মডেল হতে চেয়ে যে তরুণী পুলিশ অফিসার হয়েছেন
তিনি খ্যাতিমান তারকা হতে চেয়েছিলেন। অংশ নিয়েছিলেন মিস ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায়। কিন্তু এখন তিনি হয়েছেন পুলিশ অফিসার। জেনে নিন তার সম্পর্কে।
-
১৯৯৪ সালে মিস ওয়ার্ল্ডকে দেখেই ঠিক করেছিলেন, মেয়ে হলে নাম রাখবেন ওই সুন্দরী নীলনয়নার নামেই। তরুণীর সেই ইচ্ছে পূর্ণ হল তিন বছর পরে। সদ্যোজাত মেয়ের নাম তিনি রাখলেন ‘ঐশ্বরিয়া’।
-
মায়ের ইচ্ছে, তার মেয়েও এক দিন পরিচিত হবে মডেলিংয়ের দুনিয়ায়। বড় হয়ে মায়ের ইচ্ছে পূরণ করেছেন মেয়ে। তবে একইসঙ্গে অপূর্ণ রাখেননি নিজের স্বপ্নও।
-
সেই স্বপ্ন ঐশ্বরিয়া বুনেছিলেন তার বাবা কর্নেল অজয়কুমার শ্যোরাণকে দেখে। তিনি এখন এনসিসি তেলেঙ্গনা ব্যাটালিয়নের কম্যান্ডিং অফিসার। কর্মরত করিমনগরে।
-
বাবাকে দেখেই দেশবাসীর সেবায় ব্রতী হওয়ার ইচ্ছে ঐশ্বর্যার। সেই স্বপ্নপ্রূণের প্রথম ধাপে পা রেখেছেন তিনি। সফল হয়েছেন ইউপিএসসি পরীক্ষায়। সম্প্রতি প্রকাশিত মেধাতালিকায় তার স্থান ৯৩ নম্বরে।
-
হঠাৎ করে যে পড়াশোনায় মন বসেছে, তা নয়। ঐশ্বরিয়া জানিয়েছেন, তিনি বরাবরই মেধাবী ছাত্রী বলে পরিচিত। পরীক্ষার ফলাফলে প্রথম সারিতে থাকা এই ছাত্রী স্কুলে ছিলেন ক্লাস ক্যাপ্টেনও।
-
ঐশ্বরিয়ার জন্ম রাজস্থানের প্রত্যন্ত চুরু গ্রামে। তার পর বাবার কর্মসূত্রে দেশের বিভিন্ন শহরে কেটেছে স্কুলজীবন। তিনি প্রথমে বিজ্ঞান শাখার ছাত্রী ছিলেন। পরে দিল্লির লেডি শ্রীরাম কলেজ অব কমার্স থেকে স্নাতক হন।
-
বাণিজ্যশাখার বিষয়গুলোর পাশাপাশি তার হৃদয় জুড়ে ছিল মডেলিংও। সঙ্গে ছিল মায়ের উৎসাহ। কলেজে পড়তে পড়তেই অল্পবিস্তর মডেলিং শুরু হল।
-
প্রথমে ছোটখাটো সৌন্দর্য প্রতিযোগিতা। তারপর ২০১৬ সালে প্রতিদ্বন্দ্বিতা মিস ইন্ডিয়ার মঞ্চে। পৌঁছেছিলেন প্রতিযোগিতার মূলপর্বে।
-
এরপর বিভিন্ন ফ্যাশন শো-এ অংশ নেন তিনি। মার্জার সরণিতে ঝড় তোলেন। মডেলিংয়ের দুনিয়ায় ধীরে ধীরে জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে ঐশ্বরিয়া শ্যোরাণের।
-
কিন্তু গ্লামারের আলোতেও তাকে ধাওয়া করছিল নিজের স্বপ্নপূরণের ইচ্ছে। বুঝলেন, তার জন্য মডেলিং ছাড়তে হবে। সাফল্য আসুক বা না আসুক, চেষ্টা করতেই হবে।
-
বছর দুয়েকের জন্য মডেলিংকে বিদায় জানালেন ঐশ্বরিয়া। সেইসঙ্গে কার্যত বিদায় জানালেন নিজের স্মার্টফোনকেও। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া সে মোবাইল ফোনে হাত দিতেন না।
-
পড়াশোনায় একাগ্রতা বাড়ানোর জন্য নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়েছিলেন সবরকম সমাজমাধ্যম থেকেও। হোয়াটসঅ্যাপ, ফেসবুক, টুইটার ভুলে গিয়ে ঐশ্বর্যার সামনে তখন শুধুই পরীক্ষার পাঠ্য।
-
তবে কোনো কোচিং সেন্টারেও ভর্তি হননি ঐশ্বরিয়া। নিজেই জানিয়েছেন পরীক্ষার প্রস্তুতির কথা। কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রশিক্ষণ ছাড়া প্রথম চেষ্টাতেই সফল হয়ে বাজিমাত করেছেন ২৩ বছরের এই তরুণী।
-
কিন্তু দেশসেবার জন্য সরাসরি বাবার পদাঙ্ক অনুসরণ করলেন না কেন তিনি? সেনাবাহিনীতে যোগ না দিয়ে আইপিএস (ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস) কেন? এই প্রশ্নও এসেছে ঐশ্বরিয়া কাছে।
-
সপ্রতিভ তরুণী জানিয়েছেন, তাঁর মনে হয়, সেনাবাহিনীতে মহিলাদের কাজ করার জন্য এখনও অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। কিন্তু এক জন মহিলা আইএএস অফিসারের ক্ষেত্রে সেই নির্দিষ্ট গণ্ডি নেই। বরং, সেখানে তার সামনে জনসেবার জন্য খোলা আকাশ পড়ে রয়েছে।
-
সেই আকাশেই পাখা মেলেছেন ঐশ্বরিয়া। সোশ্যাল মিডিয়া আপ্লুত তাকে নিয়ে। সাময়িকভাবে হলেও সার্চ ইঞ্জিনে জনপ্রিয়তার মাপকাঠিতে তিনি টেক্কা দিয়েছেন তার সমনামী, প্রাক্তন মিস ওয়ার্ল্ড বচ্চনবধূকেও।