। তিনি দাবি করেন, সুশান্তের সব বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতেন রিয়া চক্রবর্তী।
-
শ্রুতি যখন সুশান্তের হয়ে কাজ করতে শুরু করেন, তখন সুশান্তের জীবনে রিয়া এসে গিয়েছেন। রিয়ার ট্যালেন্ট ম্যানেজার হয়েও কাজ করেছেন শ্রুতি। পুলিশের কাছে যে এফআইআর করেছেন সুশান্তের বাবা কে কে সিংহ, তাতে শ্রুতির নাম আছে। যদিও তরুণীর দাবি, এ বছরের ফেব্রুয়ারির পর থেকে সুশান্তের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল না।
-
সুশান্তের মৃত্যুর কয়েক মাস আগে তার সঙ্গে কাজ করতে শুরু করেন সিদ্ধার্থ পিঠানি। প্রেমিকা রিয়া ও তার ভাই শৌভিকের সঙ্গে সম্প্রতি একটি সংস্থা শুরু করেছিলেন সুশান্ত। সেখানে গ্রাফিক্স তৈরি করতেন সিদ্ধার্থ।
-
এখনও পর্যন্ত তিন বার ইডি-র মুখোমুখি হয়েছেন সিদ্ধার্থ। মুম্বাই পুলিশকে একটি ই-মেল পাঠিয়েছেন তিনি। সেখানে তার অভিযোগ, রিয়ার বিরুদ্ধে বলার জন্য তাকে চাপ দেয়া হচ্ছে সুশান্তের পরিবার থেকে। তিনিও যে সুশান্তের মৃত্যুরহস্যের সমাধান চান, সেটাও জানাতে ভোলেননি।
-
প্রয়াত নায়কের যে প্রাক্তন ম্যানেজারের নাম এখন সবথেকে আলোচিত, তিনি হলেন দিশা সালিয়ান। একটি সেলেব্রিটি ম্যানেজমেন্ট সংস্থার হয়ে তিনি সুশান্তের সঙ্গে পরিচিত হন।
-
সুশান্তের মৃত্যুর পাঁচ দিন আগে মুম্বাইয়ের মালাডের একটি বহুতল থেকে পড়ে রহস্যমৃত্যু হয় দিশার। তার এবং সুশান্তের মৃত্যু যে নিছক সমাপতন নয়, এই দাবি সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্রমে জোরদার হয়েছে। এমনও অভিযোগ উঠেছে, দিশাকে গণধর্ষণের পরে খুন করা হয়েছে। সে কথা জানতে পেরেছিলেন বলে নাকি খুন করা হয়েছে সুশান্তকেও।
-
দিশা ও সুশান্তের রহস্যমৃত্যুতে পরবর্তী সময়ে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরের ছেলে তরুণ মন্ত্রী আদিত্য ঠাকরে এবং অভিনেতা আদিত্য পাঞ্চোলির ছেলে সূর্যের নাম জড়িয়ে গিয়েছে। তবে দু’জনেই সব অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করেছেন, তারা ষড়যন্ত্রের শিকার।
-
যে সংস্থার হয়ে কাজ করতেন দিশা, ওই একই সংস্থার কর্মী জয়ন্তী সাহা-ও। তিনি ছিলেন সুশান্ত সিংহ রাজপুতের ট্যালেন্ট ম্যানেজার। তাকেও জেরা করেছে ইডি।
-
স্যামুয়েল মিরান্ডা ছিলেন সুশান্তের হাউস ম্যানেজার। বাড়িতে নিযুক্ত সুশান্তের সব কর্মচারী এবং বাড়ির ব্যয়ভারের দিকটি দেখতেন স্যামুয়েল। সুশান্তের অর্থ তছরুপের ঘটনায় তিনি প্রধান অভিযুক্ত। তাকে দু’বার জেরা করেছে ইডি। জানতে চাওয়া হয়েছে প্রয়াত নায়কের অর্থনৈতিক দিক সম্বন্ধে।
-
ম্যাট্রিক্স সংস্থার প্রধান ও ট্যালেন্ট ম্যানেজার রেশমা শেটীকেও সুশান্তকাণ্ডে জেরা করা হয়েছে। একাধিক সেলেব্রিটির ম্যানেজার হিসেবে কাজের অভিজ্ঞতা থাকা রেশমা ইন্ডাস্ট্রিতে পরিচিত নাম। গত ১০ জুলাই তাকে ৫ ঘণ্টা জেরা করে মুম্বাই পুলিশ।
-
সহকারী এবং ম্যানেজার হিসেবে কাজ করার সময় তিন বছর সুশান্তের সঙ্গে থাকতেন অঙ্কিত আচার্য। সংবাদমাধ্যমে তিনি জানান, রিয়া চক্রবর্তী এসে সুশান্তের চারপাশে সব কর্মীদের খারিজ করে নতুনদের নিয়োগ করেছিলেন।
-
অঙ্কিতের দাবি, গত বছর অগস্টে গ্রামের বাড়ি থেকে ছুটি কাটিয়ে ফেরার পরে তিনি জানতে পারেন, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের সব কর্মীদের পরিবর্তন করা হয়েছে। নতুন দেহরক্ষী তাকে সুশান্তের বাড়িতে ঢুকতে দিতেন না বলেও অভিযোগ অঙ্কিতের।
-
সেইসঙ্গে পাল্টে গিয়েছিলেন সুশান্তও। দাবি অঙ্কিতের। তার কথায়, সুশান্ত তাকে ভাইয়ের মতো মনে করতেন। অথচ, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি যখন অঙ্কিতকে তার বকেয়া বেতন ও অন্যান্য প্রাপ্য দিচ্ছিলেন, তখন তাকে সম্পূর্ণ অন্য মানুষ বলে মনে হয়েছিল।
-
সংবাদমাধ্যমকে অঙ্কিত জানিয়েছেন, সুশান্তের দু’চোখের নীচে ঘন কালি ছিল। শেষবার যখন তাদের দেখা হয়েছিল, একবারের জন্যেও হাসেননি সুশান্ত। পুলিশকে আরও একটি চমকপ্রদ তথ্য জানিয়েছেন অঙ্কিত। বলেছেন, তিনি যত দিন সুশান্তের সঙ্গে ছিলেন, কোনোদিন তাকে ঘরের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ করতে দেখেননি।
-
গত ২৫ জুলাই সুশান্তের বাবা কে কে সিংহ পটনার রাজীবনগর থানায় অভিযোগ জানান। তার অভিযোগ ছিল, সুশান্তের অর্থ নয়ছয় করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে কে কে সিংহের অভিযোগের আঙুল ছিল রিয়া চক্রবর্তী, রিয়ার পরিবার, শ্রুতি মোদী এবং স্যামুয়েল মিরান্ডার দিকে। তার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করছে ইডি।
-
সুশান্তকাণ্ডের তদন্তভার সিবিআই-কে দেওয়া হোক-বিহার সরকারের এই আবেদনে গত ৫ অগস্ট সাড়া দিয়েছে কেন্দ্রও। আজ সেই আবেদনে সাড়া দিল সুপ্রিম কোর্টও।