যে কারণে সুশান্ত বার বার বলতেন ‘ওরা আমায় ছাড়বে না’?
সুশান্তের মৃত্যুর মাস পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও খবরের শিরোনাম তিনি। মৃত্যুর রহস্য জানা না গেলেও তাকে নিয়ে প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে রহস্যের।
-
স্বজনপ্রীতি, অবসাদের পরে প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তী। অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পরোক্ষ কারণ হিসেবে উঠে এসেছে এই বিষয়গুলো। এবার আত্মহত্যার তত্ত্বকে ছাপিয়ে জোরালো হয়ে উঠছে খুনের অভিযোগ। বলা হচ্ছে, সুশান্ত এবং তার প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা, দু’জনকেই খুন করা হয়েছে।
-
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রথম থেকেই দাবি উঠেছিল জুন মাসে এক সপ্তাহের মধ্যে প্রথমে সুশান্তের প্রাক্তন ম্যানেজার দিশা এবং পরে সুশান্তের নিজের রহস্যমৃত্যু নিছক সমাপ্ত নয়। এই দুই ঘটনার মধ্যে সম্পর্ক আছে।
-
এই দাবিকে আরও পোক্ত করেছে মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি সাংসদ নারায়ণ রাণের দাবি। তিনি সম্প্রতি দাবি করেছেন, দিশাকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে। সে কথা সুশান্ত জানতেন বলে তাকেও খুন করা হয়েছে।
-
প্রবীণ রাজনীতিক রাণের আরও দাবি, মহারাষ্ট্রের এক তরুণ প্রভাশালী মন্ত্রীকে আড়াল করতেই দু’টি হত্যাকে আত্মহত্যা সাজিয়ে পেশ করেছে তদন্তকারী মুম্বাই পুলিশ। কে এই নবীন মন্ত্রী? রাণে অবশ্য তার নাম করেননি।
-
কিন্তু তিনি নাম না নিলেও ইতিমধ্যে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে আদিত্য ঠাকরের নাম। অভিযোগ, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকুরের ছেলে আদিত্য এই দু’টি ষড়যন্ত্রেই জড়িত। তাঁকে জড়িয়ে বিভিন্ন দাবি এবং গুঞ্জন ইতিমধ্যেই ছড়িয়েছে ফেসবুক এবং হোয়াটসঅ্যাপে।
-
সে সব অভিযোগ নস্যাৎ করে আদিত্যর দাবি, সুশান্তের মৃত্যুর ঘটনায় তার কোনো সম্পর্ক নেই। এ সবই তার বিরুদ্ধে নোংরা রাজনীতি এবং বিরোধীদের ষড়যন্ত্র বলে অভিযোগ আদিত্যর।
-
এই তরুণ নেতার দাবি, মহারাষ্ট্রের শাসক দল দক্ষ হাতে করোনা-অতিমারির বিপর্যয় নিয়ন্ত্রণ করেছে। তাদের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত বিরোধী পক্ষ এই ষড়যন্ত্র করেছে বলে তার অভিযোগ।
-
তবে একইসঙ্গে আদিত্য জানিয়েছেন, বলিউডের একাধিক তারকার সঙ্গে তার বন্ধুত্ব আছে এবং রুপালি দুনিয়ার সঙ্গে হৃদ্যতাকে তিনি কোনো অপরাধ বলেও মনে করেন না। দাবি, মুখ্যমন্ত্রী-পুত্রের।
-
এরপরই আদিত্যকে জোরালো আক্রমণে বিঁধেছেন কঙ্গনা রানাউত। সোশ্যাল মিডিয়ায় তিনি সরাসরি আদিত্যকে উদ্দেশ করে বলেছেন, ‘নোংরা রাজনীতির’ কথা তার মুখে মানায় না। কারণ, তার বাবা যেভাবে মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসেছেন, সেটাও নোংরা রাজনীতিরই উদাহরণ। দাবি কঙ্গনার।
-
সেইসঙ্গে একগুচ্ছ প্রশ্ন সামনে এনেছেন প্রতিবাদী অভিনেত্রী। যে প্রশ্নগুলোর উত্তর আজও পাওয়া যায়নি। রিয়াকে কেন পাওয়া যাচ্ছে না থেকে শুরু করে আইপিএস বিনয় তিওয়ারিকে কোয়রান্টিনের নামে বন্দি করে রাখা- এ রকম বেশ কিছু বিতর্কিত প্রশ্নের উত্তর চেয়েছেন কঙ্গনা।
-
উত্তর পাওয়া যায়নি এ রকম বহু প্রশ্ন ঘুরছে সোশ্যাল মিডিয়াতেও। সেইসঙ্গে উঠে এসেছে বেশ কিছু দাবিও। এই সব দাবির কোনো প্রামাণ্য নথি যদিওএখনও সামনে আসেনি।
-
সে রকমই একটি অভিযোগে দাবি করা হয়েছে, সুরজ পাঞ্চোলির ডাকে তাদের পেন্ট হাউসে পার্টি করতে গিয়েছিলেন দিশা। সেখানে ছিলেন বলিউডের এক সুপারস্টারের অভিনেতা ভাই, উদ্ধব-পুত্র আদিত্য ঠাকরে, রিয়ার ভাই শৌভিক চক্রবর্তী এবং আরও অনেক সেলেব্রিটি।
-
অভিযোগ, সেখানে গণধর্ষণের পরে দিশাকে ১৪ তলা উঁচু বারান্দা থেকে ফেলে দেয়া হয়। যাতে মনে হয় তিনি নেশাগ্রস্ত অবস্থায় আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু গণধর্ষণ এবং হত্যার মাঝের সময়টুকুতে দিশা নাকি যোগাযোগ করতে পেরেছিলেন সুশান্তের সঙ্গে।
-
দাবি করা হয়েছে, তিনি যে নির্যাতিতা এটা সুশান্তকে নাকি জানাতে পেরেছিলেন দিশা। তারপর সুশান্তের উপর ক্রমাগত চাপ এসেছে মুখ বন্ধ রাখার জন্য। তার জন্যই নাকি তিনি ৯ থেকে ১৩ জুনের মধ্যে ৫০ বার সিমকার্ড পাল্টেছিলেন। এমনকি, আতঙ্কিত সুশান্ত নাকি ফ্ল্যাট ছেড়ে নিজের গাড়িতেও ঘুমিয়েছেন। যদিও এই ৫০টি সিমকার্ড পরিবর্তনের তত্ত্ব মুম্বাই পুলিশ মানতে চায়নি।
-
সুশান্ত যে আতঙ্কে ছিলেন সে দাবি করেছেন তাদের পারিবারিক বন্ধু স্মিতা পারিখ। সম্প্রতি তিনি সংবাদমাধ্যমে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘গত ৯ জুন সুশান্তের ম্যানেজার দিশা মারা যান। এরপর থেকে আচমকাই ভীষণ ভয় পেয়ে যান সুশান্ত। বার বার নিতুকে (সুশান্তের দিদি) বলতে শুরু করেন, এবার আর ওরা আমায় ছাড়বে না। ঠিক আমার পিছনে আসবে। সুশান্ত যেন নিজের মধ্যে ছিল না।”
-
এখন প্রশ্ন উঠছে, কাদের ভয় পাচ্ছিলেন সুশান্ত? কেন বারেবারেই প্যানিক অ্যাটাক হচ্ছিল তার? স্মিতার কথায়, ‘দিশার মৃত্যুর পর থেকেই কেমন যেন বদলে যেতে থাকে সুশান্ত। অথচ তার আগেও সে দিদির সঙ্গে যোগাভ্যাস করেছে। টেবল টেনিস খেলেছে। যদিও কাদের জন্য এত ভয় পেয়েছিল সুশান্ত তা আমি জানি না।’
-
স্মিতা আরও জানান, ৮ জুন রিয়া আচমকাই সুশান্তের বাড়ি ছেড়ে নিজের বাড়ি চলে আসেন। সঙ্গে ছিল দুই ব্যাগ ভর্তি জিনিস। ড্রাইভার তাকে তার বাড়ি ছেড়ে দিয়ে আসেন। মিতু সিংহ ওই দিনই সন্ধেবেলায় ভাইয়ের বাড়ি যান।
-
১১ জুন সুশান্তের আর এক দিদি প্রিয়ঙ্কার স্বামীকে ফোন করেন সুশান্ত। তার জামাইবাবু আইপিএস অফিসার। সুশান্ত নাকি তাকে জানান, ইন্ডাস্ট্রিকে বিদায় জানাতে চান তিনি। বিদায় জানাতে চান মুম্বাইকে। ১২ জুন সুশান্তের দিদি মিতু মুম্বাইতে নিজের বাড়ি ফিরে যান। তার বাচ্চা ছোট, তাই ফিরে গিয়েছিলেন বলে মিতু জানিয়েছেন পুলিশকে।
-
স্মিতার কথা থেকে এ-ও জানা গিয়েছে, ঠিক ছিল, ১৩ জুন সুশান্তের বাড়িতে আবার আসবেন মিতু। কিন্তু তিনি আসতে পারেননি। সুশান্তকে ফোন করেন। ফোন ধরেননি সুশান্ত। মিতু ফোন করেন সুশান্তের বন্ধু সিদ্ধার্থকেও। সিদ্ধার্থ পিঠানি সুশান্তের সঙ্গে একই ফ্ল্যাটে ছিলেন। তিনি জানান, ঠিক আছেন সুশান্ত।
-
১৪ জুন মিতু ঠিক করেন তিনি ভাইয়ের কাছে যাবেন। সেদিন রবিবার ছিল। কিন্তু সুশান্তকে ফোনে না পাওয়ায় মিতু আবার ফোন করেন সিদ্ধার্থকে। সিদ্ধার্থ আবারও জানান, ফলের রস খেতে চেয়েছেন সুশান্ত। এখন ঘুমোচ্ছেন।
-
স্মিতার বক্তব্য, ‘মিতু ভাইয়ের বাড়িতে যাচ্ছিলেনই, এমন সময়ে সিদ্ধার্থের ফোন যায় তার কাছে। তিনি বলেন, ‘দিদি জলদি আইয়ে। ভাইয়া(সুশান্ত) নে হ্যাং কর লিয়া।’ মিতু দিদি এসে অবশ্য সুশান্তকে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পায়নি। খাটে শোয়ানো ছিল সুশান্তের দেহ।’
-
সোশ্যাল মিডিয়ায় অভিযোগ উঠেছে, ১৩ জুন, নিজের জন্মদিনের রাতে সুশান্তের বান্দ্রার ফ্ল্যাটে পার্টি দিয়েছিলেন আদিত্য। সুশান্তের ফ্ল্যাটের সিসিটিভি সে রাতে বন্ধ থাকলেও উল্টোদিকের বাড়ির সিসিটিভিতে নাকি সুশান্তের বাড়িতে ঢুকতে দেখা গিয়েছে আদিত্যকে।
-
ওই ঘরোয়া পার্টিতেই সুশান্তকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগ। তারপর পুরো ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে সাজানো হয়। সুশান্তের পরিণতি যে এ রকম হতে পারে, সেটা জেনেই নাকি মহেশ ভট্টের পরামর্শে রিয়া নিজের বাড়িতে চলে গিয়েছিলেন। শেষ মুহূর্তে তোলেননি সুশান্তের ফোনও।
-
এই অভিযোগের কোনো ভিত্তি না থাকলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় নেটাগরিকদের মুখবন্ধ করা যাচ্ছে না। তারা চাইছেন, সব ধোয়াঁশা কেটে গিয়ে সত্যি প্রকাশিত হোক।
-
বিহার সরকার প্রথম থেকেই দাবি করেছিল সুশান্ত সিংহ রাজপুতের মৃত্যুরহস্যের তদন্তভার দেয়া হোক সিবিআই-কে। অবশেষে তাতে সম্মতি দিয়েছে কেন্দ্র। ফলে কিছুটা হলেও আশার আলো দেখছেন সুশান্ত-অনুরাগীরা।