যে কারণে ঐশ্বরিয়া-আমির খান কোনো ছবিতে জুটি বাঁধেননি
এই দুই তারকাকে কখনো এক সঙ্গে কোনো ছবিতে অভিনয় করেননি। কিন্তু কোনো? এই প্রশ্ন তাদের ভক্তদেরও। এবার জেনে নিন কেনো এই দুই তারকা জুটিবদ্ধ হয়ে কখনো অভিনয় করেননি।
-
আমির খান এবং ঐশ্বরিয়া রাই বচ্চন কোনো দিন ছবিতে জুটি বাঁধেননি। অথচ তাঁরা ব্যক্তিগত জীবনে খুব ভালো বন্ধু ছিলেন।
-
প্রথম দিকে ইন্ডাস্ট্রিতে যদি কেউ ঐশ্বর্যার বন্ধু হয়ে থাকেন, তা হলে সেটা আমির খান। জীবনের প্রথম বিজ্ঞাপন ঐশ্বরিয়া শুট করেছিলেন আমির খানের সঙ্গেই।
-
বহুজাতিক ঠান্ডা পানীয়ের বিজ্ঞাপনে আমির খান ও মহিমা চৌধুরির সঙ্গে দেখা গিয়েছিল ঐশ্বর্যাকে। সেখানে তিনি মোহময়ী রূপে ধরা দিয়েছিলেন।
-
শুধু বিজ্ঞাপনই নয়। জীবনের প্রথম ওয়ার্ল্ড ট্যুরও ঐশ্বর্যা করেছিলেন আমিরের সঙ্গে। সে সময় দু’জনের মধ্যে খুবই ভালো বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছিল।
-
সে সময় ‘রাজা হিন্দুস্তানি’ ছবির শুটিং করছিলেন আমির। তিনি ওই ছবির ‘আরতি’ চরিত্রে অভিনয় করার জন্য ঐশ্বর্যাকে বলেছিলেন।
-
তখনো ঐশ্বরিয়া ‘মিস ইন্ডিয়া’ হননি। ব্যস্ত ছিলেন লেখাপড়া আর মডেলিং নিয়ে। ফলে ‘রাজা হিন্দুস্তানি’-তে তার অভিনয় করা হয়ে ওঠেনি।
-
তার পরিবর্তে ছবিতে নেয়া হয় কারিশমা কাপুরকে। বক্স অফিসে সুপারডুপার হিট হয় ‘রাজা হিন্দুস্তানি’।
-
এরপর ঐশ্বরিয়ার জীবনেও বড় পরিবর্তন আসে। ১৯৯৪ সালে তিনি ‘মিস ওয়ার্ল্ড’ হন। এরপর তাকে আবার ছবিতে অভিনয়ের জন্য বলেন আমির।
-
আমিরের কথায় ঐশ্বরিয়া ‘মেলা’ ছবিতে একটি ক্যামিয়ো চরিত্রে অভিনয় করেন।
-
সে সময় আবার বহুজাতিক সংস্থার ঠান্ডা পানীয়ের বিজ্ঞাপনে একসঙ্গে দেখা গিয়েছে আমির-ঐশ্বরিয়াকে। সে সময় পর্দায় তাদের রসায়ন জনপ্রিয় হয়।
-
আমির খানের ধারণা ছিল, বক্স অফিসেও তাদের জুটি জনপ্রিয় হবে। আমির তখন ‘জোশ’-এ অভিনয়ের জন্য বলেন ঐশ্বরিয়াকে।
-
‘জোশ’-এর পরিচালক ছিলেন আমির খানের কাকা মনসুর খান। প্রথমে এই ছবিতে শাহরুখ খানের পাশাপাশি অভিনয় করার কথা ছিল আমিরেরও।
-
কিন্তু ছবি তৈরির সময় কাকা মনসুরের সঙ্গে আমির খানের মতানৈক্য হয়। ফলে ছবি থেকে সরে দাঁড়ান আমির। তার বদলে নেয়া হয় চন্দ্রচূড় সিংহকে।
-
এরপর আমির এবং ঐশ্বর্যা, দু’জনে ব্যক্তিগত জীবনেই সমস্যা দেখা দেয়। স্ত্রী রীনার সঙ্গে আমিরের দাম্পত্যে ফাটল ধরে। অন্যদিকে সালমান-ঐশ্বর্যার প্রেম, প্রেম ভেঙে যাওয়ার খবরে আলোড়িত হচ্ছিল সংবাদমাধ্যম।
-
দু’ বছর পরে ব্যক্তিগত জীবনে আবার থিতু হওয়ার পরে আমির-ঐশ্বরিয়ার মন দেন নিজেদের ক্যারিয়ারে। এ সময় ‘মঙ্গল পান্ডে: দ্য রাইসিং’ ছবিতে অভিনয়ের জন্য ঐশ্বরিয়াকেই বেছে নেন আমির।
-
প্রথমে এই ছবির প্রযোজক ছিল সহারা। এই ছবির জন্য নিজের ডেট দিয়ে কন্ট্র্যাক্ট পেপারে সই করেন ঐশ্বরিয়া। কিন্তু চুক্তি স্বাক্ষর এবং ছবির শুটিং শুরু হতে হতে অনেক সময় লেগে গিয়েছিল।
-
তার মাঝে ঐশ্বরিয়া ‘ব্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন নায়িকা হয়ে গিয়েছেন। কান চলচ্চিত্র উৎসবেও তত দিনে তিনি পরিচিত তারকা। সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে তাকে প্রোমোট করার জন্য ঐশ্বরিয়া উইলিয়াম মরিস নামে এক এজেন্টকে নিয়োগ করেন।
-
মরিস তাকে পরামর্শ দেন পারিশ্রমিক বেশ কয়েক গুণ বাড়িয়ে নেওয়ার। তার কথায় ঐশ্বরিয়া যে যে ছবিতে আগেই স্বাক্ষর করেছিলেন সেগুলোর পারিশ্রমিক বাড়িয়ে দিলেন।
-
প্রথমে ঐশ্বর্যা ‘মঙ্গল পান্ডে: দ্য রাইসিং’ ছবির জন্য দেড় কোটি টাকা পারিশ্রমিকে সই করেছিলেন। আমির খানের পারিশ্রমিক ছিল সাত কোটি টাকা। কিন্তু মরিসের কথায় অ্যাশ এবার তার পারিশ্রমিক দ্বিগুণ করে দিলেন।
-
কিন্তু বেঁকে বসলেন পরিচালক কেতন মেহতা। তার কাছে অ্যাশের তারকা হওয়ার থেকেও বড় ছিল নিজের ছবি। এই বিবাদের জেরে ছবি থেকে সরে দাঁড়ালেন ঐশ্বরিয়া। সে সময় ছবিতে সুযোগ পান আমিশা প্যাটেল।
-
এ দিকে, প্রযোজক সংস্থার কাছে খবর ছিল না ছবির নায়িকা বদল হয়ে গিয়েছে। ফলে সহারা-ও সরে দাঁড়াল ছবি থেকে। সে সময় ছবির শুটিং শুরু হতে মাত্র তিন সপ্তাহ বাকি ছিল।
-
কিন্তু আমির-কেতন মেহতা ঠিক করলেন যে করেই হোক ছবি শেষ করবেন। প্রযোজনার দায়িত্ব নিলেন কেতন নিজেই। ঐশ্বরিয়ার এই অপেশাদার আচরণে ক্ষুব্ধ হন আমির।
-
যদিও ঐশ্বরিয়ার নিজের কথায়, ‘মঙ্গল পান্ডে: দ্য রাইসিং’ ছবি ঘিরে প্রথম থেকেই অব্যবস্থা ছিল। শুটিং তিন সপ্তাহ আগেও নাকি তৈরি ছিল না চিত্রনাট্য। তাছাড়া তার চরিত্র ঠিক করে ব্যাখ্যাও করা হয়নি বলেও অ্যাশের অভিযোগ ছিল।
-
ঐশ্বরিয়ার ভারতীয় ম্যানেজার হরি সিংহ তাকে বোঝান। সই করার পর ছবি থেকে সরে দাঁড়ালে বলিউডে যে তার ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, সে কথাও বলেন হরি। কিন্তু ঐশ্বরিয়া রাজি হননি।
-
বক্স অফিসে মুখ থুবড়ে পড়ে ‘মঙ্গল পান্ডে: দ্য রাইসিং’। সেইসঙ্গে চিরদিনের জন্য তিক্ত হয়ে যায় আমির-ঐশ্বর্যার সম্পর্ক। দীর্ঘ দিন তারা একে অন্যের মুখ দেখেননি। একসঙ্গে অভিনয়ের প্রস্তাব এসেছিল। কিন্তু শোনা যায়, ঐশ্বরিয়া রাজি হলেও তার সঙ্গে স্ক্রিন শেয়ার করতে চাননি অতীতের ঘনিষ্ঠ বন্ধু আমির খান।